গৌণ গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য
গৌণ গোষ্ঠী সম্পর্কিত বিভিন্ন পর্যালোচনায় কতকগুলি বিশেষ দিকের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। গঠনগত দৃষ্টিকোণ থেকে এগুলি পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে এর কতকগুলি বৈশিষ্ট্য আমরা দেখতে পাই। যেমন-
• গৌণ গোষ্ঠী আয়তনগত দিক থেকে বৃহদাকার। তাই সদস্যসংখ্যাও এই গোষ্ঠীতে অধিকতর হয়ে থাকে।
• গৌণ গোষ্ঠীর সদস্যভুক্তি ঐচ্ছিক নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। অর্থাৎ গৌণ গোষ্ঠীতে অন্তর্ভুক্তির কোনো বাধ্যবাধকতা থাকে না।
• গৌণ গোষ্ঠীতে সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্ক প্রত্যক্ষভিত্তিক বা মুখোমুখি নয়, সাধারণত পরোক্ষভিত্তিক হয়। তাছাড়া এই সদ্যদের দৈহিক/আত্মিক নৈকটা দেখা যায়।
• গৌণ গোষ্ঠীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো স্বার্থসাধন। অর্থাৎ স্বার্থ চরিতার্থের উদ্দেশ্যেই গৌণ গোষ্ঠী তৈরি হয়। স্বার্থসাধনের পর সদস্যদের মধ্যে অসহযোগিতা দেখা দিলে এই গোষ্ঠীর অস্তিত্ব নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
• গৌণ গোষ্ঠী ব্যক্তিসম্পর্কভিত্তিক হয় না, সংগঠনভিত্তিক হয়। অর্থাৎ এখানে সাংগঠনিক ক্রিয়াকলাপ অধিকতর প্রাধান্য পায়। এখানে সদস্যরা নৈর্ব্যক্তিক ভূমিকা পালন করে থাকে। গোষ্ঠীগত ক্ষেত্রে যেখানে উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য বেশি প্রাধান্য পায়, সেখানে পারস্পরিক আলাপচারিতার মধ্য দিয়ে সম্পর্ক স্থাপনের তেমন কোনো সুযোগ দেখা যায় না।
• গৌণ গোষ্ঠী অনেকাংশে চুক্তির মধ্য দিয়ে গঠিত হয়ে থাকে। চুক্তির শর্তসমূহও অনেক ক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে। গৌণ গোষ্ঠীর দায়িত্ব পালন পদ্ধতি কৃত্রিম বা যান্ত্রিক উপায়ে সম্পন্ন হয়ে থাকে।
• গৌণ গোষ্ঠী আবেগহীন এবং পেশাভিত্তিক। তাই আইন-শৃঙ্খলার উপর এখানে বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এই গোষ্ঠীতে মানুষের স্নেহ, প্রীতি, ভালোবাসার মতো সুকুমার বৃত্তিগুলি চর্চিত বা বিকশিত হওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না।
• গৌণ গোষ্ঠীতে শ্রমবিভাজন এবং বিশেষীকরণের প্রাধান্য দেখা যায়। স্বার্থভিত্তিক সংগঠন হওয়ায় স্বার্থ চরিতার্থের যে লক্ষ্যমাত্রা থাকে সেখানে সময়ের সাথে কর্মসমাপ্তির একটা চাহিদা থাকে। আধুনিক উচ্চচাহিদাসম্পন্ন সমাজে এই চাহিদা পরিপূরণ এবং তার গুণমান বজায় রাখার ক্ষেত্রে শ্রমবিভাজন এবং বিশেষীকরণের মাধ্যমে কর্মসম্পাদনের প্রয়োজনীয়তা লক্ষ করা যায়।
• গৌণ গোষ্ঠীতে সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্ক প্রত্যক্ষভিত্তিক হয় না, তাই পারস্পরিক অন্তরঙ্গতা দেখা যায় না। এই সম্পর্ক পরোক্ষভিত্তিক এবং বাহ্যিক প্রকৃতির হয়ে থাকে। এখানে পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তি মর্যাদাভিত্তিক হয়। এই সম্পর্ক তাই নৈর্ব্যক্তিক হয়।
• গৌণ গোষ্ঠীর সদস্যসংখ্যা অধিক হওয়ায় এবং শ্রমবিভাজন প্রক্রিয়ায় কার্যসম্পাদনের দায়িত্ব পালনের প্রতিশ্রুতি থাকলেও সকল সদস্য এক্ষেত্রে সমানভাবে সক্রিয় হয়ে থাকে না। মর্যাদাগত অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে সদস্যরা সক্রিয় থাকে। অনেকে আবার নিষ্ক্রিয়ও থাকে।
• গৌণ গোষ্ঠীগুলি লিখিত নিয়মাবলি বা স্বতন্ত্র সংবিধান দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। ফলে এই গোষ্ঠী কোনো ব্যক্তিভিত্তিক নয়। সদস্যদের গোষ্ঠীতে অন্তর্ভুক্তি, গোষ্ঠী থেকে বহিষ্কার, সদস্যদের দায়দায়িত্ব প্রভৃতি ক্ষেত্র গোষ্ঠীর সংবিধানে সুনির্দিষ্ট থাকে। সদস্যরা এই নিয়মাবলির অধীনস্ত হয়।