Describe the need of Lifelong Learning.
জীবনব্যাপী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা-
জীবনব্যাপী শিক্ষা এমন একটি প্রক্রিয়া, যা ব্যক্তির জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে নতুন জ্ঞান, দক্ষতা, এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ দেয়। এটি শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং ব্যক্তি জীবনের প্রতিটি স্তরে, প্রতিটি অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষালাভ করে থাকে। বর্তমান বিশ্বে দ্রুত পরিবর্তিত পরিস্থিতি, প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং সমাজের চাহিদার পরিবর্তনের কারণে জীবনব্যাপী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ক্রমশ বাড়ছে।
১. পেশাগত উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ:
জীবনব্যাপী শিক্ষা পেশাগত জীবনে উন্নতির জন্য অপরিহার্য। বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তি এবং জ্ঞানের দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে, ফলে কর্মক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসছে। কর্মীদের অবশ্যই নতুন দক্ষতা অর্জন করতে হবে, যাতে তারা এই পরিবর্তিত পরিবেশে সফলভাবে কাজ করতে পারে। জীবনব্যাপী শিক্ষা কর্মীদের নতুন প্রযুক্তি এবং পদ্ধতি শিখতে, দক্ষতা বৃদ্ধি করতে এবং পেশাগত পরিবর্তন মেনে নিতে সহায়ক হয়।
২. ব্যক্তিগত উন্নয়ন ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি:
জীবনব্যাপী শিক্ষা ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নতুন কিছু শেখার মাধ্যমে ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়, যা তাকে জীবনের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক হয়। শিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান ব্যক্তি নিজেকে আরও ভালভাবে জানতে, নিজের ক্ষমতা এবং দুর্বলতা বুঝতে এবং নিজের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।
৩. সামাজিক সম্প্রীতি ও সম্পর্ক উন্নয়ন:
জীবনব্যাপী শিক্ষা সমাজের উন্নয়নেও ভূমিকা রাখে। এটি সামাজিক সম্পর্ক মজবুত করতে সাহায্য করে এবং সমাজের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও সংহতি সৃষ্টি করে। শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে এবং মেনে নিতে সক্ষম হয়, যা পারস্পরিক সম্মান এবং সহনশীলতা বৃদ্ধি করে। এছাড়া, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে শিক্ষা বিনিময় সামাজিক সম্প্রীতি এবং শান্তির পথে কাজ করে।
৪. মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি:
জীবনব্যাপী শিক্ষা মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নতুন কিছু শেখার মাধ্যমে মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে, যা মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক। এটি বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে স্মৃতিভ্রংশ বা আলঝেইমারের মতো সমস্যাগুলির ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তির মানসিক চাপ কমে এবং জীবনের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গড়ে ওঠে।
৫. দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের সাথে মানিয়ে নেওয়া:
বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তি, অর্থনীতি, সমাজ এবং সংস্কৃতির ক্ষেত্রে দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। এই পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে জীবনব্যাপী শিক্ষা অপরিহার্য। নতুন প্রযুক্তি, সামাজিক পরিবর্তন, এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে শিক্ষা মানুষকে প্রস্তুত করে তোলে। এর মাধ্যমে তারা নতুন দক্ষতা অর্জন করতে পারে এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে।
৬. সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমতা প্রতিষ্ঠা:
জীবনব্যাপী শিক্ষা সমাজে সমতা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে। এটি বিশেষত পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে, যা তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি করতে সাহায্য করে। সমতার ভিত্তিতে শিক্ষার সুযোগ তৈরি হলে সমাজে বৈষম্য হ্রাস পায় এবং সমাজের প্রতিটি স্তরে উন্নয়নের সুযোগ বৃদ্ধি পায়।
উপসংহার:
জীবনব্যাপী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত উন্নয়ন নয়, বরং সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্যও অপরিহার্য। জীবনব্যাপী শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তি এবং সমাজ নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হয় এবং একটি সমৃদ্ধ, জ্ঞানভিত্তিক এবং প্রগতিশীল সমাজ গড়ে তোলে।