পৌরাণিক যুগে প্রাচীন উত্তরবঙ্গেয় ওপর একটি ইতিহাস লেখো।

পৌরাণিক যুগে প্রাচীন উত্তরবঙ্গেয় ওপর একটি ইতিহাস

উত্তর বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের আটটি জেলাকে একত্রিত করে উত্তরবঙ্গ নামে আখ্যায়িত করা হলেও এই রূপবিভাজন সম্পূর্ণরূপে অপ্রশাসনিক। বর্তমানে উত্তরবঙ্গ,

সুপ্রাচীনকালে পুণ্ড্রবর্ধন বা বরেন্দ্রভূমির অন্তর্গত ছিল। প্রাচীন বঙ্গভূমির একটি গুরুত্বপূর্ণ জনপদ ছিল পুণ্ড্রবর্ধন। ‘পুণ্ড’ শব্দটি ভৌগোলিক ক্ষেত্র এবং জনজাতি উভয় আর্থেই’ ব্যবহৃত হয়েছে। তবে পুন্ড জনজাতির প্রকৃত পরিচয়ই বা কী? কীভাবে তাদের উদ্ভব ঘটেছিল, তাদের সভ্যতা-সংস্কৃতির স্বরূপ কেমন ছিল- এসব নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। এই পুণ্ড্ররাজ্যের অধিবাসী পুণ্ড্র জেনজাতির উৎপত্তি প্রসঙ্গে প্রাচীন প্রাপাদিতে নিভিন্ন মতবাদ ব্যক্ত হয়েছে।

উত্তরবা পয় উত্তিচান :  ‘পুণ্ড্র’ শব্দের সর্বপ্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ‘ঐতরেয় ব্রাহ্মণ’-এ। এই গ্রন্থে বর্ণিত কাহিনি অনুযায়ী শুষি বিশ্বানিত্রের পালিত পুত্র ‘সুনহসেপা’-কে স্বীকৃতিদানে অগ্রাহ্য হলে বিশ্বামিত্র তাঁর পঞ্চাশ পুত্রকে অভিশাপ নিয়েছিলেন যে তারা পরবর্তী জন্মে অস্ত্র, গুণ্ড্র, শবর, পুলিন্দ, মুতিব-এর ন্যায় অন্ত্যস বংশে জন্মগ্রহণ করবে। অর্থাৎ, ঐতরেয় রাঙ্গণে পূণ্ডু মাতিকে নীচ, অন্ত্যজ এবং দস্যুজাতি বলে বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু ঐতরেয় ব্রাহ্মণে বর্ণিত পুণ্ড্র জাতি উত্তরবঙ্গের গুণ্ড্রবর্ধনবাসী কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। ঐতিহাসিক পরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়-এর লেখায় দক্ষিণ ডায়তেও পুণ্ড্রজাতির উল্লেখ পাওয়া যায়। অল্প, শবর, পুলিন্দ প্রভৃতি জাতির সঙ্গে পুণ্ড্র জাতির উল্লেখ থাকায় তারা দক্ষিণ ভারতীয় জাতি হওয়ার সম্ভাবনা সমাধিক। আবার তৃতীয় যেদ যজুর্বেদের অন্তর্গত ‘শতপথ ব্রাহ্মণ’ থেকে জানা যায় যে আর্যরা তখনও বিদেহ রাজ্য অতিক্রম করেনি। শতপথ ব্রাহ্মণ রচনার যুগে বিদেহ বা মিথিলা রাজ্যে আর্য সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিস্তার ঘটে। বর্তমানে উত্তর-পূর্ব বিহারে ছিল এই বিদেহ রাজ্য। এই গ্রন্থে বর্ণিত উপাখ্যান অনুযায়ী, সরস্বতী নদীর তীর থেকে আগত বিদেহ মাধব ছিলেন বিদেহ রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। অগ্নিদেবতা সরস্বতী নদীর তীর থেকে পূর্বদিকে সদানীরা নদী পর্যন্ত আগমন করেন এবং তাঁকে অনুসরণ করে আসেন বিদেহ মাধব এবং তাঁর পুরোহিত গোতম রাহুগণ। অগ্নি এই নদী অতিক্রম করেনি এবং অগ্নি বৈশ্বানরের নির্দেশে মাধব এই নদীর পূর্বদিকে বসতি স্থাপন করেন।

আবার, মহাভারতের আদিপর্ব; হরিবংশ ও কয়েকটি পুরাণে বর্ণিত স্বতন্ত্র কাহিনি অনুযায়ী, বলি রাজার স্ত্রী সুদেয়ার গর্ভে ঋষি দীর্ঘতমার ঔরসে পাঁচ পুত্রের জন্ম হয়, তাঁরা হলেন-অঙ্গ, বঙ্গ, পুণ্ড্র, সুস্ত ও কলিল্য। এই পাঁচ পুত্র বলি রাজার পক্ষ থেকে পাঁচটি জনপদ লাভ করেন এবং তাঁদের নাম অনুসারে এই জনপদগুলির নামকরণ হয়। এই পুণ্ড্র থেকেই পুণ্ড নামক জনপদ বা দেশ উদ্ভূত হয়েছে। রামায়ণ ও বৌধায়ণ ধর্মসূত্রেও পুণ্ড্রদেশের উল্লেখ রয়েছে। রামায়ণের বর্ণনা অনুসারে, বঙ্গ এবং বিদেহ রাজ্যের পাশেই পূণ্ড্রের অবস্থান। আবার কাব্য মীমাংসা গ্রন্থে উল্লিখিত হয়েছে যে, বিদেহ ও প্রাগ-জ্যোতিষ রাজ্যদ্বয়ের মধ্যবর্তী অংশে ছিল ‘পুণ্ড্রের অবস্থান’। মহাভারতেও পুণ্ড্র জনজাতির উল্লেখ আমার পাই। মহাভারতের একটি অংশে বর্ণিত আছে যে, কবি বশিষ্টের পবিত্র, গাভী নন্দিনী থেকে পুণ্ড্র, শক, দ্রাবিড়, চিনা, খাস প্রমুখ জনজাতির জন্ম হয়। মহাভারতের অপর একটি বর্ণনা থেকে জানা যায়, পরশুরামের ভয়ে ভীত হয়ে পুণ্ড্র, আতীর, শবর, দ্রাবিড় প্রমুখরা পাহাড়ে গিয়ে আশ্রয় নেয় এবং তারা ‘বৃশল’ বা ‘শূদ্র’ বলে পরিচিত হয়।

মৎস্যপুরাণ, বিষ্ণুপুরাণ, মনুসংহিতা-তেও পুণ্ড্রদের উল্লেখ পাওয়া যায়। মহাভারতের কাহিনিতে কর্ণ, ভীম ও কৃয়ের পূর্বাঞ্চল অভিযানে পুণ্ড্রের উল্লেখ আছে। কর্ণ ও তীম পুণ্ড্ররাজ্যকে পরাজিত করেছিলেন। পুণ্ড্রাধিপতি বাসুদেব ছিলেন

তিনি বাহুবলে পূঞ্জ দেশের সঙ্গে বলা এবং কিরাত রাজ্য যুক্ত কবে একটি শক্তিশালী রাজ্য গঠন করেন এবং মগধরাজ জরাসন্ধের সঙ্গো মৈত্রীবন্ধনে আবদ্ধ হন! তিনি শেষপর্যন্ত বাসুদেব কৃত্বের সঙ্গে যুদ্ধে নিহত হন: রামায়ণ, মহাভারত এই দই মহাকাব্য এবং বিভিন্ন পুরাণ গ্রন্থ ছাড়াও বৌদ্ধ, জৈন ও আজীবিক ধর্মের গ্রন্থাবলি পেকেও পুণ্ড্র দেশ এবং জনজাতি সম্পর্কে বিভিন্ন তথা পাওয়া যায়।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

bn_BDBengali
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading