প্রাথমিক গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য
প্রাথমিক গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য: প্রাথমিক গোষ্ঠীর এই সামগ্রিক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে যেসব গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য আমরা দেখতে পাই সেগুলি হলো-
• প্রাথমিক গোষ্ঠীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো দৈহিক নৈকট্য। মুখোমুখি সম্পর্কভিত্তিক এই গোষ্ঠীতে দৈহিক বা ব্যক্তিগত নৈকট্য খুব বেশি গুরুত্ব পায় এবং এর দ্বারা সদস্যদের মধ্যে অনন্তকালব্যাপী পারস্পরিক সহানুভূতি, চিন্তা-চেতনা, আত্মীয়তা প্রভৃতি অক্ষত এবং অবিকৃত থাকে।
• প্রাথমিক গোষ্ঠী ক্ষুদ্রাকৃতির হয়, অধিক সদস্যসংখ্যা দৈহিক এবং মানসিক নৈকট্য ব্যাহত করে থাকে। এক্ষেত্রে প্রাথমিক গোষ্ঠীর প্রাথমিক শর্তাবলির গুরুত্বপূর্ণ হলো ক্ষুদ্রায়তন, অর্থাৎ স্বল্প সদস্যসংখ্যা। এর ফলস্বরূপ সদস্যদের আত্মিক সম্পর্ক এবং পারস্পরিক বন্ধন সুদৃঢ় হয়ে থাকে।
• স্বল্প সদস্যের মৌখিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে পারস্পরিক আন্তরিকতা এবং মিলন এত পৌনঃপুনিক হয়, যার পরিণতিতে গোষ্ঠীর স্থায়িত্ব সুদৃঢ় হয় এবং পারস্পরিক সম্পর্কের বোঝাপড়া বাস্তবধর্মী রূপ লাভ করে।
• প্রাথমিক গোষ্ঠীর অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো অভিন্ন উদ্দেশ্য বা স্বার্থ। সদস্যগণ এই অভিন্নতা যথেষ্ট মর্যাদার সঙ্গে প্রতিপালন করে থাকে। এই অভিন্নতার টানেই গড়ে ওঠে ‘আমরা’ (We) মনোভাব। ব্যক্তিস্বার্থ বলে এখানে কোনো সংকীর্ণ স্বার্থের পরিবর্তে তা হয়ে ওঠে বৃহত্তর বা যৌথ স্বার্থ।
• প্রাথমিক গোষ্ঠীর অপর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো স্বয়ংসম্পূর্ণতা। এই গোষ্ঠীর অভ্যন্তরে ব্যক্তির যাবতীয় স্বার্থ চরিতার্থ হয়ে থাকে।
• প্রাথমিক গোষ্ঠীতে পারস্পরিক সম্পর্ক ব্যক্তিভিত্তিক হয়। তাই ব্যক্তি সম্পর্ক ভেঙে গেলে প্রাথমিক গোষ্ঠীর পতন দ্রুততর হয়।
• প্রাথমিক গোষ্ঠীর পারস্পরিক সম্পর্ক সার্বিক প্রকৃতির হয়। নিবিড় এবং দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের মধ্য দিয়ে এই সম্পর্কের ব্যাপ্তি ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়।
• প্রাথমিক গোষ্ঠীর গঠন প্রক্রিয়া স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে থাকে। অর্থাৎ বিশেষ কোনো স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে কোনো পরিকল্পিত পদ্ধতিতে এই গোষ্ঠী গড়ে ওঠে না। মানুষের প্রয়োজনকে পাথেয় করে প্রকৃতিগতভাবেই এই জাতীয় গোষ্ঠীর উদ্ভব হয়।
• প্রাথমিক গোষ্ঠীর পরিচালনগত পরিকাঠামো থাকে না। কোনো লিখিত নিয়মাবলি দ্বারা এটি পরিচালিত হয় না। প্রচলিত রীতিনীতি, মূল্যবোধ, আদর্শ দ্বারা এটি পরিচালিত হয়ে থাকে।
• প্রাথমিক গোষ্ঠীর মধ্য দিয়ে মানবজীবনের সুকুমার প্রবৃত্তিগুলি সযত্নে লালিত বা চর্চিত হয়। এর ফলে ব্যক্তিত্বের স্বাতন্ত্র্যের মধ্যেও যৌথ স্বার্থ অক্ষুন্ন থাকে এবং সমগ্রের মাঝে ব্যক্তির মিলন ঘটে।।
• প্রাথমিক গোষ্ঠী সংস্কৃতি সুদৃঢ় করে এবং সামাজিক সংহতি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে।