বিহারীলাল চক্রবর্তীর ‘সারদামঙ্গল’ কাব্যের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

বিহারীলাল চক্রবর্তীর শ্রেষ্ঠ কাব্য ‘সারদামঙ্গল’ কাব্য। বাংলা গীতিকবিতার ইতিহাসে ‘ভোরের পাখি’ বিহারীলাল চক্রবর্তী। বিহারীলালের হাত ধরেই বাংলা আধুনিক গীতিকবিতার সূচনা। আর ‘সারদামঙ্গল’ বাংলা গীতিকাব্যের ইতিহাসে প্রথম কাব্য। কাব্যটি প্রকাশিত হয় ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে। এই কাব্য রচনা সম্পর্কে বন্ধু অনাথবন্ধু রায়কে এক চিঠিতে লিখেছেন-“মৈত্রীবিরহ, প্রীতিবিরহ, সরস্বতীবিরহ যুগপৎ ত্রিবিধ বিরহে উন্মত্তবৎ হইয়া আমি সারদামঙ্গল সংগীত রচনা করি।”

‘সারদামঙ্গল’ কাব্যটি পাঁচটি সর্গে বিভক্ত। প্রেম-প্রীতি-বিরহের মধ্য দিয়ে দেবী সারদার এক অপরূপ মূর্তি তিনি স্থাপন করেছেন। সমালোচক শিশিরকুমার দাশ এই কাব্য সম্পর্কে লিখেছেন-“মহাকাব্যের পরাক্রমধারার পাশে সারদামঙ্গল গীতিকাব্যের আবির্ভাব এবং শেষ পর্যন্ত গীতিকাব্যের কাছে মহাকাব্যের পরাজয়ের ইতিহাসে সারদামঙ্গল ঐতিহাসিক তাৎপর্যপূর্ণ কাব্য।” দেবী সারদাকে তিনি কবি-কল্পনায় নিজের করে নিয়েছেন। এখনও সারদার সঙ্গে লীলায় মেতে উঠেছেন। কবি সারদাকে বিচিত্র- রূপে উপলব্ধি করেছেন কখনও জননী, কখনও প্রেয়সীরূপে। কবি সারদাকে বারবার হারান, আবার খুঁজে চলেন-

“হারায়েছি-হারায়েছি রে, সাধের স্বপনের ললনা

মানস-মরালী আমার কোথা গেল বল না।

কমল-কাননে বালা

করে কত ফুলখেলা।”

প্রেমের দুই রূপ-বিরহ ও মিলন। এই বিরহ-মিলনের সন্ধানে গিয়েছেন কবি। ‘সারদামঙ্গল’ প্রেমের এক অপরূপ কাব্য। এই প্রেমকে কখন নিজের করে নেন। দেবী সারদাকে কখনো প্রকৃতির গহনতলে উপস্থিত করেন। এক মুহূর্ত না দেখে কবির হৃদয়ে তৃপ্তি নেই- “দাঁড়াও হৃদয়েশ্বরী/ত্রিভুবন আলো করি/দু নয়ন ভরি ভরি দেখিব তোমায়।” এই কাব্য থেকেই বাংলা গীতিকবিতা নতুন পথ পেয়েছিল। এজন্যই রবীন্দ্রনাথ এ কাব্যের উচ্চশিত প্রশংসা করেছিলেন।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

bn_BDBengali
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading