শিক্ষাক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরের অবদান ব্যাখ্যা করো।

শিক্ষাসংস্কার:


ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হয়ে শিক্ষাসংস্কারের কাজে মনোনিবেশ করেন। (১) পূর্বে কেবলমাত্র উচ্চবর্ণের সন্তানরাই সংস্কৃত কলেজে ভরতি হতে পারত। বিদ্যাসাগর এই প্রথা বাতিল করে সংস্কৃত কলেজের দরজা সকল বর্ণের হিন্দু ছাত্রদের জন্য খুলে দেন। (২) ইতিপূর্বে কলেজে অধ্যাপকদের আসা-যাওয়া এবং অধ্যাপনার বিষয়ে কোনো নিয়মকানুন ছিল না। বিদ্যাসাগর সেখানে নিয়মশৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা চালু করেন। (৩) পূর্বে সংস্কৃত কলেজে হিন্দু তিথি ও শুভদিন অনুসারে ছুটি দেওয়া হত। বিদ্যাসাগর সেই প্রথা তুলে দিয়ে রবিবার ছুটির নিয়ম চালু করেন। (৪) তিনি সংস্কৃত কলেজে ইংরেজি শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেন। পাশ্চাত্য গণিতশস্ত্র চর্চার ব্যবস্থা করেন। বাংলা ভাষার মাধ্যমে সহজে সংস্কৃত শিক্ষার জন্য তিনি ‘সংস্কৃত ব্যাকরণের উপক্রমণিকা’ ও ‘ব্যাকরণ কৌমুদি’ রচনা করেন।

শিক্ষার প্রসার:



বাংলার জনশিক্ষা, উচ্চশিক্ষা ও নারীশিক্ষার প্রসারে এবং বাংলা গদ্যের বিকাশে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা অবিস্মরণীয়।

(১) তিনি উপলব্ধি করেন যে, একমাত্র শিক্ষাই মানুষের মধ্যে প্রকৃত মনুষ্যত্ব জাগিয়ে তুলতে পারে। শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে তিনি গ্রাম-বাংলার বিভিন্ন স্থানে বহু বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।

(২) তিনি বাংলার বিভিন্ন জেলায় ২০টি মডেল স্কুল বা আদর্শ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি বিদ্যালয় তিনি নিজ ব্যয়ে চালাতেন।

(৩) বিদ্যাসাগর নারীশিক্ষার প্রসারে সক্রিয় উদ্যোগ নেন। তিনি বেথুনের পৃষ্ঠপোষকতায় ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ‘হিন্দু ফিমেল স্কুল’ (পরবর্তীকালের বেথুন স্কুল) প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া বাংলার গ্রামাঞ্চলে ৩৫টি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এগুলিতে প্রায় ১৩০০ পড়াশোনা করত।

(৪) তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি হল—’মেট্রোপলিটন ইন্সটিটিউশন’ (১৮৭২ খ্রি.) প্রতিষ্ঠা। পরবর্তীকালে এটি বিদ্যাসাগর কলেজে পরিণত হয়।

(৫) তিনি শিশু ও জনশিক্ষার প্রচারের উদ্দেশ্যে বেশ কিছু পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন—‘বর্ণমালা’, ‘কথামালা’, ‘বোধোদয়’, ‘নীতিবোধ’ প্রভৃতি। ‘শকুন্তলা’, ‘সীতার বনবাস’ প্রভৃতি গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে তিনি বাংলা গদ্য লেখার নতুন পথ দেখান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে “বিদ্যাসাগর বাংলাভাষার প্রথম যথার্থ শিল্পী ছিলেন।”


মূল্যায়ন—ভারতীয় সমাজ ও সভ্যতায় বিদ্যাসাগরের অবদান অসীম। তিনি ছিলেন বঙ্গীয় নবজাগরণের অন্যতম স্রষ্টা এবং নবজাগরণের মূর্ত প্রতীক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, এই ভীরুর দেশে তিনিই একমাত্র ‘পুরুষসিংহ’।


    Leave a Reply

    This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

    bn_BDBengali
    Powered by TranslatePress

    Discover more from Online Learning

    Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

    Continue reading