হরপ্পা সভ্যতার বাণিজ্য সম্পর্কে লেখো।

1921-22 সালে আবিষ্কৃত হরপ্পা সভ্যতা পশ্চিমে মাকরান উপকূল থেকে পূর্বে আলমগীরপুর, উত্তরে জম্মুর মান্ডা থেকে দক্ষিণে গোদাবরী উপত্যকার দাইমাবাদ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। আয়তনের দিক থেকে সমগ্র এলাকাটি প্রাচীন মিশরের চেয়ে 20 গুণ বড়ো ছিল। এটিই ছিল প্রাচীন বিশ্বের বৃহত্তম সভ্যতা। কৃষি, শিল্প, ব্যাবসাবাণিজ্যকে নির্ভর করে হরপ্পা সভ্যতা আর্থিক দিক থেকে সমৃদ্ধ ছিল। মানুষের জীবনযাত্রা ছিল সচ্ছল। হরপ্পার নগর সংস্কৃতির বিকাশের অন্যতম কারণ হল এই অঞ্চলের বাণিজ্যিক সমৃদ্ধি। হরগ্লাবাসীদের প্রধান জীবিকাই ছিল ব্যাবসাবাণিজ্য।

বাণিজ্য ছিল দুই ধরনের-অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও বহির্দেশীয় বাণিজ্য। তারা প্রতিবেশী অঞ্চলে বাণিজ্য করার পাশাপাশি ভারতের বাইরে পশ্চিম এশিয়ার সঙ্গে অর্থাৎ মেসোপটেমিয়া ও মিশরের সঙ্গে যথাক্রমে জলভাগে ও স্থলভাগে বাণিজ্য করত। মেসোপটেমিয়ার প্রাচীন লেখতে সে দেশের সঙ্গে তিনটি বিদেশি অঞ্চলের, যথা-দিলমুন, ম্যাগান ও মেলুহা-এর দূরপাল্লার বাণিজ্যের উল্লেখ করা হয়েছে। ‘মেলুহা’-কে অধিকাংশ প্রত্নতত্ত্ববিদ সিন্ধু উপত্যকার সঙ্গে শনাক্ত করেছেন।

মেসোপটেমিয়ার প্রাচীন লেখতে মেলুহা থেকে আগত বাণিজ্য জাহাজ ও দোভাষীর উল্লেখ আছে। এ থেকে অনুমান করা যায় মেসোপটেমিয়া ও হরপ্পার মধ্যে সমুদ্রপথে বাণিজ্য চলত। সিন্ধু নগর থেকে রপ্তানি করা কাপড়ের গাঁট সিন্ধুর সীলমোহর লাগানো অবস্থায় মেসোপটেমিয়ার উম্মা নামক স্থানে পাওয়া গেছে। সিন্ধুর বেলনার আকারের সীলমোহর সুমেরুর উর, লাগাস, সুসা প্রভৃতি স্থানে পাওয়া গেছে। এ ছাড়া হরপ্পার পোড়ামাটির শিল্প ও বুদ্রাক্ষ মেসোপটেমিয়ায় পাওয়া গেছে। হরপ্পার নগরগুলি থেকে হাতির দাঁতের তৈরি জিনিস, কাপড়, মণিমুক্তা, ময়ূরপুচ্ছ প্রভৃতি রপ্তানি হত। লোখালে একটি জাহাজঘাটা আবিষ্কৃত হওয়ায় বোঝা যায় এই বহির্দেশীয় বাণিজ্য মূলত সমুদ্রপথেই সম্পন্ন হত।

সীলমোহরে নোঙর করা নৌকার প্রতিচ্ছবিও এদের সামুদ্রিক তৎপরতার সাক্ষ্য বহন করে। জলপথে মিশর, সুমেরীয় এবং স্থলপথে মহীশূর, গুজরাট, কাশ্মীর পর্যন্ত সিন্দুর শহরগুলির বাণিজ্য চলত। পারস্য ও আফগানিস্তান থেকে নীলকান্তমণি বা ল্যাপিসলাজুলি আমদানি করা হত। হিমালয় থেকে দেবদারু কাঠ, কর্ণাটক থেকে সোনা, রাজপুতানা থেকে তামা ও সিসা, গুজরাট থেকে দামি পাথর, কাথিয়াওয়াড় থেকে শাঁখ আমদানি করা হত। ইরান থেকে সোনা, রূপা, সিসা, টিন আমদানি করা হত। বিনিময়ে ওই সকল জায়গায় রপ্তানি করা হত সুতিবস্তু, হাতির দাঁতের শৌখিন দ্রব্য প্রভৃতি।

পরিশেষে বলা যায়, কৃষি, শিল্প, ব্যাবসাবাণিজ্যকে কেন্দ্র করে এইরকম একটি সুমহান সভ্যতা গড়ে ওঠে। এখানে আর্থিক সচ্ছলতা থাকার জন্য মানুষের জীবনযাত্রার মান ছিল উন্নত।

bn_BDBengali
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading