অস্পৃশ্যতা সম্পর্কে গান্ধীর মতামতের উপর একটি সংক্ষিপ্ত নোট লেখ।

অথবা, অস্পৃশ্যতা সম্পর্কে গান্ধীজীর চিন্তাভাবনা আলোচনা করো

প্রাচীন ভারতের সমাজ ব্যবস্থায় যে বর্ণাশ্রম ব্যবস্থা ছিল, তা ধর্মের স্বাভাবিক পরিণতিতে এক বিকৃত ধারণা। গান্ধীজী মতে, অস্পৃশ্যতা হল মানসিকভাবে অসুস্থতা থেকে উদ্ভূত একটি বিষয়। তার মতে শোষণের মতোই অস্পৃশ্যতা একটি সামাজিক অভিশাপ – যা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ভয়ঙ্কর ক্ষত ও মানব লাঞ্ছনা।

অস্পৃশ্যতা সম্পর্কিত গান্ধীজীর চ্যালেঞ্জ ঃ বর্ণভেদের দ্বারা জীর্ণ এবং রিক্ত মানুষের ওপর নেমে আসা অস্পৃশ্যতার অভিশাপকে দুর করা ছিল গান্ধীজীর কাছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তার মতে, হিন্দুধর্মে এবং জীবনচর্চায় যে অস্পৃশ্যতার ধারণা প্রবেশ করেছে সেটি মূলত মানুষের তৈরি কুৎসিত ও অমানবিক চিন্তা ছাড়া আর কিছু নয়। তিনি ‘হরিজন’ পত্রিকা ও ‘ইয়ং ইন্ডিয়া’ পত্রিকায় মতামত ব্যক্ত করে বলেছেন যে, ভারতে বহু সমাজসংস্কারক, ধর্মপ্রাণসাধক অস্পৃশ্যতাকে মানবতার বিরুদ্ধে অভিশাপ বলে মনে করেছেন।

অহিংসা ও অস্পৃশ্যতা ঃ আধ্যাত্মিক সত্যের উপলব্ধির মধ্যে লুকিয়ে আছে গান্ধীজীর অহিংসার তাৎপর্য। তিনি মনে করেন মানুষের আধ্যাত্ম বিশ্বাস তার মানবপ্রেমিক সত্তার অবস্থার উপর দণ্ডায়মান, অহিংসার সাধনার মধ্যে দিয়ে প্রেম-ভালোবাসার দ্বারা চিত্তের জাগরণ ঘটবে আর সেখান থেকেই উৎসারিত হবে অস্পৃশ্যতা। জাতীয় জীবনের উন্নতির জন্য পাপের অবসানের প্রয়োজন আছে বলে তিনি মনে করেন।

স্বরাজ ও অস্পৃশ্যতা ঃ গান্ধীজীর আত্মকথায় তার বয়স যখন ১২ বছর হয়নি, তখন উকা নামে এক মেথর তার বাড়ীতে কাজ করতো। একদিন উকাকে ছুয়ে ফেলায় গান্ধীজীর মা তাকে স্নান করিয়ে শুচি করিয়েছিলেন। তারপর তিনি বলেছিলেন যে, ছুঁলে পাপ হয় একথা ভাবা অন্যায় ও ভুল। তার কথায় বিষ্ণু যদি জল-স্থলে সর্বত্র বিরাজ করে তাহলে অস্পৃশ্য বলে কেউ থাকতে পারে না। তিনি মনে করতেন হরিজনদের সেবা করাই হল ঈশ্বরের সেবা করা। তার স্বপ্নের স্বরাজ হলো দরিদ্র মানুষের স্বরাজ।

অসবর্ণ বিবাহ ও পঙক্তিভোজন ঃ বর্ণাশ্রমের মধ্যে যদিও অসবর্ণ বিবাহ ও একসাথে বসে পান-ভোজনের বিষয়ে কোনো বাধানিষেধ নেই। তথাপি এ বিষয়ে জোর করে কোন কিছু চাপিয়ে দেওয়া যায়না। অর্থনৈতিক দিক থেকে বিচার করলে একথা ঠিক যে, কোন পুরুষ বা নারী কাকে বিবাহ করলে এবং কার সাথে পান-আহার করবে সে বিষয়ে ব্যক্তির নিজের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত। অর্থাৎ অস্পৃশ্যতাকে টিকিয়ে রাখা এক অমার্জনীয় অপরাধ।বর্তমানে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে ও অঞ্চলে অস্পৃশ্যতা বিভিন্ন রূপ ধারণ করে আছে। এই অমানবিক জীবনধারা সুসংস্কৃতি সম্পন্ন শিক্ষিত মানুষরাই বাঁচিয়ে রেখেছে। তাই এই অবস্থার দ্রুত অবসান ঘটল তা হিন্দুধর্মের মঙ্গল সাধন করবে।

মুল্যায়ন ঃ সবশেষে বলা যায় যে, গান্ধীজী কংগ্রেস দলের বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যে অস্পৃশ্যতা দূরীকরণে বিভিন্ন প্রকল্পের কথা প্রচার করার জন্য বলেছিলেন। তাই সমাজের অপরিচ্ছন্নতা দূর করে পরিছন্নতা ফিরিয়ে আনা শাস্ত্রবিধির মধ্যেই পরে। কিন্তু তা কখনো অস্পৃশ্যতাকে কামনা করে না।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

bn_BDBengali
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading