আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিবর্তনের উপর একটি নোট লেখ। Write a note on the evolution of International Relations.

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিবর্তন

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (IR) হল রাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক সংস্থা, এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক অভিনেতাদের মধ্যে সম্পর্কের অধ্যয়ন। এটি সময়ের সাথে নানা দৃষ্টিভঙ্গি ও তত্ত্বের মাধ্যমে বিবর্তিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিবর্তনকে কয়েকটি প্রধান পর্যায়ে ভাগ করা যায়:

১. প্রাচীন কালের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক:

প্রাচীন সভ্যতাগুলো যেমন মিশর, গ্রিস, রোম, এবং চীনেও কিছু আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ছিল, তবে তা সাধারণত বাণিজ্যিক বা যুদ্ধসংক্রান্ত ছিল। সেসময় আন্তর্জাতিক সম্পর্কের কোনও সুসংগঠিত তত্ত্ব ছিল না, তবে কিছু আচরণগত নিয়মাবলী ও সম্পর্ক ছিল, যেমন বারtering (বাণিজ্য বিনিময়) এবং সাম্রাজ্য বিস্তার।

২. পশ্চিমা থিওরি ও আধুনিক রাষ্ট্রের উদ্ভব (1648-1815):

১৯শ শতকের প্রথম দিকে, ওয়েস্টফেলিয়া চুক্তি (1648) আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। এই চুক্তি রাষ্ট্রসত্তা এবং সার্বভৌমত্বের ধারণা প্রতিষ্ঠিত করে, যার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক রাজনীতি প্রধানত রাষ্ট্র-প্রধানদের মধ্যে পরিচালিত হয়। এই সময়ে রাষ্ট্রগুলো নিজেদের ক্ষমতা এবং সীমানা রক্ষা করতে একে অপরের সাথে সম্পর্ক তৈরি করত।

৩. ধর্মীয় এবং নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি (19 শতক):

বিশ্বযুদ্ধ এবং সাম্রাজ্যবাদের বিস্তার এসময় আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল। ১৮০০ শতকের শেষ দিকে এবং ১৯ শতকের শুরুর দিকে, রাষ্ট্রীয় স্বার্থের পাশাপাশি কিছু নৈতিক এবং মানবাধিকার ভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস স্টাডিতে উদিত হতে শুরু করে।

৪. বিশ্বযুদ্ধ এবং তার পরবর্তী পরিবর্তন (1914-1945):

প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক ছিল। এ সময়ে, রিয়েলিজম এবং লিবারালিজম মতবাদগুলোর প্রভাব বৃদ্ধি পায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়, যা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে। এছাড়া, মার্শাল পরিকল্পনা এবং নেতৃত্বাধীন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গঠিত হয়।

৫. ঠান্ডা যুদ্ধের যুগ (1947-1991):

১৯৪৭ সালে শুরু হওয়া ঠান্ডা যুদ্ধের সময়, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষিত হতে শুরু করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে রাজনৈতিক ও সামরিক দ্বন্দ্ব একটি বড় ভূমিকা পালন করে। ঠান্ডা যুদ্ধের সময় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বৈপরীত্য, শক্তির ভারসাম্য, এবং কূটনীতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এই সময়ই রিয়েলিস্টিক তত্ত্ব এবং মার্ক্সবাদী তত্ত্ব আরও বিস্তৃত হয়।

৬. নতুন দৃষ্টিভঙ্গি (1990 থেকে বর্তমান):

ঠান্ডা যুদ্ধের পর বিশ্ব একক ধ্রুবক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বহু রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সত্তার দিকে পরিণত হয়। বৈশ্বিক যোগাযোগ, প্রযুক্তির উন্নতি, এবং আন্তর্জাতিক সুশাসন নতুন বিশ্লেষণের সুযোগ তৈরি করেছে। পাশাপাশি, নব্য উপনিবেশবাদ, নারীবাদী তত্ত্ব, পাশ্চাত্যিক এবং অ-পাশ্চাত্য দৃষ্টিভঙ্গি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এনেছে।

৭. আন্তর্জাতিক সম্পর্কের তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি:

  • রিয়েলিজম: রাষ্ট্রের নিরাপত্তা এবং স্বার্থের প্রতি মনোযোগ দেয়, যা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে ক্ষমতার ভারসাম্য এবং যুদ্ধের সম্ভাবনা সৃষ্টি করে।
  • লিবারালিজম: এই তত্ত্ব বিশ্বাস করে যে, রাষ্ট্ররা সহযোগিতা করে এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • কনস্ট্রাকটিভিজম: এই তত্ত্বটি বিশ্বাস করে যে, রাষ্ট্র এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক অভিনেতাদের আচরণ সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে গড়ে ওঠে।
  • নারীবাদী তত্ত্ব: নারীদের অংশগ্রহণ এবং লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যের প্রতিক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষণ।

উপসংহার:

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের তত্ত্ব এবং বাস্তবতা একে অপরকে প্রভাবিত করে এসেছে। সময়ের সাথে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষণ এবং ক্ষমতা, নিরাপত্তা, অর্থনীতি, এবং মানবাধিকার ইত্যাদি বিষয়গুলোর মধ্যে সংশ্লিষ্টতা বেড়েছে। বর্তমান বিশ্বে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক একটি বহুস্তরীয়, জটিল এবং পরিবর্তনশীল ক্ষেত্র, যা বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও তত্ত্ব দ্বারা সমৃদ্ধ।

bn_BDBengali
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading