চার্টিস্ট আন্দোলন (Chartist Movement)
চার্টিস্ট আন্দোলন ১৯শ শতকের ইংল্যান্ডে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলন ছিল, যা মূলত ১৮৩৮ থেকে ১৮৪৮ সালের মধ্যে সক্রিয় ছিল। এই আন্দোলনটি মূলত শ্রমিক শ্রেণীর অধিকার ও গণতান্ত্রিক সংস্কার সম্পর্কিত দাবি নিয়ে গঠিত হয়েছিল। চার্টিস্ট আন্দোলনের নামকরণ হয় “পিপলস চার্টার” (People’s Charter) নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ নথির নামানুসারে, যা আন্দোলনের মূল দাবি ও উদ্দেশ্যগুলো তুলে ধরেছিল।
চার্টিস্ট আন্দোলনের মূল দাবিগুলি ছিল:
১. বিশ্বজনীন ভোটাধিকার:
পুরুষদের জন্য যে কোন ধরনের সম্পত্তির মালিকানা অথবা ট্যাক্স পরিশোধের শর্তের অভাব ছাড়াই সাধারণ ভোটাধিকার প্রাপ্তির দাবি।
২. একক আসনে প্রতিনিধিত্ব:
নির্বাচনী এলাকাগুলির মধ্যে জনসংখ্যার ভিত্তিতে সমান প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা।
৩. নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার:
নির্বাচন প্রক্রিয়া সহজতর এবং অধিকতর প্রাতিষ্ঠানিক করা।
৪. নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সম্মানী:
নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সম্মানী বেতন প্রদান এবং তাদের নিয়োগ ও অপসারণের প্রক্রিয়া সহজতর করা।
৫. বেশি কর্মসংস্থান:
জনগণের জন্য কাজের সুযোগ বৃদ্ধি এবং ন্যায়সঙ্গত কাজের পরিবেশ তৈরি করা।
অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট: চার্টিস্ট আন্দোলনের সূচনা ১৮৩০-এর দশকের শেষে এবং ১৮৪০-এর দশকের শুরুতে ইংল্যান্ডে ব্যাপক শ্রমিক অসন্তোষ ও সামাজিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে হয়। শিল্প বিপ্লবের ফলে শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে জীবনযাত্রার মান নিম্নমানের হয়ে পড়েছিল এবং তাদের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত ছিল না। এ সময়কার রাজনৈতিক ব্যবস্থা অত্যন্ত সীমিত ছিল এবং শ্রমিকদের ভোটাধিকার ও রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব ছিল একেবারেই অনুপস্থিত।
গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার মধ্যে: চার্টিস্ট আন্দোলনের সময়কালটি নানা আন্দোলন এবং কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পর্কিত। ১৮৪৮ সালের মে মাসে, আন্দোলনের নেতারা লন্ডনে বিশাল গণসমাবেশ ও মিছিল আয়োজন করেন, যা ইতিহাসে “চার্টিস্ট পিটিশন” নামে পরিচিত। এই পিটিশনে লক্ষাধিক স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়েছিল।
অনুভূমিক ও প্রভাব: যদিও চার্টিস্ট আন্দোলন তার অধিকাংশ দাবি পূরণে সফল হয়নি, তবে এটি ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক সংস্কারে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আন্দোলনের প্রভাবে পরবর্তীতে কিছু নির্বাচনী ও রাজনৈতিক সংস্কার প্রবর্তিত হয়, যেমন পুরুষদের ভোটাধিকার বৃদ্ধি এবং নির্বাচনী বিধির সংস্কার। এছাড়াও, চার্টিস্ট আন্দোলন আধুনিক শ্রমিক আন্দোলন এবং গণতান্ত্রিক অধিকার সংগ্রামের একটি শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপন করেছে।
উপসংহার:
চার্টিস্ট আন্দোলন ইংল্যান্ডের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা শ্রমিক শ্রেণীর অধিকার, গণতন্ত্র এবং রাজনৈতিক সংস্কারের দাবি নিয়ে গঠিত হয়েছিল। এটি প্রাথমিকভাবে সফল না হলেও, এর আদর্শ ও দাবি পরবর্তীতে রাজনৈতিক পরিবর্তন ও উন্নয়নের জন্য একটি শক্তিশালী প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।