ইলা-ভুটান যুদ্ধ সম্পর্কে একটি টীকা লেখো। Write a short note on Anglo-Bhutanese War.

কোচবিহাররাজ ও কোম্পানির মধ্যে সন্ধির শর্ত অনুযায়ী এক রেজিমেন্ট সৈন্য ও চারটি কামানসহ সেনাধ্যক্ষ মি. পালিং কলকাতা থেকে রংপুর হয়ে মোগলহাটে উপস্থিত হল। প্রথমে তিনি ও তার সহযোগী ক্যাপ্টেন জোন্স বলা নদী অতিক্রম করে গীতালদহ দুর্গের দিকে অগ্রসর হন। ইতিমধ্যে নাজিরদেব ও কোচ-সেনাপতি ভগবন্তকুমার সসৈন্যে গীতালদহ দুর্গের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং পরাজিত ভুটিয়া সৈন্য পশ্চাদ অপসরণ করে বালাডাঙ্গ্যা দুর্গে আশ্রয় গ্রহণ করে। ইন্দ্রেজ সৈন্য বালাডাঙ্গা দুর্গের দিকে অগ্রসর হলে ভুটানি সৈন্য তাদের আক্রমণ করতে বেরিয়ে আসে। ভুটিয়াগণ ব্রিটিশ রণকৌশলের সঙ্গো পরিচিত ছিল না। প্রায় সাতগুণ অধিক সৈন্য নিয়ে তারা সানন্দে ব্রিটিশ সৈন্যের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ইংরেজ সেনাধ্যক্ষ মি. পালিং নিজ সৈন্যদের পশ্চাদ অপসরণের আদেশ দেন এবং সৈন্যদের সুশৃঙ্খলভাবে সংহত করে তিনি একটি স্থানে নিয়ে আসেন-যার পিছনে লুকিয়ে ছিল ব্রিটিশ কামানশ্রেণি। স্বল্পতর স্থানে সংহত ইংরেজ সৈন্যকে ধ্বংস করতে বৃহদায়তন ভুটানি সৈন্য দলে দলে গনসন্নিবিষ্ট হয়ে নিয়ন্ত্রিত রণক্ষেত্রে যখন উপস্থিত, তখন ব্রিটিশ সৈন্য কামানের পশ্চাতে চলে এসেছে। ব্রিটিশ কামানের সামনে তখন ঘনসন্নিবিষ্ট ভুটানি সৈন্য চরম দুর্ভাগ্যের মুখোমুখি হয়। দুর্দান্ত গোলাবর্ষণে মুহূর্তের মধ্যে শত শত ভুটিয়া সৈন্য ভূপতিতঞ্চয় এবং বাকি সৈন্যরা রণে তলা দিয়ে পলায়ন করে। বালাডাঙ্গা দুর্গের পতনের পর মি. পালিং প্রায় বিনা বাধায় নাজিরগঞ্জ দুর্গ দখল করেন। সমস্ত স্থান থেকে পলায়িত বা বিতাড়িত ছুটিয়া সৈন্যরা তখন রাজধানীর দুর্গে আশ্রয় গ্রহণ করে মূল ঘাঁটিকে শস্ত করতে ব্রতী হয়। মি. পালিং কালবিলম্ব না করে রাজধানী কোচবিহারে উপনীত হন এবং সৈন্যদের দু-ভাগে বিভক্ত করে প্রাসাদের উত্তর ও দক্ষিণ দু-দিক থেকে যুগপৎ আক্রমণ পরিচালনা করেন। এই যুদ্ধে ভুটিয়া সৈন্যরা সম্পূর্ণ পরাজিত হয় এবং সেনাপতি ও রাজভ্রাতৃপূত্র। জিম্পে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণত্যাগ করেন। বেশ কিছু ভুটিয়ার সৈন্য বন্দি হয় এবং রাজপ্রাসাদে মহারাজার পতাকার সলো কোম্পানির পুতাকা উত্তোলিত হয়।I মি. পালিং পরাজিত ভুটানি সৈন্যের পশ্চাদ্ধাবন করতে করতে আধুনিক রাজা ভাত- খাওয়া নিকটস্থ চোকাখাত দূর্গ পর্যন্ত অগ্রসর হন এবং ওই দুর্গ দখল করে লর্ড হেস্টিংসকে যুদ্ধজয়ের খবর পাঠান। কিন্তু হেস্টিংসের নিকট থেকে আর অগ্রসর না-হওয়ার নির্দেশ আসে। এই সময় উত্তরে ও উত্তর-পশ্চিমাংশে কোচবিহার রাজ্যের অনেক অংশ ভুটানের দখলে ছিল। হেস্টিংসের আদেশে সেসব পুনর্দখল না করেই মি. পালিংকে ফিরে যেতে হয় এবং একতরফা যুদ্ধবিরতিতে প্রথম ইঙ্গ-ভুটান যুদ্ধের অবসান ঘটে।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

bn_BDBengali
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading