পদ(Clause):
মধ্য-যতির দ্বারা বিভক্ত ও পর্ব থেকে বৃহত্তর বাখ্যাংশকে পদ বা Clause বলে।
তিন রকমের যতি আছে, হ্রস্ব-যতি, মধ্য-যতি ও পূর্ণ-যতি। বাক্যের উচ্চারণ-কালে শ্বাস গ্রহণের জন্য যে অল্পক্ষণ বিরতির প্রয়োজন পড়ে তাকে হ্রস্ব-যতি, এবং যে বেশিক্ষণ বিরতির প্রয়োজন হয় তাকে পূর্ণ-যতি বলে। এই দুয়ের মাঝামাঝি আর একটি যতি আছে তাকে মধ্য-যতি বলে। এটি হ্রস্ব-যতি থেকে বেশি এবং পূর্ণ-যতি থেকে কম বিরতি। যেমন –
তরুতলে আছি। একেলা পড়িয়া ± দলিত পত্র। শয়নে।।
তোমাতে আমাতে। রত ছিনু যবে ± কাননে কুসুম। চয়নে।।
এখানে প্রতি বাক্যের প্রথম পর্বের পর যতি বসেছে এটা হ্রস্ব-যতি, এবং বাক্যের শেষে দুই দাঁড়ি(।।)চিহ্ন বসেছে এটা পূর্ণ-যতি। মাঝে ± দিয়ে যতি বসেছে, এটা মধ্য-যতি। এই মধ্য-যতি পূর্ণ-যতির চেয়ে কম এবং হ্রস্ব-যতির চেয়ে বেশি বিরতি-সম্পন্ন। আর এই মধ্য-যতির দ্বারা পংক্তি যে দু ভাগে বিভক্ত হয়েছে এর প্রত্যেক ভাগকে পদ বা Clause বলে। পদ পর্ব থেকে বৃহত্তর ছন্দোবিভাগ এবং চরণ থেকে ক্ষুদ্রতর।
চরণ(Metrical Line):
পূর্ণ-যতির দ্বারা নির্দিষ্ট ধ্বনিপ্রবাহকে চরণ বা Metrical Line বলে। চরণ মাত্রেরই এক বা একাধিক পর্ব থাকে। আমরা যখন কোনো বাক্য উচ্চারণ করি, তখন সেই বাক্যের ধ্বনিপ্রবাহে হ্রস্ব-যতি, মধ্য-যতি ও পূর্ণ-যতি দিয়ে থাকি। হ্রস্ব-যতি ধ্বনিপ্রবাহকে পর্বে ও মদ্য-যতি পদে এবং পূর্ণ-যতি চরণে সংজ্ঞায়িত করে। সুতরাং চরণ বলতে সাধারণত পর্ব ও পদ অপেক্ষা বৃহত্তর ধ্বনিপ্রবাহ বোঝায়। উপরের উদাহরণে দুটু চরণ রয়েছে, এগুলোতে পূর্ণ-যতি পড়েছে।
স্তবক(Stanza বা Verse-Group):
ভাবপূর্ণ চরণগুচ্ছকে স্তবক বলে। কোনো কবিতায় অনেক চরণ নিয়ে একটা ভাব যে ছন্দের গ্রন্থি গড়ে তোলে তাকে স্তবক বলে। কবিতায় যে ভাব প্রকাশ হয় তার বিভিন্ন স্তর থাকে। প্রতিটা স্তর বিভিন্ন চরণে একটা বন্ধনে থাকে। এই বন্ধনই সেই ছন্দ-গ্রন্থি যা স্তবক সৃষ্টি করে। যেমন –
হৃদয় আজি মোর। কেমনে গেল খুলি
জগৎ আসি সেথা। করিছে কোলাকুলি
প্রভাত হল সেই। কী জানি হল একি
আকাশ পানে চাই। কী জানি জগতে দেখি।।
এখানে একটি ভাব এই চার চরণে ছড়িয়ে ছন্দের একটা গ্রন্থি গড়ে তুলেছে। বাংলা কবিতায় নানা সংখ্যক চরণের স্তবক হতে পারে, যেমন – দুই চরণ, তিন চরণ, চার চরণ, পাঁচ চরণ কিংবা আরো বেশি।