উৎপাদনশীল ও অনুৎপাদনশীল শ্রম

শ্রমকে উৎপাদনশীল এবং অনুৎপাদনশীল এই দুই শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। তবে উৎপাদনশীল ও অনুৎপাদনশীল বলতে প্রকৃতপক্ষে কি বুঝায় এ নিয়ে অর্থনীতিবিদগণের মধ্যে মতভেদ। আছে।

নিচে বিষয়টি সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:
ফিজিওব্রাটদের ধারণা অষ্টাদশ শতাব্দীতে ফ্রান্সে ফিজিওক্সাট নামে পরিচিত এক শ্রেণীর লেখকদের আর্বিভাব ঘটে তাঁদের মতে, যে শ্রম অতিরিক্ত কিছু উৎপাদন করে তাকে উৎপাদনশীল শ্রম বলা হয়। অপরপক্ষে যে শ্রম অতিরিক্ত কোন কিছু উৎপাদন করে না তাকে অনুৎপাদনশীল শ্রম বলা হয়। এ ধারণা অনুযায়ী কেবল যে সমস্ত শ্রমিক কৃষি ক্ষেত্রে ও শিল্প কারখানায় নিয়োজিত আছে তাদের শ্রমকে উৎপাদনশীল বলা হয়। পক্ষান্তরে ব্যবসায় বা অন্যান্য কাজে নিয়োজিত শ্রমিক যারা নতুন কিছু উৎপাদন করে না সেগুলি অনুৎপাদনশীল শ্রম।

ক্ল্যাসিক্যাল মতবাদ এ্যাডাম স্মিথ, ডেভিড রিকার্ডো, জে. এস. মিল প্রমুখ ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদগণের মতে, যে শ্রমের দ্বারা বস্তুজাত কোন দ্রব্য উৎপাদন করা হয় তাকে উৎপাদনশীল শ্রম বলা হয়। অর্থাৎ কৃষক, তাঁতী, শ্রমিক বস্তুগত দ্রব্য উৎপাদন করে বলে তাদের শ্রমকেই উৎপাদনশীল শ্রম বলে। পক্ষান্তরে, যে শ্রমের সাহায্যে দৃশ্যমান বা বস্তুজাত কোন দ্রব্য উৎপাদিত হয় না সেই শ্রমকে অনুৎপাদনশীল শ্রম বলে গণ্য করা হয়। এই সংজ্ঞানুযায়ী, শিক্ষক, ডাক্তার, আইনজীবী, গায়ক প্রভৃতির কাজকে অনুৎপাদনশীল শ্রম বলা হয়।

আধুনিক মতবাদ আধুনিক অর্থনীতিবিদগণ ফিজিওফ্ল্যাট বা ক্ল্যাসিক্যাল অর্থনীতিবিদগণের মতবাদ সমর্থন করেন না। তাঁদের মতে, যে শ্রম কোন উপযোগ সৃষ্টি করে তাকেই উৎপাদনশীল শ্রম বলা হয়। এ ধারণা অনুযায়ী, শ্রম বস্তুজাত ও অবস্ত্রজাত যাই উৎপন্ন করুক না কেন, যদি তা মানুষের অভাব পূরণ করতে পারে তা হলে সেটা উৎপাদনশীল শ্রম। উৎপাদন বলতে উপযোগ সৃষ্টি বুঝায়। সুতরাং ডাক্তার, শিক্ষক, উকিল, গায়ক, কবি প্রভৃতি সকলের শ্রমই উৎপাদনশীল। কারণ, সমাজে তাদের সেবার চাহিদা আছে। অপরপক্ষে যে শ্রম, কোন উপযোগ সৃষ্টি করতে পারে না, যার কোন বিনিময় মূল্য নেই, তাকে অনুৎপাদনশীল শ্রম বলা হয়।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

bn_BDBengali
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading