একটি সামাজিক সংস্থা হিসাবে স্কুলের ভূমিকা কি?

একটি সামাজিক সংস্থা হিসাবে স্কুলের ভূমিকা

সামাজিক পরিবর্তনের সংজ্ঞাগুলি বিশ্লেষণ করলে এর কিছু বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়, যথা-

  1. সামাজিক পরিবর্তন হল সমাজের সাংগঠনিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন।
  2. সামাজিক পরিবর্তনে নানান বৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হয়।
  3. এই পরিবর্তন কখন ধীর আবার কখন দ্রুতগতি সম্পন্ন।
  4. সামাজিক পরিবর্তনে সমাজের স্বাতন্ত্র্য ও সক্রিয়তা বজায় থাকে। 
  5. সামাজিক পরিবর্তন হল সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার ফল। 
  6. উপরিউক্ত সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্যগুলি বিশ্লেষণে বলা যেতে পারে, যে কোন সমাজের অন্তর্গত বিভিন্ন সদস্যদের একে অপরের সাথে সঙ্গতিবিধানের প্রচেষ্টার ফলে সমাজের অভ্যন্তরীণ সংগঠনে যে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়, তাই হল সামাজিক পরিবর্তন। 

সামাজিক পরিবর্তনের ধরণ

সামাজিক পরিবর্তন নানান কারণে সম্পন্ন হয়ে থাকে, কিন্তু যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটা হল এই পরিবর্তন কতরকমের হয়। সামাজিক পরিবর্তনের ধরণ সম্পর্কে বিভিন্ন সমাজতাত্ত্বিকরা তাদের মতামত দিয়েছেন। প্রথমত, ধীরে ধীরে যে পরিবর্তন হয় তাকে আমরা বলি Evolutionary Change বলি। Morgan-এর মতে সামাজিক পরিবর্তন ধীরে ধীরে কিন্তু ধারাবাহিকভাবে হয়ে থাকে। দ্বিতীয়ত, যে পরিবর্তন হঠাৎ করে হয় তাকে Revolution change বলে। তৃতীয়ত, Evolutionary Change প্রাণী জগতে ঘটে। এখানে উল্লেখযোগ্য যে বুদ্ধি বিবেচনার মাধ্যমে যে পরিবর্তন আসে তাকে পরিকল্পিত পরিবর্তন বলে। এক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। কোন পথে পরিবর্তন আসবে তা আগেই ঠিক করে রাখতে হবে, এই পরিবর্তনকে Telic বা Planned change বলে। 

সামাজিক পরিবর্তনের উপাদান

মূলত ব্যাক্তির সঙ্গে পরিবেশের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফলেই সামাজিক পরিবর্তন দেখা দিলেও কয়েকটি বিশেষ বস্তু বা ঘটনাকে সামাজিক পরিবর্তনের কারণ বা উপাদান বলা যেতে পারে। যেগুলি নিম্নে উল্লেখ করা হল-

  1. সাংস্কৃতিক উপাদান সংস্কৃতি বলতে বোঝায় চিন্তাধারা, আচার-আচরণে এবং রীতি-নীতির একটি বিশেষ মানকে। বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে এই দৃষ্টিভঙ্গি সংক্রান্ত যে সংঘাত দেখা যায়, তা থেকে জন্ম নেয় এক নতুন মূল্যবোধের। ফলে সামাজিক সাংগঠনিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়, যাকে আমরা বলছি সামাজিক পরিবর্তন। সুতরাং সাংস্কৃতিক উপাদান সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলে বিবেচিত হয়।
  2. প্রযুক্তিগত উপাদান প্রযুক্তিগত উন্নতি বা অবনতি অনিবার্যভাবেই সমাজকে প্রভাবিত করে। কারণ প্রযুক্তির বিভিন্ন দিকের সঙ্গে মানুষের জীবিকা জড়িত আছে, ফলে এর সাথেও সামাজিক পরিবর্তন জড়িত আছে।
  3. জৈব উপাদান জৈব উপাদান নির্ধারণ করে সমাজস্থ প্রত্যেকটি মানুষ, কে-কিভাবে বেঁচে থাকবে এবং নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করবে। তাই সমাজস্থ লোকের বেঁচে থাকার পদ্ধতি সমাজে পরিবর্তন আনে।
  4. জনসংখ্যাগত উপাদান নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, শিশু-যুবক প্রভৃতির জন্ম ও মৃত্যুর হার সমাজের মধ্যে সর্বাধিক পরিবর্তন আনে। সমাজের অস্তিত্ব সমাজের মধ্যে বসবাসকারী মানুষকে ঘিড়ে, সেহেতু তাদের জন্ম ও মৃত্যুর হার বিশেষ করে সমাজকে প্রভাবিত করে। 
  5. পরিবেশগত উপাদান ওয়াটসনের মতে পরিবেশের সাথে প্রতিক্রিয়া করে শিশু তার আচরণ আয়ত্ত করে- তাই যদি কোন পরিবেশের পরিবর্তন হয় তাহলে মানুষের আচরণেরও পরিবর্তন হবে এবং এই পরিবর্তন আচরণ অবশ্যই সমাজের উপর প্রভাব বিস্তার করবে।
  6. মনোবৈজ্ঞানিক উপাদান মানুষ সবসময়ই কোন কিছু আবিষ্কার করতে চায় ও এদের আচার আচরণ প্রভৃতির মধ্যে ধারাবাহিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। মানুষের এই পরিবর্তনের জন্যই এর অনিবার্য প্রভাব এসে পড়ে সমাজ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে। 
  7. ভৌগলিক উপাদান অনুকূল ও প্রতিকূল জলবায়ু, উর্বর মাটি, অধিক ফসল উৎপাদিত স্থান, ধর্মীয় স্থান ইত্যাদি ক্ষেত্রে মানুষের আচার আচরণ, রীতি নীতি, সংস্কৃতি ইত্যাদির প্রভাবে সমাজে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
  8. বৈজ্ঞানিক কারিগরি উদ্ভাবন বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি উদ্ভাবনের ফলে সামাজিক পরিবর্তন দ্রুত হয়েছে। নানা আবিষ্কারের ফলে বিভিন্ন দেশ পরস্পর পরস্পরের নিকটে এসেছে, বিশ্বায়নের ধারণায় গতি এসেছে।
  9. শিক্ষাগত উপাদান শিক্ষার সাহায্যে সামাজিক সংগঠনগুলির পরিবর্তন ঘটে, মূল্যবোধের পরিবর্তন, দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, আবার মানবিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ভেতর দিয়েও সামাজিক পরিবর্তন ঘটে থাকে। 

সামাজিক পরিবর্তনে বাঁধা সৃষ্টিকারী উপাদান 

  1. সমাজে ব্যক্তিদ্বয়ের মধ্যে চিন্তাভাবনার পার্থক্য।
  2. সমাজের মধ্যে বৈষম্য।
  3. মানুষের মধ্যে নতুন সংস্কৃতি কিংবা চিন্তাধারায় পরিবর্তন না আনার মনোভাব, অর্থাৎ যা চলে আসছে সেটাই বয়ে নিয়ে যাওয়া।
  4. সমাজের কিছু স্বার্থান্বেষী ও সুবিধাভোগী মানুষ আছেন যারা পরিবর্তন চান না।
  5. সামাজিক পরিবর্তনে একটি অন্যতম প্রধান বাঁধা হল সাংস্কৃতিক বিছিন্নতা। 

পরিবর্তন জীবনের ধর্ম। ক্ষুদ্র এককোষী প্রাণী থেকে শুরু করে উন্নতম জীব মানুষের জীবনে যে বৈশিষ্ট্যটি অবশ্যই দেখা যায় সেটি হল বিরতিহীন পরিবর্তন। বাঞ্ছিত সামাজিক পরিবর্তনের জন্য ব্যাক্তির সামাজিক জীবনে যেমন শিক্ষার প্রয়োজন তেমনি তার ব্যাক্তিগত জীবনের সংগঠনেও শিক্ষার প্রয়োজন। ভারতবর্ষে আগের তুলনায় নিঃসন্দেহে পেশাগত ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার হয়েছে। কিন্তু জনসংখ্যার দিক দিয়ে এখনও পর্যন্ত নানা ধরনের চাহিদা ভিত্তিক পরিকল্পনা দরকার যাতে মানবশক্তি অপচয় না ঘটিয়ে তাকে যথাযোগ্য সুপ্রয়োগের দ্বারা সমাজে সুপরিবর্তন ঘটানো যায়।

bn_BDBengali
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading