‘এপিগ্রাফি’ ও ‘নিউমিসমেটিকস’ সম্পর্কে নীচে আলোচিত হল-
এপিগ্রাফি:
প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে লিপির গুরুত্ব সর্বাধিক। লিপি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে, যেমন-শিলালিপি, স্তম্ভলিপি, তাম্রলিপি প্রভৃতি। লিপি বলতে বোঝায় বিভিন্ন সরকারি তথ্য, যেমন-শাসনতান্ত্রিক লিপিও রয়েছে। এ ছাড়া, ধর্মলিপি, প্রশস্তিবাচক লিপি, দানসূচক লিপি, ব্যক্তিগত লিপি প্রভৃতি, যেগুলি লোহা, সোনা, তামা, ব্রোঞ্জ, ইট, পাথর প্রভৃতির গায়ে খোদাই করে উৎকীর্ণ করা হত। লিপি-উৎকীর্ণ বিদ্যাকে বলা হয় ‘এপিগ্রাফি’ (Epigraphy) এবং লিপি-অনুশীলনকে বলা হয় ‘প্যালিয়োগ্রাফি’ (Palaeography)।
লিপিগুলির মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য লিপি আছে, তা হল-শকরাজা রুদ্রদামনের ‘জুনাগড় লিপি’, সমুদ্রগুপ্তের ‘এলাহাবাদ প্রশস্তি’, কলিঙ্গরাজ খারবেলের ‘হাতিগুম্ফা লিপি’, দ্বিতীয় পুলকেশীর ‘আইহোল প্রশস্তি’, গৌতমীপুত্র সাতকণীর ‘নাসিক প্রশস্তি’ প্রভৃতি।
নিউমিসমেটিকস:
প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার একটি অন্যতম উপাদান হল মুদ্রা। মুদ্রা এক ধরনের ঐতিহাসিক দলিল। মুদ্রার পঠনপাঠন সংক্রান্ত বিদ্যাকে বলা হয় ‘নিউমিসমেটিকস’ (Numismatics)। খননকার্যের ফলে অথবা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে যে সমস্ত মুদ্রা আবিষ্কৃত হয়েছে, তা থেকে প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের নানা তথ্য পাওয়া যায়। ভারতে গ্রিক আক্রমণের পর থেকে রাজার নাম খোদাই করা মুদ্রার প্রচলন হয়। ইতিহাসের উপাদান হিসেবে মুদ্রার বহুমুখী গুরুত্ব রয়েছে। সাহিত্য ও লিপি থেকে
প্রাপ্ত তথ্য মুদ্রা দিয়ে যাচাই করা হয়। প্রাচীন ভারতের এমন বেশ কিছু লিপি রয়েছে যাতে উৎকীর্ণকৃত অক্ষর পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তাই মুদ্রার পঠনপাঠন সংক্রান্ত বিদ্যা একান্ত প্রয়োজন। মুদ্রার পঠনপাঠন দ্বারা যদি পাঠোদ্ধার সম্ভব হয়, তবে ইতিহাসের বেশ কিছু দিক হয়তো আমাদের সামনে উম্মোচন হবে।