অথবা, উপযুক্ত উদাহরণের সাহায্যে কলাবৃত্ত ছন্দের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করে এর রূপভেদের পরিচয় দাও
কলাবৃত্ত ছন্দের অন্যান্য নামগুলির উল্লেখ করে উপযুক্ত দৃষ্টাত্তসহ এই ছন্দের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
মাত্রাবৃত্ত ছন্দ (কলাবৃত্ত বা ধ্বনিপ্রধান ছন্দ) বাংলা সাহিত্যে প্রচলিত প্রধান তিনটি ছন্দের একটি। অন্য দুটি হলো স্বরবৃত্ত ছন্দ এবং অক্ষরবৃত্ত ছন্দ। মাত্রাবৃত্ত ছন্দে লেখা কবিতাগুলোর মূলপর্ব ৪, ৫, ৬, ৭ মাত্রার হতে পারে।
কলাবৃত্ত ছন্দের বৈশিষ্ট্য:
- মূল পর্ব ৪,৫,৬ বা ৭ মাত্রার হয়।
- অক্ষরের শেষে স্বরধ্বনি থাকলে ১ মাত্রা গুনতে হয়; আর অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলে (য় থাকলেও) ২ মাত্রা গুনতে হয়; য় থাকলে, যেমন- হয়, কয়; য়-কে বলা যায় semi-vowel, পুরো স্বরধ্বনি নয়, তাই এটি অক্ষরের শেষে থাকলে মাত্রা ২ হয়।
- কবিতা আবৃত্তির গতি স্বরবৃত্ত ছন্দের চেয়ে ধীর, কিন্তু অক্ষরবৃত্তের চেয়ে দ্রুত।
কলাবৃত্ত ছন্দের নামকরণ:
প্রাচীনতম এ বাংলা ছন্দকে রবীন্দ্রনাথ নাম দিয়েছেন ‘সংস্কৃতভাঙা’। মোহিতলাল মজুমদার ডেকেছেন ‘সাধুভাষার পর্বভূমক’ বলে’। প্রবোধচন্দ্র সেন দিয়েছেন অনেক নাম – ‘কলাবৃত্ত’, ‘সরলকলামাত্রিক’ ও ‘মাত্রাবৃত্ত’। পরবর্তীতে ‘মাত্রাবৃত্ত’ নামটিই ব্যবহৃত হয় বেশি
ছন্দ বিশ্লেষণ:
এইখানে তোর / দাদির কবর / ডালিম-গাছের ∣ তলে ৬+৬+৬+২
তিরিশ বছর / ভিজায়ে রেখেছি / দুই নয়নের ∣ জলে ৬+৬+৬+২
(কবর; জসীমউদদীন)
কবিতাটির মূল পর্ব ৬ মাত্রার। প্রতি চরণে তিনটি ৬ মাত্রার পূর্ণ পর্ব এবং একটি ২ মাত্রার অপূর্ণ পর্ব আছে।
এখন মাত্রা গণনা করলে দেখা যাচ্ছে, প্রথম চরণের-
প্রথম পর্ব- এইখানে তোর; এ+ই+খা+নে = ৪ মাত্রা (প্রতিটি অক্ষরের শেষে স্বরধ্বনি থাকায় প্রতিটি ১ মাত্রা); তোর = ২ মাত্রা (অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি থাকায় ২ মাত্রা)।
দ্বিতীয় পর্ব- দাদির কবর; দা+দির = ১+২ = ৩ মাত্রা; ক+বর = ১+২ = ৩ মাত্রা।
তৃতীয় পর্ব- ডালিম-গাছের; ডা+লিম = ১+২ = ৩ মাত্রা; গা+ছের = ১+২ = ৩ মাত্রা।
চতুর্থ পর্ব- তলে; ত+লে = ১+১ = ২ মমাত্রা