কান্টের “কর্তব্যের জন্যই কর্তব্য কর”- কথাটি ব্যাখা কর।

কর্তব্যের জন্যই কর্তব্য কর কান্টের এ নীতিদর্শন, নীতিবিদ্যার গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। কান্ট তার দর্শন চিন্তার কথাটি নানাভাবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেছেন। এমন কি তার গ্রন্থেও কথাটি একাধিকবার বুঝতে চেষ্টা করেছেন। তবে কান্টের এ কথাটি যুক্তিসংগত এবং গ্রহণযোগ্য।
কান্টের কর্তব্যের জন্য কর্তব্য মতবাদঃ আমরা যদি কান্টের কর্তব্যের জন্য কর্তব্য মতবাদটি পর্যালোচনা করে যেসব বিষয় পাওয়া যাবে তা নিম্নে উপস্থাপন করা হলো।

১. কর্তব্য পালন করে মন থেকেঃ মানুষকে বাধ্য করে জোরপূর্বক কর্তব্য পালন করানো যায় না আর এটা জোরের বিষয় না। এটা পালন করতে হয় মন থেকে। মন থেকে কেউ যদি মনে করে এটা আমার পালন করতে হবে। এটা আমার পালন করা উচিত তবেই মানুষ কর্তব্য পালনে সচেষ্ট হয় এ কথা নিশ্চিত।

২. কর্তব্য সদিচ্ছা দ্বারা পরিচালিতঃ ব্যক্তির সদিচ্ছা ধারা কর্তব্য পালিত হয়। ব্যক্তির সদিচ্ছা না থাকলে কর্তব্য পালিত হয় না। কান্টের মতে ইচ্ছা যখন প্রবৃত্তির পরিবর্তে বুদ্ধির দ্বারা পরিচালিত হয় তখন সে ইচ্ছাকে বলা হয় সদিচ্ছা। কান্ট আবার বলেন- কর্তব্য সদিচ্ছা দ্বারা পরিচালিত।

৩. কর্তব্য যুক্ত কাজ নৈতিকভাবে মূল্যবানঃ কান্ট মনে করেন একটি কাজের ন্যায়ত্ব ও অন্যায়ত্ব নির্ধারণ করা হয় ঐ কাজটি দিয়ে। কর্তব্য মনে করে কোনো কাজ সমাধা করলে কাজটি অনেক বেশি সুন্দরভাবে, একথা সত্য, কর্তব্যযুক্ত কাজ না হলে সে কাজটি কর্তব্যযুক্ত কাজের মত সুন্দর হবে না এ কথাও সত্য। এজন্য বলা হয় কর্তব্যযুক্ত নৈতিকভাবে মূল্যবান।

৪. “কর্তব্যের জন্যই কর্তব্য কর” কথাটিঃ “কর্তব্যের জন্যই কর্তব্য কর” কান্ট মনে করে এটি একটি সার্বিক ও নৈতিক নিয়ম। কর্তব্যের জন্যই কর্তব্য কর কথাটির ভিতর দায়িত্ববোধ কাজ করে। ফলে সেখান থেকে ভাল ফল আশা করা যায়। আর এ নিয়ম দেশ-কাল ভেদে সর্বত্র সমানভাবে প্রযোজ্য। হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম, খ্রিস্টান সকলের উচিত কর্তব্যের জন্যই কর্তব্য পালন করা।

৫. স্বার্থবিহীন এক আদেশঃ কর্তব্যের জন্যই কর্তব্য পালন করা এটা হলো এক শর্তহীন আদেশ। এ আদেশ পালনের মাধ্যমে দেখা যায় এখানে কোনো স্বার্থ থাকছে না। তখন মানুষ যতটুকু কর্তব্য পালন করে ততটুকুই মন থেকে করে তখন তিনি সর্বোচ্চটুকু দেয়ার চেষ্টা করে। এ আদেশ নৈতিক কর্তাকে কোন রকম ফল লাভের উদ্দেশ্য ছাড়া শুধুমাত্র নৈতিক নিয়মের স্বার্থে নৈতিক নিয়ম পালনের সুযোগ দেয়।

পরিশেষে বলা যায় যে, “কর্তব্যের জন্যই কর্তব্য”। কান্টের এ ধারণাটি নীতিদর্শনে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছে। “কর্তব্যের জন্যই কর্তব্য কর” ধারণাটি দ্বারা কর্তব্য পালনে আরো আগ্রহী হবে একথা নিশ্চিত। এ ধারণার কারণে ব্যক্তি কর্তব্য পালনে আরো উদগ্রীব হবে এটা সত্য।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

bn_BDBengali
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading