‘কৃপাহত্যা” বলতে কি বোঝ ? সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় কৃপাহত্যার মধ্যে পার্থক্য কর। সক্রিয় কৃপাহত্যা কি নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য ?

কৃপাহত্যার সংজ্ঞা :-

সৌজন্য হত্যা বা কৃপা হত্যা অথবা দয়ামৃত্যু প্রভৃতি দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারণত ইউথানেসিয়া শব্দটির একটি অভিধানগত অর্থ হল সৌজন্য হত্যা বা ‘করুণা হত্যা‘ (কৃপা হত্যা)। ইংরেজি পরিভাষায় একে বলা হয়– ‘Mercy Killing‘, তবে একে কৃপা হত্যাও বলা যেতে পারে। প্রকৃতপক্ষে একে বলা হয় দূরারোগ্য ব্যাধির চরম যন্ত্রণা থেকে মানুষকে মুক্ত করার জন্য শান্ত-ধীর ভাবে জীবনের অবসান ঘটানো। এক অর্থে একে বলা হয় ‘কাঙ্খিত হত্যাজনিত মৃত্যু’ বা দয়ামৃত্যু।

  1. জীবনকে মূল্যবান হিসাবে গণ্য করলে সৌজন্যহত্যাকে স্বীকার করা কতটা যুক্তিযুক্ত। আলোচনা কর।
  2. অথবা, সৌজন্য হত্যার পক্ষে এবং বিপক্ষে যুক্তিগুলি ব্যাখ্যা ও বিচার কর।
  3. অথবা, কৃপা হত্যা কাকে বলে? ঐচ্ছিক ও অনৈচ্ছিক কৃপা হত্যার পার্থক্য নির্দেশ কর। কৃপা হত্যা কি গ্রহণযোগ্য?
  4. অথবা, দয়ামৃত্যু কি? ঐচ্ছিক করুণাহত্যা ও অনৈচ্ছিক করুণাহত্যার মধ্যে পার্থক্য কর।

ঐচ্ছিক করুণাহত্যা ও অনৈচ্ছিক করুণাহত্যার মধ্যে পার্থক্য :-

সৌজন্য হত্যা বা কৃপা হত্যা অথবা দয়ামৃত্যু কী:
সৌজন্য হত্যা বা কৃপা হত্যা অথবা দয়ামৃত্যু প্রভৃতি দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারণত ইউথানেসিয়া শব্দটির একটি অভিধানগত অর্থ হল সৌজন্য হত্যা বা ‘করুণা হত্যা‘ (কৃপা হত্যা)। ইংরেজি পরিভাষায় একে বলা হয়– ‘Mercy Killing‘, তবে একে কৃপা হত্যাও বলা যেতে পারে। প্রকৃতপক্ষে একে বলা হয় দূরারোগ্য ব্যাধির চরম যন্ত্রণা থেকে মানুষকে মুক্ত করার জন্য শান্ত-ধীর ভাবে জীবনের অবসান ঘটানো। এক অর্থে একে বলা হয় ‘কাঙ্খিত হত্যাজনিত মৃত্যু’ বা দয়ামৃত্যু।

আসলে ব্যবহারিক নীতিশাস্ত্রে “সৌজন্য হত্যা‘ বা ‘করুণা হত্যা‘ বা কৃপা হত্যা অথবা দয়ামৃত্যু বিষয়গুলি অন্যায় রূপে পরিগণিত হয়। একথা সত্য যে, কোন ব্যক্তির মৃত্যুকে তখনই অকল্যাণকর বলা হয়, যখন তার হত্যাকে অপরাধ বলে গণ্য হবে। এছাড়া যেখানে আত্মসচেতনতা, বিচারশীলতা ও পরিকল্পনামাফিক ব্যক্তির হত্যা তরান্বিত করা হয়, সেখানে অপরাধ বা অকল্যাণজনক বিষয়টির তেমন কোন মূল্য থাকে না । অর্থাৎ নীতিগত দিক থেকে তাকে অন্যায় বলা যায় না। এখানে “সৌজন্য হত্যা“ বা “করুণা হত্যা” বা কৃপা হত্যা অথবা দয়ামৃত্যু যথার্থ বলে বিবেচিত হতে পারে।

সৌজন্য বা কৃপা হত্যা অথবা দয়ামৃত্যু হত্যার বিভিন্ন সুর:
সৌজন্য হত্যা বা কৃপা হত্যা অথবা দয়ামৃত্যু সাধারণত দুই প্রকার। এগুলি হল—
 ক) ঐচ্ছিক সৌজন্য হত্যা বা কৃপা হত্যা অথবা দয়ামৃত্যু।
 খ) অনৈচ্ছিক সৌজন্য হত্যা বা কৃপা হত্যা অথবা দয়ামৃত্যু।

ক) ঐচ্ছিক সৌজন্য হত্যা বা কৃপা হত্যা অথবা দয়ামৃত্যু কিংবা করুণা হত্যা:
মৃত ব্যক্তির অনুরোধ বা পূর্ব ইচ্ছা অনুযায়ী যে হত্যা ঘটানো হয় — তাকেই ‘ঐচ্ছিক সৌজন্য হত্যা বা কৃপা হত্যা অথবা দয়ামৃত্যু‘ বলে। এই ধরনের হত্যাকে ‘করুণা হত্যা‘ বা ‘কাঙ্খিত হত্যা‘ জনিত মৃত্যুও বলা যেতে পারে। এই সৌজন্য হত্যা বা কৃপা হত্যা অথবা দয়ামৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে বিশ্বজুড়ে। আবার এই সৌজন্য হত্যা বা কৃপা হত্যা অথবা দয়ামৃত্যুর সমর্থনে আইন প্রণয়নের জন্য বিভিন্ন সংগঠন গড়ে উঠেছে। সাম্প্রতিককালে এর জনমত গঠনের প্রচেষ্টা দেখা যায়।

সৌজন্য হত্যা বা কৃপা হত্যা অথবা দয়ামৃত্যু সম্পর্কে পিটার সিঙ্গারের অভিমত: প্রখ্যাত দার্শনিক পিটার সিঙ্গার সৌজন্য হত্যা বা কৃপা হত্যা অথবা দয়ামৃত্যু সম্পর্কে তাঁর মতবাদ প্রচার করেছেন। তিনি কয়েকটি দৃষ্টান্তের সাহায্যে বিষয়টি সুস্পষ্ট করতে চেয়েছেন।
তাঁর একটি দৃষ্টান্ত হল এই যে,– সিঙ্গার তাঁর ‘জিন্স ওয়ে‘ নিবন্ধে ডেরেক হামফ্রি ও তাঁর স্ত্রী জিন- এর মৃত্যুর বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে। ক্যানসার রোগে আক্রান্ত জিন তার স্বামী হামফ্রিকে এমন এক বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেন, যাতে তাঁর মৃত্যু হবে যন্ত্রণাহীন ভাবে। শুধু তাই নয় জিন্‌ একথাও বলেছেন তার মৃত্যু যেন অতি দ্রুত বা স্বল্প সময়ে ঘটে। স্ত্রী জিনের কথা মতো হামফ্রি মৃত্যু সম্পর্কিত কিছু ঔষধ সংগ্রহ করে আনেন। সেই ঔষধ খাওয়া মাত্রই জিনের মৃত্যু ঘটে। জিনের এই মৃত্যুকে সিঙ্গার সৌজন্য হত্যা নামাঙ্কিত করেছেন।

খ) অনৈচ্ছিক সৌজন্য হত্যা বা কৃপা হত্যা অথবা দয়ামৃত্যু কিংবা করুণা হত্যা:
ঐচ্ছিক সৌজন্য হত্যা বা কৃপা হত্যা অথবা দামৃত্যুর একটি বিপরীত দিক হল অনৈচ্ছিক সৌজন্য হত্যা বা কৃপা হত্যা অথবা দামৃিত্যু। একথা মনে রাখা আবশ্যক যে, মৃত্যু আকাঙ্খী ব্যক্তির মৃত্যু সম্পর্কে সচেতনতা বা বোধশক্তি থাকা প্রয়োজন। যদি কোন ব্যক্তির এই বোধশক্তি না থাকে এবং তার ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করা হয়, তবে তাকে ঐচ্ছিক সৌজন্য হত্যা বা কৃপা হত্যা অথবা দয়ামৃত্যু বলা যায় না। আবার একে ইচ্ছা-বিরোধী সৌজন্য হত্যা বা কৃপা হত্যা অথবা দয়ামৃত্যুও বলা যায় না। এই রূপ হত্যাকেই বলা হয়– হত্যা অথবা দয়ামৃত্যু কিংবা করুণা হত্যা। অনৈচ্ছিক সৌজন্য হত্যা বা কৃপা
একথা সকলেই অবগত যে বাক্‌শক্তিহীন, অক্ষম বিকলাঙ্গ বা বিকৃত মস্তিষ্ক ব্যক্তি মৃত্যু সম্পর্কে সম্মতি জানাতে পারে না। ইচ্ছা বা অনিচ্ছা সম্পর্কে কোন ধারণা প্রকাশ করতে পারে না। এ ধরনের সৌজন্য হত্যাকে বলা যেতে পারে অনৈচ্ছিক সৌজন্য হত্যা বা কৃপা হত্যা অথবা দয়ামৃত্যু। এই ধরনের সৌজন্য হত্যা কোন মানুষের পক্ষেই কাম্য নয়, সমর্থনযোগ্য নয়। ইউরোপের কোন কোন দেশে এজাতীয় সৌজন্য হত্যার দৃষ্টান্ত লক্ষ করা যায়।

মূল্যায়ন:
উপরিউক্ত আলোচনার নিরিখে একথা বলা যায় যে, সৌজন্য হত্যা বা কৃপা হত্যা অথবা দয়ামৃত্যু বিষয়গুলি স্পর্শ কাতর এবং জটিল। তবে অনৈচ্ছিক সৌজন্য হত্যা বা কৃপা হত্যা অথবা দয়ামৃত্যু সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। এ হত্যা মানবসম্পদ হত্যা করে থাকে। সৌজন্য হত্যা বা কৃপা হত্যা অথবা দয়ামৃত্যু কিংবা করুণাহত্যা প্রভৃতি হত্যাকেন্দ্রিক আত্মহত্যাগুলি সমগ্র পৃথিবীতে বিশেষ বিতর্কের বিষয় হয়ে উঠেছে। একথা সর্বজনবিদিত যে, কোন হত্যাই পৃথিবীর সাধারণ মানুষের কাছে যেমন কাম্য নয়, তেমনি গ্রহণযোগ্যও নয়। যদিও সাম্প্রতিককালে এই সকল আত্মহত্যাবিষয়ক মৃত্যুকে কোন কোন দেশ সমর্থন করেছে, তবুও পৃথিবীর কাছে বা সমগ্র বিশ্বের কাছে সেই দেশগুলি একান্তভাবেই নগণ্য।

এমন ঘটনাও ভারতবর্ষ তথা ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলিতে দেখা যাচ্ছে যে, কোন ব্যক্তি প্রায় তিরিশ বছর বা ততোধিক বছর ধরে কোমায় রয়েছে বা চিকিৎসাধীন রয়েছে, সেই ব্যক্তিবর্গের পরিবার সরকারের কাছে সৌজন্য হত্যা বা কৃপা হত্যা অথবা দয়ামৃত্যু কিংবা সেচ্ছামৃত্যু অথবা স্বস্তিমৃত্যু চাইছে, তবু এখনও কোন দেশ, কোন বিচারালয় বা কোন সংবিধান এ জাতীয় মৃত্যুকে সরকারী সীলমোহর দিচ্ছে না। এদিকে লক্ষ্য রেখে এই সকল মৃত্যুকে সমর্থন করা যে যাচ্ছে না বা এই সকল মৃত্যু যে সমর্থনযোগ্য নয়, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

bn_BDBengali
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading