গণতন্ত্রের সাফল্যের শর্তাবলি গণতন্ত্রের সাফল্যের শর্তাবলি বলতে কী বোঝো?

গণতন্ত্রের সাফল্যের শর্তাবলি : তত্ত্বগতভাবে গণতন্ত্র সর্বোৎকৃ ব্যবস্থা হিসাবে স্বীকৃত হলেও একে সাফল্যের সঙ্গে বাস্তবে রূপান্তরিত করা সহজ নয়। অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় যে এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও লাতিন আমেরিকার অনেক রাষ্ট্রেই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা স্থায়ী হয়নি। বস্তুত গণতন্ত্রকে সফল করতে কয়েকটি প্রয়োজনীয় শর্তপূরণ আবশ্যক। জন স্টুয়ার্ট মিল, লর্ড ব্রাইস, গার্নার প্রমুখ লেখক গণতন্ত্রকে সার্থক করে তোলার জন্য কয়েকটি শর্তের কথা উল্লেখ করেছেন।

জন স্টুয়ার্ট মিল তাঁর ‘প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনব্যবস্থা’ নামক গ্রন্থে গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্য তিনটি শর্তপুরণের কথা বলেছেন।
প্রথমত, জনগণের মধ্যে গণতন্ত্রকে গ্রহণ করার মতো ইচ্ছে বা প্রবণতা । দ্বিতীয়ত, গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য জনগণের মধ্যে সংগ্রামী মনোভাব তৃতীয়ত, গণতন্ত্রকে বজায় রাখার জন্য জনগণের মধ্যে কর্তব্যপালনে আগ্রহ।

গণতন্ত্রের সাফল্যের শর্তগুলি নিম্নলিখিতভাবে আলোচনা করা হলো :


গণতান্ত্রিক জনগণ ; গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্য গণতান্ত্রিক জনগণ অপরিহার্য। গণতান্ত্রিক জনগণ বলতে সেই জনসমষ্টিকে বোঝায় যারা গণতন্ত্রকে গ্রহণ করতে, রক্ষা করতে সতত উন্মুখ থাকে। এই ধরনের জনগণের অভাব থাকলে গণতন্ত্র সফল হতে পারে না। লয়েড বলেন, নাগরিকদের অলসতার জন্য গণতন্ত্র সংকটাপন্ন হতে পারে। ও গণতান্ত্রিক চেতনা : গণতন্ত্রের সাফল্য নির্ভর করে জনগণের মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনা ও ভাবধারার বিকাশের ওপর। গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন জনগণ সক্রিয় ও সচেতনভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশগ্রহণ করবে এবং সরকারের ত্রুটিবিচ্যুতিগুলির সমালোচনা করে সরকারকে সংযত রাখবে।

গণতান্ত্রিক শিক্ষার প্রসার : মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য এবং সুনাগরিকতার গুণগুলি বিকাশের জন্য প্রয়োজন গণতান্ত্রিক শিক্ষা। গণতান্ত্রিক শিক্ষা নিছক পৃথিগত শিক্ষা নয়, এ হলো সেই শিক্ষা যা ব্যক্তিকে সমাজ ও জীবনের বিভিন্ন
সমস্যা সম্পর্কে সচেতন হতে সাহায্য করে, সাহসিকতা ও সহিতার মন্ত্রে দীক্ষিত করে, ব্যক্তিগত স্বার্থপরতার পরিবর্তে বৃহত্তর কল্যাণের প্রেরণার উদ্বুদ্ধ করে

নিরক্ষরতা দূরীকরণ : গণতন্ত্রের সাফল্যের অন্যতম প্রয়োজনীয় শর্ত হলো নিরক্ষরতার অবসান। জনগণ নিরক্ষর থাকলে তাদের মধ্যে অধিকার, কর্তক ভোটদানের তাৎপর্য, রাষ্ট্রের কার্যকলাপ ইত্যাদি বিষয়ে উৎসাহের সৃষ্টি হয় না। তাই যেসব রাষ্ট্রে শিক্ষিতের হার কম সেখানে সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা প্রয়োজন। মিল (J. S. Mili) বলেছেন, সর্বজনীন ভোটাধিকারের পূর্বে সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা প্রয়োজন।
সহিমুতা: গণতন্ত্রকে সফল করতে হলে নাগরিকদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা, সহনশীলতা, সহানুভূতি ও পরমত সহিঞ্চুতার মনোভাব থাকা আবশ্যক। গণতন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল শাসনক্ষমতা লাভ করে। সংখ্যালঘিষ্ঠকে সংখ্যাগরিষ্ঠদের শাসন মেনে চলতে হবে। আবার সংখ্যাগরিষ্ঠকেও সংখ্যালঘিষ্ঠের সমালোচনার অধিকার মেনে নিতে হবে এবং তাদের মতামতকে যথাযোগ্য মূল্য দিতে হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ ও সংখ্যালঘিষ্ঠের মধ্যে এরূপ পারস্পরিক সহনশীলতা ও বোঝাপড়ার মনোভাব থাকলে তবেই গণতন্ত্র সার্থক হয়ে উঠতে পারে।

শক্তিশালী বিরোধী দল : শক্তিশালী বিরোধী দলের সমালোচনার ভয়ে সরকার সংযত থাকতে বাধ্য হয়। বিরোধী দলের এই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে স্বীকার করে ব্রিটেনে বিরোধী দলকে ‘রানির বিরোধী দল’ বলা হয়। সেখানে বিরোধী দলের ওপর কোনো আঘাতকে জনগণের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ বলে গণ্য করা হয়।

স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালত : স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালতের উপস্থিতি গণতন্ত্রের সাফল্যের একটি প্রয়োজনীয় শর্ত। নিরপেক্ষ ও নির্ভীক আদালত শাসনবিভাগ ও আইনবিভাগের স্বৈরাচারিতা রোধ করে, আইন ও সংবিধানের পবিত্রতা বজায় রাখে, নাগরিক অধিকার সুরক্ষা করে, ন্যায়বিচারের ব্যবস্থা করে। এইভাবে নিরপেক্ষ আদালত গণতন্ত্রের উৎকর্ষ বজায় রাখে।

লিখিত সংবিধান : গণতন্ত্রের সাফল্যের ব্যাপারে লিখিত সংবিধানেরও ভূমিকা থাকে। কারণ সংবিধান লিখিত হলে জনগণ তাদের অধিকার ও কর্তব্যগুলি সম্পর্কে সজাগ থাকে, আর সরকারও তার ক্ষমতার সীমা সম্পর্কে সচেতন থাকে। ফলে সরকার স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারে না। লেকি, হেনরি প্রমুখ গণতন্ত্রে লিখিত সংবিধানের আবশ্যকতাকে স্বীকার করেন।

ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ : লর্ড ব্রাইসের মতে, গণতন্ত্র সফল করতে হলে স্বায়ত্তশাসনের মাধ্যমে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটাতে হবে। স্বায়ত্তশাসনমূলক

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

bn_BDBengali
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading