গান্ধার শিল্প সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

গান্ধার শিল্প সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

গান্ধার শিল্পের পশ্চাতে ছিল ভারত-রোম বাণিজ্য। প্রাচীন গ্রিক শিল্পের প্রকরণ ভারতীয় বিষয়ে বিশেষত বুদ্ধ মূর্তি নির্মাণে প্রযুক্ত হলে এই শিল্প তার নতুনত্বে সকলকে চমকিত করে। খ্রিস্ট পূর্ব ৫০ থেকে প্রায় ৫০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত উত্তর-পশ্চিম ভারতে একটি বিশেষ ভাস্কর্যের বিকাশ হয়। এর নাম ছিল গান্ধার শিল্প।

গান্ধার শিল্প –

উত্তর-পশ্চিম ভারতের গান্ধারকে কেন্দ্র করে মূলত শক ও কুষাণ যুগে একটি নতুন ধরণের শিল্পরীতির উদ্ভব ঘটেছিল। এই শিল্পরীতিকেই গান্ধার শিল্প বলা হয়। খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দী থেকেই গান্ধার শিল্পের সূচনা হয়েছিল। তবে কুষাণ রাজাদের আনুকূল্যে গান্ধার শিল্পের উন্নতি সর্বোচ্চ হয়েছিল। এই সময় তক্ষশীলা, বামিয়ান, জালালাবাদ সহ আরও বিস্তীর্ণ অঞ্চলে গান্ধার শিল্প বিস্তার লাভ করেছিল। গান্ধার শিল্পের প্রচলন প্রায় পাঁচশত খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ছিল। ভারতের কুষাণ বংশীয় সম্রাট কনিস্ক গান্ধার শিল্পকে ভারতের বাইরে চিন, জাপান, কোরিয়া প্রভৃতি দেশে জনপ্রিয় করে তুলেছিল। গান্ধার শিল্পের নির্মাণ কৌশল ও বিষয়বস্তু সম্পর্কে আলোচনা করা হল –

গান্ধার শিল্পের নির্মাণ কৌশল :

 গান্ধার শিল্পের শিল্পীরা মূর্তি নির্মাণ করতে চুন, বালি, পোড়ামাটি ইত্যাদি ব্যবহার   করতেন। তারা মূর্তিতে গাঢ় রঙের প্রলেপ দিতেন, মূর্তির শরীরে দামি অলংকার এবং পোশাক সুন্দরভাবে অলংকৃত করতেন। গান্ধার শিল্পের অন্যতম একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল, এই শিল্পে মূর্তিগুলি খুবই মসৃণ হত এবং মূর্তিগুলির ওপর খুব সুন্দরভাবে পালিশের কাজ করা হত। মূর্তি নির্মাণের এই কৌশল গান্ধার শিল্প তথা ভারতীয় শিল্পরীতির ইতিহাসকে এক অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে।

গান্ধার শিল্পের বিষয়বস্তু :

গান্ধার শিল্পে গ্রিক, রোমান ও ভারতীয় শিল্পরীতির সংমিশ্রণে বিভিন্ন স্থাপত্য ও ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছে। এই শিল্পের মূল বিষয়বস্তু ছিল গৌতম বুদ্ধ ও বৌদ্ধ ধর্ম। গৌতম বুদ্ধের মূর্তি গুলি নির্মাণ করা হত বিভিন্ন গ্রিক দেবদেবীর অনুকরণে।

গান্ধার শিল্পে স্থাপত্যের দুটি দিক রয়েছে। যথা – (i) স্তূপ এবং (ii) চৈত্য। গান্ধার শিল্পরীতি ও নির্মাণকৌশল অনুসারে তৎকালীন সময়ে ভারতে বহু বিহার, স্তূপ ও গুহামন্দির নির্মাণ করা হয়েছিল।  গৌতম বুদ্ধের জীবনের বিভিন্ন ঘটনাকে এই শিল্প ভাস্কর্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছে।

গান্ধার শিল্পে ভারতীয় শিল্পরীতির পাশাপাশি গ্রিক, রোমান ইত্যাদি দেশের শিল্পরীতিও জায়গা করে নিয়েছিল। যার ফলে ভারতীয় শিল্পরীতিও এক অন্য মাত্রায় পৌঁছে গেছে। গান্ধার শিল্প একদিকে যেমন ভারতীয় ইতিহাসকে প্রভাবিত করেছে অন্যদিকে তেমনই তা ভারতের বাইরে পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও  (চিন, জাপান) ছড়িয়ে পড়েছে। গান্ধার শিল্প উন্নত শিল্পরীতির পরিচয় যেমন বহন করে তেমনই উন্নত হস্তশিল্পের পরিচয়ও বহন করে। 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

bn_BDBengali
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading