গ্রেট ব্রিটেন ও মার্কিনী দলব্যবস্থার তুলনামূলক আলোচনা কর।

গ্রেট ব্রিটেন ও মার্কিন দলব্যবস্থার তুলনামূলক আলোচনা

রাজনৈতিক দলব্যবস্থা একটি দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এটি গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। রাজনৈতিক দলগুলো মূলত জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জনগণের সিদ্ধান্তে প্রভাব বিস্তার করে। পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক দলব্যবস্থা রয়েছে, যার মধ্যে গ্রেট ব্রিটেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দলব্যবস্থা দুটি বিশেষভাবে আলোচিত। এই দুটি দেশের দলব্যবস্থার মধ্যে একাধিক পার্থক্য রয়েছে, এবং তাদের শাসন কাঠামো, নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি এই পার্থক্যগুলোকে প্রভাবিত করে।

গ্রেট ব্রিটেনের দলব্যবস্থা

গ্রেট ব্রিটেনের রাজনৈতিক দলব্যবস্থা একটি পার্লামেন্টারি (সংসদীয়) শাসন ব্যবস্থা। এখানে দুইটি প্রধান দল— কনজারভেটিভ পার্টি এবং লেবার পার্টি— দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রধান ভূমিকা পালন করে। পার্লামেন্টের সদস্যদের নির্বাচন সাধারণত প্রথম-অন্তকভাবে-প্রথম-জয় (First-past-the-post) পদ্ধতিতে হয়, যার ফলে একক দল সাধারণত ক্ষমতায় আসতে সক্ষম হয়। গ্রেট ব্রিটেনের দলব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য হলো এটি একক দল কর্তৃক পরিচালিত হয়, অর্থাৎ যখন একটি দল নির্বাচনে জয়ী হয়, তখন তার দল নেতা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর ফলে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে দলের শক্তিশালী ভূমিকা থাকে। এছাড়া, পার্লামেন্টের সদস্যরা একক নির্বাচনী অঞ্চল থেকে নির্বাচিত হন, যা গ্রেট ব্রিটেনের নির্বাচনী পদ্ধতিকে অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় বিশেষভাবে আলাদা করে।

১. দলগুলোর সংখ্যা: গ্রেট ব্রিটেনে দুইটি প্রধান দল প্রধান শক্তি রাখলেও, কখনও কখনও তৃতীয় দলে (যেমন, স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি বা লিবারেল ডেমোক্রেটস) কিছু প্রভাব থাকে, তবে সাধারণত দুইটি প্রধান দলই রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে।

২. সংসদীয় পদ্ধতি: এখানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যকারিতা নির্ভর করে পার্লামেন্টে তার দলের সমর্থনের ওপর। সংসদীয় পদ্ধতিতে, একক দল অধিকাংশ আসন পেলে তা সরকার গঠন করে, এবং প্রধানমন্ত্রীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

৩. নির্বাচনী পদ্ধতি: গ্রেট ব্রিটেনে “প্রথম-অন্তকভাবে-প্রথম-জয়” পদ্ধতিতে নির্বাচিত হয়। এ পদ্ধতিতে, প্রতিটি নির্বাচনী অঞ্চলে যে প্রার্থী সবচেয়ে বেশি ভোট পায়, তিনি জয়ী হন। ফলে, একক দল সহজেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে এবং সরকার গঠন করতে পারে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দলব্যবস্থা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক দলব্যবস্থা একটি প্রেসিডেনশিয়াল শাসন ব্যবস্থার অংশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুইটি দল হচ্ছে রিপাবলিকান পার্টি এবং ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, যা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে প্রধান ভূমিকা পালন করে। মার্কিন শাসন ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য হলো এটি দ্ব chambers (ডু চেম্বার) কংগ্রেসের মাধ্যমে কাজ করে, যেখানে প্রতিনিধি পরিষদ (হাউস অফ রিপ্রেজেনটেটিভস) এবং সেনেট রয়েছে। এই দুই chamber যৌথভাবে আইন প্রণয়ন করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক দলব্যবস্থা কিছুটা বিভাজনমূলক, কারণ এখানে দুইটি প্রধান দলের পাশাপাশি, স্বাধীন প্রার্থীরা কিংবা তৃতীয় দলগুলির কিছু প্রভাব থাকতে পারে, তবে মূলত দুইটি দলই রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে।

১. দলগুলোর সংখ্যা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মূলত দুটি প্রধান দল— রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট— রয়েছে, কিন্তু এখানে তৃতীয় দলগুলিও কিছুটা প্রভাব রাখতে পারে। তবে, অন্য দেশের তুলনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রধান দলের বাইরে আর কোনও দল খুব বেশি শক্তিশালী নয়।

২. প্রেসিডেনশিয়াল পদ্ধতি: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থা প্রেসিডেনশিয়াল পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সরাসরি জনগণ ভোট দেয়, এবং প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সংসদীয় ব্যবস্থার তুলনায় অনেক বেশি। প্রেসিডেন্ট স্বাধীনভাবে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হন, এবং সরকারের প্রধান হিসেবে তাঁর নেতৃত্বে কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

৩. নির্বাচনী পদ্ধতি: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের পদ্ধতি হলো ইলেকটোরাল কলেজ (Electoral College) পদ্ধতি, যেখানে প্রতিটি রাজ্য একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ইলেকটোরাল ভোট পায়। একটি দলকে নির্বাচিত করার জন্য তার ইলেকটোরাল ভোটে বেশিরভাগ সমর্থন প্রয়োজন। এই পদ্ধতি রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য একটি জটিল ও গণনা ভিত্তিক প্রক্রিয়া তৈরি করে।

তুলনামূলক আলোচনা

১. সরকার গঠনের প্রক্রিয়া: গ্রেট ব্রিটেনের পার্লামেন্টারি পদ্ধতিতে, সরকার গঠন হয় নির্বাচনে জয়ী দল থেকে, এবং প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টের অধিকাংশ সদস্যদের সমর্থন পেলে কাজ শুরু করেন। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন এবং সরকার গঠন করেন।

২. দলগুলোর সংখ্যা প্রভাব: গ্রেট ব্রিটেনের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় একক দলের ভূমিকা অনেক বেশি, তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দুটি প্রধান দলই শক্তিশালী হলেও, তৃতীয় দলও কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে স্থানীয় নির্বাচনে।

৩. নির্বাচনী পদ্ধতি: গ্রেট ব্রিটেনে প্রথম-অন্তকভাবে-প্রথম-জয় পদ্ধতিতে দল নির্বাচিত হয়, যেখানে বেশিরভাগ আসনে অধিক ভোট পাওয়া প্রার্থী জয়ী হন। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি থাকে, যেখানে এক রাজ্য থেকে জয়ী হয়ে এক দল ইলেকটোরাল ভোট পায়, যা তাদের নির্বাচনে প্রভাবিত করে।

৪. দলের আধ্যাত্মিক ভূমিকা: গ্রেট ব্রিটেনে রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণত সমাজের একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীকে প্রতিনিধিত্ব করে, যেমন কনজারভেটিভ পার্টি ব্যবসায়ীদের এবং উচ্চবিত্তদের, এবং লেবার পার্টি শ্রমিক শ্রেণী এবং নিম্নবিত্তদের প্রতিনিধিত্ব করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, দুটি প্রধান দল— রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাট— মাঝারি আয়ের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য প্রচেষ্ট চালিয়ে থাকে, তবে মাঝে মাঝে কিছু তৃতীয় দল বা স্বাধীন প্রার্থীরও কিছু ভূমিকা থাকে।

উপসংহার

গ্রেট ব্রিটেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক দলব্যবস্থার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। গ্রেট ব্রিটেনের পার্লামেন্টারি পদ্ধতিতে, সরকার একটি দলের মধ্যে থেকে গঠন হয় এবং এটি পার্লামেন্টের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেনশিয়াল পদ্ধতি এবং ইলেকটোরাল কলেজের মাধ্যমে সরকার গঠন হয়, যেখানে প্রেসিডেন্ট জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন। এছাড়া, গ্রেট ব্রিটেনে একক দলের প্রভাব বেশি থাকলেও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দুটি প্রধান দলের পাশাপাশি তৃতীয় দলও কিছুটা প্রভাব বিস্তার করতে পারে। তবে, উভয় দেশেই রাজনৈতিক দল জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে এবং তাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলে।

bn_BDBengali
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading