চতুর্বর্ষম মায়া স্রোলান্ গুণকর্মবিগ্যাস্কল” ৪(১৩) ভগবদগীতা অনুসরণের উপরের শ্লোক । “Caturvarsam maya srolan gunakarmavigāścal” 4(13) above verse following Bhagavadgitä.

Table of Contents

ভগবদগীতার শ্লোক ৪(১৩) “চতুর্বর্ণ্যং মায়াসৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ” বিশ্লেষণ:

ভগবদগীতা একটি বিশেষ ধর্মীয় এবং দার্শনিক গ্রন্থ যা শ্রীকৃষ্ণের নীতি ও শিক্ষা বর্ণনা করে। এই গ্রন্থের শ্লোক ৪(১৩) “চতুর্বর্ণ্যং মায়াসৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ” অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এতে সমাজের কাঠামো ও মানব জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে গূঢ় আলোচনা করা হয়েছে। শ্লোকটির বিশ্লেষণ করে আমরা এর অর্থ এবং গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারি।

শ্লোকটির বাংলা অনুবাদ:

“চতুর্বর্ণ্যং মায়াসৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ”

অনুবাদ: “চারটি বর্ণের বিভাজন আমার সৃষ্টি; এদের গুণ এবং কর্মের ভিত্তিতে।”

১. শ্লোকের প্রসঙ্গ

এই শ্লোকটি ভগবদগীতার চতুর্থ অধ্যায়ের ১৩ নম্বর শ্লোক, যেখানে শ্রীকৃষ্ণ তার উপদেশে বর্ণব্যবস্থার উৎপত্তি ও এর তাৎপর্য সম্পর্কে আলোচনা করেন। শ্লোকটি ধর্ম, সমাজ এবং মানব জীবনের কাঠামোর প্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করে।

২. চতুর্বর্ণ্য: চারটি বর্ণ

“চতুর্বর্ণ্যং” শব্দটি চারটি বর্ণ বা সামাজিক শ্রেণী বোঝায়। এই চারটি বর্ণ হলো:

  1. ব্রাহ্মণ: ধর্মীয়, শিক্ষাগত এবং বুদ্ধিবৃত্তিক কাজকর্মের জন্য দায়ী।
  2. ক্ষত্রিয়: সামরিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করে।
  3. বৈশ্য: ব্যবসা, কৃষি ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমের জন্য দায়ী।
  4. শূদ্র: সেবা ও সাহায্যকারী কাজকর্ম সম্পাদন করে।

এই চারটি বর্ণ সমাজের একে অপরের উপর নির্ভরশীল এবং প্রতিটি বর্ণের নিজস্ব দায়িত্ব ও কর্ম আছে।

৩. মায়াসৃষ্টং: সৃষ্টির মূল

শ্লোকের “মায়াসৃষ্টং” শব্দটির মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে যে এই বর্ণব্যবস্থা ঈশ্বরের সৃষ্টির অংশ। এটি কোনো মানুষের কৃতিত্ব নয় বরং ঈশ্বরের পরিকল্পনা ও নীতির অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। শ্রীকৃষ্ণ জানাচ্ছেন যে, সমাজের এই বিভাজন তাঁর আদেশ ও সৃষ্টির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

৪. গুণকর্মবিভাগশঃ: গুণ এবং কর্মের ভিত্তি

“গুণকর্মবিভাগশঃ” শব্দবন্ধটির মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে যে বর্ণব্যবস্থা মানুষের গুণ (প্রকৃতি বা স্বভাব) এবং কর্মের (কাজের ধরণ) ভিত্তিতে নির্ধারিত। এখানে ‘গুণ’ বলতে মানসিক এবং আধ্যাত্মিক গুণাবলীর কথা বলা হয়েছে, যেমন:

  • ব্রাহ্মণদের মধ্যে বিদ্যা, ধৈর্য, এবং সততা।
  • ক্ষত্রিয়দের মধ্যে সাহস, ন্যায়পরায়ণতা এবং নেতৃত্বের ক্ষমতা।
  • বৈশ্যদের মধ্যে অর্থনৈতিক দক্ষতা, উদ্যোগ, এবং ব্যবসায়িক প্রজ্ঞা।
  • শূদ্রদের মধ্যে সেবা, শ্রম, এবং সহানুভূতির গুণাবলী।

৫. বর্ণব্যবস্থার উদ্দেশ্য

বর্ণব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য হলো সমাজের কার্যকরী ও সুষ্ঠু পরিচালনা নিশ্চিত করা। প্রতিটি বর্ণের মানুষ তাদের নিজস্ব গুণ এবং ক্ষমতার ভিত্তিতে তাদের দায়িত্ব পালন করে সমাজের সামগ্রিক উন্নয়ন ঘটায়। এটি সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং সহযোগিতার জন্য একটি কাঠামো প্রদান করে।

৬. শ্লোকের প্রাসঙ্গিকতা

এই শ্লোকটি সমাজের কাঠামো ও তার কার্যকারিতা সম্পর্কে একটি গভীর দর্শন প্রদান করে। এটি নির্দেশ করে যে, সমাজের সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য মানুষের গুণ এবং কর্মের ভিত্তিতে তাদের ভূমিকাগুলি নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি কেবলমাত্র একটি সামাজিক শ্রেণীভেদ নয়, বরং প্রতিটি বর্ণের মানুষের বিশেষ গুণ এবং দক্ষতার স্বীকৃতি দেয়।

৭. আধুনিক প্রেক্ষাপট

যদিও এই বর্ণব্যবস্থার আদর্শ প্রাচীন সমাজের জন্য প্রযোজ্য ছিল, বর্তমান সময়ে এর বাস্তবায়ন অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। আধুনিক সমাজে, এই বর্ণভেদ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং সামাজিক ন্যায়বিচার, সাম্য ও সমানাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে, শ্লোকটির দর্শন সামাজিক কাঠামো ও মানুষের দায়িত্ব সম্পর্কে একটি মূল্যবান শিক্ষা প্রদান করে।

উপসংহার

ভগবদগীতার শ্লোক ৪(১৩) “চতুর্বর্ণ্যং মায়াসৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ” সমাজের কাঠামো ও এর কার্যকারিতা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রদান করে। এই শ্লোকটি বর্ণব্যবস্থার উদ্দেশ্য, এর সৃষ্টির মূল এবং গুণ ও কর্মের ভিত্তিতে সামাজিক শ্রেণীবিভাজন সম্পর্কে গভীর আলোচনা করে। শ্লোকটি প্রমাণ করে যে, সমাজের সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য প্রতিটি মানুষের গুণ ও দক্ষতার স্বীকৃতি অপরিহার্য। এটি আধুনিক সমাজেও একটি মূল্যবান দর্শন এবং শিক্ষা হিসেবে বিবেচিত হয়।

ব্রাহ্মণের উপনিষদীয় ধারণা আলোচনা কর

বেদ শব্দটির অর্থ কী? বেদের বিভিন্ন ধারা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর

আমাদের ব্যবহারিক জীবনে ভগবদগীতার গুরুত্ব কী

চতুর্বর্ষম মায়া স্রোলান্ গুণকর্মবিগ্যাস্কল” ৪(১৩) ভগবদগীতা অনুসরণের উপরের শ্লোক 

কর্ম এবং ভক্তি কিভাবে সম্পর্কিত

ভগবদগীতা অনুসারে কর্মযোগের অর্থ কী

আপনারমতে আরমানের টার্লি স্টেজ কি?

স্প্যানিয়ার্ডদের মধ্যে যুক্তির প্রকৃতি সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত নোট লেখ 

সপ্রাপঞ্চ ব্রাহ্মণ এবং নিস্প্রাপঞ্চ ব্রাহ্মণের মধ্যে পার্থক্য করুন

ভারতীয় দর্শনের ভিত্তি হিসেবে এল’এডাসের গুরুত্ব আলোচনা কর

ভগবদগীতায় বর্ণিত নিস্কাম কর্মের ধারণাটি আলোচনা কর।

B.A 1ST SEM MAJOR PHILOSOPHY SHORT QUESTION ANSWER 2023

bn_BDBengali
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading