চেতনাপ্রবাহমূলক উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য:
(i) বহির্জগৎ নয়, অন্তর্জগতের টানা পােড়েনই এ জাতীয় উপন্যাসের মনােনিবেশ ও প্রকাশের বিষয়।
(ii) মানব মনের বহুবিচিত্র ও অসংখ্য চিন্তা ও অনুভব, চরিত্রের যে অন্তলোক লােকচক্ষুর অন্তরালে তাকে গােচরীভূত করতে লেখক গ্রহণ করেন—স্বাতােক্তি বা ‘Interior monolagua’ এর কৌশল।
(iii) মূলত প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষ অর্তর্ভাষণ, সর্বজ্ঞ বা সর্বদর্শী বিবরণ, এবং স্বগতােক্তির মাধ্যমে ঔপন্যাসিক চেতনার প্রবাহটিকে দেখবার চেষ্টা করেন।
(iv) এই উপন্যাসে সময়ানুক্রমিক বিন্যাস (chronological order) থাকেনা। এক স্তর থেকে অন্য স্তরে চেতনা ছুটে চলে।
(v) চেতনা প্রবাহমূলক উপন্যাসে,ঔপন্যাসিক চরিত্রের অন্তর্মুখী বিশ্লেষণ দেখাতে পারেন, অতিক্রম করতে পারেন স্থান ও কালের সীমাবদ্ধতার অন্তরাল। কখনাে এগিয়ে, কখনাে পেছিয়ে চেতনা প্রবাহকে দিতে পারেন গতি।
মনস্তাত্ত্বিক এবং চেতনা প্রবাহ উপন্যাসের পার্থক্য:
মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস হল এমন এক ধরনের উপন্যাস, যে উপন্যাসে লেখক আখ্যান ভাগের চাইতে অনেক বেশি নজর দেন চরিত্রের মন, মনন, মেজাজ ও মানসিকতাকে প্রতীক সংকেতে অনুসঙ্গের এক ইঙ্গিতময় ভাষায় ফুটিয়ে তুলতে। যে উপন্যাসের অন্তর্মানস, মনের বিচিত্র গতিবিধি, কাহিনির প্রথাগত কাঠামােকে লঙ্খন করে এক অন্তর্ময় পরিবেশ রচনা করে। তাকে মনস্তত্ত্বমূলক উপন্যাস বলা হয়।
আর চেতনাপ্রবাহ উপন্যাস হল এমন এক ধরনের উপন্যাস যে চেতনা প্রবাহ রীতির উপন্যাসে চিন্তাভাবনাগুলি প্রাক-বাচনিক স্তরের যুক্তি পারম্পর্য, বাক্যগত অন্বয়, শব্দের ব্যাকরণ সম্মত ও প্রথাগত বিন্যাস ইত্যাদি গতানুগতিকতা থেকে মুক্ত। এই জাতীয় উপন্যাসে কোনও আকর্ষণীয় গল্প বা কাহিনি কিংবা একটি সুসংবদ্ধ প্লট থাকে না। এখানে কি ঘটেছে তা দেখানো নয়, কেন এবং কি জন্য ঘটেছে বা চরিত্রের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া দেখানােই এর মূল উদ্দেশ্য।
চেতনা প্রবাহমূলক উপন্যাস সময়ানুক্রমিক বিন্যাস থাকে না কিন্তু মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাসে এই বিন্যাস থাকে।
চেতনা প্রবাহতে একস্তর থেকে অন্যস্তরে চেতনা যেমন ছুটে চলে, তেমনি অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ সব এলােমেলােভাবে মিলেমিশে যায় চেতনা প্রবাহমূলক উপন্যাস। কিন্তু মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাসে তা হয় না, এখানে মন ও মেজাজের মেল বন্ধনই মুখ্য হয়ে ওঠে।