জরিপ গবেষণায় ব্যান্ডম (Random) এবং অ-র্যান্ডম (Non-random) নমুনায়নের ধরন
জরিপ গবেষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি যা সমীক্ষার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে, এবং এতে নমুনায়ন পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নমুনায়ন পদ্ধতিতে নমুনা নির্বাচন এলোমেলোভাবে (র্যান্ডম) অথবা নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে (অ-র্যান্ডম) হতে পারে। প্রতিটি পদ্ধতির সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে, এবং গবেষণার উদ্দেশ্য, জনসংখ্যার প্রকৃতি ও সময়সীমা অনুযায়ী পদ্ধতিটি নির্বাচন করা হয়।
১. র্যান্ডম নমুনায়ন (Random Sampling)
র্যান্ডম নমুনায়ন পদ্ধতিতে, প্রতিটি সদস্যের জন্য সমান সম্ভাবনা থাকে নির্বাচন হওয়ার। এর মাধ্যমে নমুনাটি জনসংখ্যার সঠিক প্রতিনিধি হিসেবে উঠে আসে। র্যান্ডম নমুনায়ন ব্যবহারের ফলে নমুনা সংক্রান্ত পক্ষপাত বা বায়াস কম থাকে, যার ফলে ফলাফল অধিক বিশ্বাসযোগ্য হয়।
র্যান্ডম নমুনায়নের ধরনসমূহ:
(i) সিম্পল র্যান্ডম স্যাম্পলিং (Simple Random Sampling) এই পদ্ধতিতে, পুরো জনসংখ্যার মধ্যে প্রত্যেক সদস্যের সমান সম্ভাবনা থাকে নির্বাচিত হওয়ার। সাধারণত একটি তালিকা থেকে এলোমেলোভাবে নমুনা নির্বাচন করা হয়। এটি সহজতম র্যান্ডম নমুনায়ন পদ্ধতি।
উদাহরণ: একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০০ ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে থেকে এলোমেলোভাবে ১০০ জন ছাত্র নির্বাচন করা।
(ii) সিস্টেমেটিক স্যাম্পলিং (Systematic Sampling) এই পদ্ধতিতে, প্রথমে জনসংখ্যার প্রথম সদস্যকে এলোমেলোভাবে নির্বাচন করা হয়, এরপর একটি নির্দিষ্ট ব্যবধানে পরবর্তী সদস্য নির্বাচিত হয়।
উদাহরণ: ১০০০ ছাত্রের মধ্যে প্রথম ছাত্রকে এলোমেলোভাবে নির্বাচন করে এবং তারপর প্রতি দশজনের পর এক জনকে নির্বাচন করা হয় (যেমন, ১, ১১, ২১, ৩১,…)।
(iii) স্ট্রাটিফাইড স্যাম্পলিং (Stratified Sampling) এই পদ্ধতিতে, জনসংখ্যাকে ভিন্ন ভিন্ন স্তরে ভাগ করা হয় এবং তারপর প্রতিটি স্তর থেকে এলোমেলোভাবে নমুনা নির্বাচিত হয়। এই পদ্ধতিতে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়।
উদাহরণ: একটি শহরের নাগরিকদের বয়সভিত্তিক শ্রেণিতে ভাগ করে প্রতিটি শ্রেণি থেকে র্যান্ডম নমুনা নির্বাচন করা।
(iv) ক্লাস্টার স্যাম্পলিং (Cluster Sampling) এই পদ্ধতিতে, জনসংখ্যাকে ছোট ছোট ক্লাস্টারে (বিভাগ) ভাগ করা হয়, এবং এলোমেলোভাবে কিছু ক্লাস্টার নির্বাচন করা হয়। এরপর নির্বাচিত ক্লাস্টারগুলো থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
উদাহরণ: একটি শহরের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে থেকে কিছু অঞ্চল (ক্লাস্টার) নির্বাচিত করা এবং তারপর সেসব অঞ্চলের সমস্ত মানুষের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা।
২. অ-র্যান্ডম নমুনায়ন (Non-random Sampling)
অ-র্যান্ডম নমুনায়ন পদ্ধতিতে, নমুনা নির্বাচনের প্রক্রিয়া এলোমেলো নয়, বরং নির্দিষ্ট নীতি বা উদ্দেশ্য অনুসরণ করে। এতে গবেষক সাধারণত একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য বা গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করেন, যার কারণে নমুনার বৈধতা কিছুটা কম হতে পারে। তবে, এই পদ্ধতিগুলি গবেষণার সময় এবং খরচের দিক থেকে অনেক সুবিধাজনক হতে পারে।
অ-র্যান্ডম নমুনায়নের ধরনসমূহ:
(i) কনভিনিয়েন্স স্যাম্পলিং (Convenience Sampling) এই পদ্ধতিতে, নমুনা নির্বাচিত হয় সহজে প্রাপ্য সদস্যদের থেকে, যারা গবেষকের কাছে সবচেয়ে সুবিধাজনক। এটি দ্রুত এবং কম খরচে নমুনা সংগ্রহের একটি পদ্ধতি।
উদাহরণ: বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের পাশে থাকা ছাত্রদের কাছে গিয়ে জরিপ করা।
(ii) প্যারট স্যাম্পলিং (Purposive Sampling) এটি এমন একটি পদ্ধতি যেখানে গবেষক নির্দিষ্ট ধরনের সদস্যদের নির্বাচন করেন, যারা গবেষণার জন্য প্রাসঙ্গিক বা গুরুত্বপূর্ণ।
উদাহরণ: একজন গবেষক যদি সুনির্দিষ্ট রোগের প্রভাব নিয়ে জরিপ করতে চান, তবে তিনি কেবল সেই রোগে আক্রান্ত রোগীদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করবেন।
(iii) স্নোবল স্যাম্পলিং (Snowball Sampling) এই পদ্ধতিতে, এক ব্যক্তি প্রথমে নির্বাচিত হন, তারপর সেই ব্যক্তি তার পরিচিতদের কাছে পাঠান, এবং তারা আবার তাদের পরিচিতদের কাছে পাঠান, এর মাধ্যমে আরও সদস্য নির্বাচন করা হয়। এটি সাধারণত গোপন বা সংকুচিত গোষ্ঠীর জন্য ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণ: একটি গোপন সোসাইটির সদস্যদের মতামত সংগ্রহ করতে প্রথম একজন সদস্যকে নির্বাচন করে তাকে অন্য সদস্যদের পরিচয় দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা।
(iv) কোটা স্যাম্পলিং (Quota Sampling) এই পদ্ধতিতে, গবেষক জনসংখ্যার কিছু শ্রেণিতে কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যা পর্যন্ত সদস্য নির্বাচন করেন। তবে, নমুনা নির্বাচনের প্রক্রিয়াটি এলোমেলো নয়, বরং গবেষকের পরিকল্পনা অনুসারে হয়।
উদাহরণ: গবেষক যদি ৫০ জন পুরুষ এবং ৫০ জন মহিলার মতামত চান, তবে তিনি তাদের থেকে নির্বাচিত সংখ্যা পূর্ণ করবেন, কিন্তু নমুনা নির্বাচন এলোমেলোভাবে হবে না।
উপসংহার
র্যান্ডম এবং অ-র্যান্ডম নমুনায়ন পদ্ধতিগুলির মধ্যে মূল পার্থক্য হলো এলোমেলোতা এবং উদ্দেশ্যমূলক নির্বাচন। র্যান্ডম নমুনায়ন পদ্ধতিতে তথ্যের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য অধিক নিখুঁতভাবে প্রতিফলিত হয়, যা গবেষণার ফলাফলকে আরও বৈধ এবং নির্ভরযোগ্য করে তোলে। অন্যদিকে, অ-র্যান্ডম নমুনায়ন পদ্ধতি সহজ এবং কম খরচে হলেও তা ফলাফলে কিছু পক্ষপাত তৈরি করতে পারে। জরিপ গবেষণায় কোন পদ্ধতি নির্বাচন করা হবে, তা নির্ভর করে গবেষণার উদ্দেশ্য, প্রাপ্য সময় এবং খরচের ওপর।