ঠান্ডা যুদ্ধের কারণ এবং প্রভাব

ঠান্ডা যুদ্ধ (Cold War) হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে 1991 সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে চলমান রাজনৈতিক, সামরিক, অর্থনৈতিক, এবং আদর্শিক প্রতিযোগিতা। এটি সরাসরি সামরিক সংঘাতের পরিবর্তে রাজনৈতিক এবং আদর্শিক সংঘাত ছিল, যার কারণে এটি “ঠান্ডা” যুদ্ধ বলা হয়।

ঠান্ডা যুদ্ধের কারণ ?

ঠান্ডা যুদ্ধের কারণগুলি নিম্নরূপ:

  1. আদর্শিক পার্থক্য: যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক পুঁজিবাদকে সমর্থন করতো, যেখানে সোভিয়েত ইউনিয়ন কমিউনিজমকে সমর্থন করতো। এই আদর্শিক পার্থক্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতার জন্ম দেয়।
  2. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল: যুদ্ধের পরে সোভিয়েত ইউনিয়ন পূর্ব ইউরোপের অনেক দেশে তাদের প্রভাব বিস্তার করে এবং কমিউনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠা করে। এটি পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলির মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করে।
  3. পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা: উভয় পক্ষই পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়ন এবং সঞ্চয় করতে শুরু করে, যা একটি অস্ত্র প্রতিযোগিতার সূচনা করে।
  4. মার্শাল প্ল্যান: যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধপরবর্তী ইউরোপ পুনর্গঠনের জন্য অর্থায়ন করে, যা সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হয়।
  5. ন্যাটো এবং ওয়ারশ চুক্তি: 1949 সালে ন্যাটো গঠন এবং 1955 সালে ওয়ারশ চুক্তির মাধ্যমে দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী সামরিক জোট গঠন হয়, যা ঠান্ডা যুদ্ধের উত্তেজনা বৃদ্ধি করে।

ঠান্ডা যুদ্ধের প্রভাব:

ঠান্ডা যুদ্ধের প্রভাবগুলি বিস্তৃত এবং গভীর ছিল:

  1. আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পরিবর্তন: বিশ্ব দুটি শক্তিশালী ব্লকে বিভক্ত হয়, যার ফলে বিভিন্ন রাষ্ট্র বিভিন্ন জোটে যোগ দেয়। এটি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তীব্র প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করে।
  2. সামরিক প্রতিযোগিতা এবং অস্ত্র বৃদ্ধি: পারমাণবিক অস্ত্র এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জামের প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পায়, যার ফলে বিশাল সামরিক বাজেট এবং গবেষণা ও উন্নয়ন খরচ বৃদ্ধি পায়।
  3. প্রক্সি যুদ্ধ: সরাসরি সংঘাত এড়াতে উভয় পক্ষই বিভিন্ন দেশে প্রক্সি যুদ্ধ পরিচালনা করে। উদাহরণস্বরূপ, কোরিয়ান যুদ্ধ, ভিয়েতনাম যুদ্ধ, এবং আফগান যুদ্ধ।
  4. অর্থনৈতিক প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা: উভয় পক্ষই অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য প্রতিযোগিতা করে। মহাকাশ প্রতিযোগিতা তার একটি উদাহরণ, যার মধ্যে 1969 সালে যুক্তরাষ্ট্রের চাঁদে পা রাখার ঘটনা অন্যতম।
  5. সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রভাব: ঠান্ডা যুদ্ধের সময়ে প্রোপাগান্ডা এবং আদর্শিক প্রচার প্রচেষ্টা উভয় পক্ষেই ব্যাপকভাবে পরিচালিত হয়, যা সমাজে গভীর প্রভাব ফেলে।
  6. অবসানের প্রক্রিয়া: 1980-এর দশকের শেষের দিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা মিখাইল গর্বাচেভের গ্লাসনস্ত (উন্মুক্ততা) এবং পেরেস্ত্রোইকা (পুনর্গঠন) নীতির মাধ্যমে ঠান্ডা যুদ্ধের উত্তেজনা কমতে শুরু করে এবং অবশেষে 1991 সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মাধ্যমে ঠান্ডা যুদ্ধের অবসান ঘটে।

উপসংহারঃ

ঠান্ডা যুদ্ধের সমাপ্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন এবং পূর্ব ইউরোপে কমিউনিস্ট শাসনের অবসানের মাধ্যমে ঘটে। এটি বিশ্বের রাজনৈতিক মানচিত্রকে পরিবর্তিত করে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।

bn_BDBengali
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading