পশ্চিমবঙ্গের ডোকরা শিল্পপ্রধানত ঝাড়খণ্ড থেকে এই শিল্প পুরুলিয়া হয়ে এই শিল্প রাজ্যের পশ্চিম প্রান্তের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। সেগুলির মধ্যে অন্যতম জেলাগুলো হল- বাঁকুড়া, বর্ধমান, পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর।
পশ্চিমবঙ্গে ডোকরা শিল্পের প্রসার ঘটে আজ থেকে কয়েকশো বছর পূর্বে। প্রধানত ঝাড়খণ্ড থেকে এই শিল্প পুরুলিয়া হয়ে এই শিল্প রাজ্যের পশ্চিম প্রান্তের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। সেগুলির মধ্যে অন্যতম জেলাগুলো হল- বাঁকুড়া, বর্ধমান, পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর। পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলা-বিকান, খাতডার লক্ষীসাগর, পুখুরিয়া, লাদনা, ছতনা, শববেড়িয়া। বর্ধমান-গুসকরার দরিয়াপুর ও পুরুলিয়ার নাডিহায় ডোকার শিল্পের প্রধান কেন্দ্র গুলি অবস্থিত। এর মধ্যে বাকুরার বিকান ও বর্ধমানের দরিয়াপুর উল্লেখযোগ্য। এই দুই জায়গার ডোকরা শিল্পের প্রসিদ্ধি জগৎজোড়া।
আদিম যুগ থেকে যে পদ্ধতি ব্যবহার করে ডোকরা তৈরি হত, আজ ও সেই একই রকম ভাবে ডোকরা তৈরি হয় ।
প্রধানত দুই ধরনের ডোকরা পাওয়া যায় । ১- ফাঁকা ডোকরা ২- ভরাট ডোকরা ।
১- ফাঁকা ডোকরার ছাঁচটি তৈরি হয় মাটি দিয়ে, তার উপর প্রাকৃতিক মোমের আস্তরন লাগানো হয় । তার উপর আবার মাটির আবরন দেওয়া হয় । এর পর এটিকে গরম করা হয়। গরমে সরু পথ দিয়ে মোম গলে বেড়িয়ে যায় আর সেপথে তরল ধাতু মিশ্রন ঢেলে দেওয়া হয় ।
২- ভরাট ডোকরার পুরো ছাঁচ তৈরি হয় প্রাকৃতিক মোম দিয়ে । তার উপর লাগানো হয় মাটি । একই পদ্ধতিতে বাকি কাজ করা হয়।
ডোকরা শিল্প লোকশিল্প হলেও বর্তমানে তা হস্তশিল্প হিসেবে চিহ্নিত। এই শিল্পে আগে শুধুমাত্র ব্যবহারিক প্রয়োজনের তাগিদে নানাধরণের উপাদান তৈরি হত, এখন তা গৃহসজ্জার ক্ষেত্রেও বহুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সেই সূত্রে ডোকরা শিল্প আন্তর্জাতিক স্তরে বাজার তৈরি করতে পেরেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিল্পীদের পুরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থাও হয়েছে।
ডোকরা শিল্পকর্মে আদিম যুগের লোকায়ত শিল্পকলার ভর এবং ঘনত্বময় গড়নের সঙ্গে পরবর্তীকালের সূক্ষ্ম অলংকরণ রীতির সুন্দর মিলমিশ ঘটেছে। এই শিল্প ঐতিহ্যানুসারী। এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকেন বিশেষ বিশেষ গোষ্ঠী। ডোকরা কামাররাই এটা তৈরি করেন। সবদিক বিচার করে বলা যায়, ডোকরা শিল্প লোকশিল্প পর্যায়ের। ডোকরা শিল্পে আদিবাসী চিত্রকলার প্রভাব অনেক বেশি। তৈরি মূর্তিগুলির হাত-পায়ের মাপের মধ্যে অনেকসময় বাস্তবের সঙ্গে সামঞ্জস্য থাকে না। তবে বাস্তবের সঙ্গে বিমূর্ততা যুক্ত হয়ে ডোকরা শিল্প দর্শকের কাছে দৃষ্টিনন্দন হয়। ডোকরা শিল্পে তৈরি হয় নানারকম জিনিস: জীবজন্তু-আঙ্গিক, যেমন বিভিন্ন আকারের ঘোড়া, হাতি, ছাগল, কচ্ছপ, বিছে, প্যাঁচা, মহিষ, হরিণ, মাছ প্রভৃতি। ঘর সাজানোর উপাদান: যেমন, মুখোশ, মাতা, চাবির গোছা, ধামসা নাচের দল, বাবা ও সন্তান প্রভৃতি। প্রয়োজনীয় জিনিস: যেমন, ধান মাপার কুনকে বা পাই, পয়সার কৌটো, লক্ষ্মীর ঝাঁপি, বালতি, ফুলদানি, ফুলের টব প্রভৃতি। ধর্ম সংক্রান্ত উপাদান: যেমন, গণেশ, লক্ষ্মী, মনসা, মনসার ঘট, দশমাথা রাবণ, কৃষ্ণ প্রভৃতি। নানা উপকরণ – কী নেই? সবকিছুই থাকে।
ডোকরা শিল্পে সমস্যাও প্রচুর। শিল্পীরা সেইসব সমস্যার কথা বলেছেন। ডোকরা শিল্পের চাহিদা বাড়লেই বাঁচবেন শিল্পীরা। আর শিল্পী বাঁচলে বাঁচবে শিল্প, সকলের সহযোগিতাতেই ডোকরা শিল্প তার ঐতিহ্য নিয়ে বাঁচবে।