দার্জিলিং পাহাড়ের লেপচা উপজাতি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত টাকা লেখো। (Write a short note about Lepcha tribe of Darjeeling Hills.)

অধুনা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটি তপশিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল লেপচা উপজাতি সম্প্রদায়। যারা মূলত দার্জিলিং, সিকিম হিমালয় এবং নেপালের আদিবাসী হিসেবে পরিচিত ছিল। বর্তমানে এদের জনসংখ্যা প্রায় 80,000 এ ছাড়াও পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম ভুটান, তিব্বত, পূর্ব নেপালের কোশি প্রদেশেও এদের বিস্তার লক্ষণীয়। অঞ্চলভেদে লেপচা জনগোষ্ঠী চারটি প্রধান স্বতন্ত্র সম্প্রদায়ের সমন্বয়ে গঠিত। এই চারটি সম্প্রদায় হল- সিকিমের রেঞ্জমে, কালিম্পং, কার্শিয়াং এবং মিরিকের দামসাংমু: নেপালের ইলাম জেলার ইলামু, দক্ষিণ-পশ্চিম ভূটানের সামতেসে এবং চুখার প্রমুখ। সিকিম হিমালয়ের লেপচাদের পন্ডিতরা এই অঞ্চলকে ‘সবচেয়ে আদিম উপজাতি’-র মর্যাদা দিয়েছেন। যদিও সংখ্যাগত দিক থেকে লেপচারা এই অঞ্চলের মোট জনসংখ্যার সাত শতাংশেরও কম। তবুও ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত দিক থেকে এই সম্প্রদায় প্রতিনিধিত্ব করে।

লেপচা জনজাতিকে ‘রং’, ‘মেরি’ এবং ‘মনপা’ নামেও উল্লেখ করা হয়ে থাকে। তবে লেপচা শব্দটিই এই অঞ্চলে এবং বাইরেও ব্যাপকভাবে পরিচিত। অনেক ঐতিহাসিকের মতে, লেপচা শব্দটি আদতে ‘লাপচে’ শব্দের একটি ইংরেজি রূপমাত্র। এ ছাড়াও শেরিং (1971) এবং ফোনিং (1987)-এর মতো পন্ডিত ব্যক্তিদের মতে, লেপচা শব্দ আসলে ল্যাপ-চয়ো’ শব্দের একটি অপভ্রংশ রূপ, যার অর্থ হল একটি উচ্চস্থান। যেখানে পশুখাদ্য ও জ্বালানি সঞ্চয় করে রাখা হয়।

পন্ডিত ব্যক্তিদের মতে, লেপচাদের ধর্ম প্রাথমিকভাবে ছিল অ্যানিমিস্ট বা প্রকৃতি উপাসককারী হিসেবে, তবে তিব্বত থেকে সিকিম হিমালয়ে বৌদ্ধধর্মের আগমনের সঙ্গে লেপচা জনজাতির মধ্যে বৌদ্ধধর্মের প্রভাব লক্ষ করা যায়। বৌদ্ধধর্মের অনুশীলন ও অধ্যয়ন এই জনজাতির দৈনন্দিন জীবনে প্রবেশ করেছিল।

লেপচা জনজাতিরা নিজেদের হিমালয়ের সন্তানরূপে বর্ণনা করেছেন। তাদের নিজস্ব ভাষা রয়েছে, যা তিব্বতি-বার্মা ভাষার বোডিশ-হিমালয় ভাষার অর্ন্তগত। লেপচাদের নিজস্ব লিপি রয়েছে যা ‘রং’ বা ‘লেপচা লিপি’ নামে পরিচিত এবং তিব্বতি লিপি থেকে উদ্ভূত। এই লিপি মূলত সতেরো ও আঠারো শতকে বিকশিত হয়েছিল। সম্ভবত সিকিমের তৎকালীন রাজা তৃতীয় চোগিয়াল-এর রাজত্বকালে থিকুং মুলুলুং নামক একজন লেপচা পণ্ডিত দ্বারা এই ভাষার বিকাশ ঘটে।

বর্তমানে লেপচা জনজাতির একটি বিশাল সংখ্যা দার্জিলিং পার্বত্য হিমালয়ের খ্রিস্টান মিশনারিদের প্রভাবে খ্রিস্টধর্ম অবলম্বন করেছেন। কিন্তু একই সঙ্গে তারা তাদের আদি ধর্ম, প্রকৃতি, উপাসনার আচার ও বৌদ্ধধর্মের রেশ দুই-ই বজায় রেখে চলেছে। পূর্বেও সপ্তদশ শতাব্দীর শেষার্ধে এবং উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে তারা বৌদ্ধধর্মে রূপান্তরিত হয়েছিল, তা সত্ত্বেও তারা আদি শামান রীতিনীতি এবং বৌদ্ধধর্মের সঙ্গে সহাবস্থান করতে সক্ষম হয়েছিল।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

bn_BDBengali
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading