নীতিবিদ্যা কি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান? আলোচনা কর।

বিজ্ঞান হচ্ছে জ্ঞানের বিশেষ শাখা। পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত সুশৃঙ্খল ও সুনির্দিষ্ট জ্ঞানকেই মূলত বিজ্ঞান। নীতিবিদ্যাকে আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলা হয়। এটি বস্তুনিষ্ঠ বা বিষয়নিষ্ঠ বিজ্ঞান নয়। নীতিবিদ্যাকে আমরা মূলত আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলে থাকি।

নীতিবিদ্যাকে আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলার কারণঃ নীতিবিদ্যাকে আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলা হয়। তবে কেন আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলা হয় তা জানতে হলে প্রথমে জানতে হবে বিজ্ঞান সম্পর্কে। বিজ্ঞান শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘Science’ যার বাংলা অর্থ বিজ্ঞান। বিজ্ঞান শব্দের অর্থ বিশেষ জ্ঞান। মূলত পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত সুশৃঙ্খল জ্ঞানই হচ্ছে বিজ্ঞান। আমরা নীতিবিজ্ঞানকে মূলত আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলে থাকি। বিপরীতক্রমে নির্ধারিত আদর্শের আলােকে কোনাে কিছুর মূল্যায়নও এর লক্ষ্য। আমাদের মানব অভিজ্ঞতার জগতে এ ধরনের আদর্শ কাজ করে। যথা- সত্য, সৌন্দর্য এবং শুভ বা ভালাে। সত্য আমাদের জ্ঞানমূলক প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। সৌন্দর্য আমাদের অনুভূতির সঙ্গে জড়িত এবং শুভ বা ভালাে আমাদের ইচ্ছার সঙ্গে জড়িত। সুতরাং নীতিবিজ্ঞান হিসেবে বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞান নয়। এটি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান। ভালােত্বের আদর্শ নিয়ে কাজ বা আচরণের মূল্য বিচার করাই এর লক্ষ্য।

বিশেষজ্ঞদের মতামতঃ নীতিবিদ্যাকে যারা আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান হিসেবে মনে করেন, তারা হলেন উইলিয়াম লিলি, অধ্যাপক ম্যাকেঞ্জি প্রমুখ।

উইলিয়াম লিলির মতামতঃ উইলিয়াম লিলির মতে, নীতিবিদ্যা আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান। নীতিবিদ্যা হলাে সমাজে বসবাসরত মানুষের আচরণ সম্পর্কিত বিদ্যা। নীতিবিদ্যার অন্যতম লক্ষ্য বা অন্যতম আলােচ্য বিষয় হচ্ছে সামাজিক আদর্শের যথার্থ প্রকৃতি সম্পর্কিত বিষয়। এদিক থেকে বলা যায় নীতিবিদ্যা আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান।

অধ্যাপক ম্যাকেঞ্জির মতামতঃ অধ্যাপক ম্যাকেঞ্জি নীতিবিজ্ঞানকে আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলার পক্ষপাতি। নীতিবিদ্যার আলােচ্য বিষয় নৈতিক ঘটনা। এই বিদ্যা নৈতিক ঘটনার নিরীক্ষণ ও শ্রেণিবিন্যাস করে এবং নৈতিক আদর্শের আলােকে নৈতিক অবধারণ গঠন করে। ফলে নীতিবিজ্ঞান অন্যান্য বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞানের মত নয়। এটি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান।

নীতিবিজ্ঞান আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান। এটি বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞান নয়। নীতিবিদ্যা আচরণ সম্পৰ্কীয় বিজ্ঞান। নৈতিক আদর্শের মানদণ্ডের আলােকে সমাজে বসবাসরত মানুষের আচরণ মূল্যায়ন করে। সুতরাং নীতিবিদ্যাকে বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞান না বলে আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলা যায়। কেননা, নৈতিক আদর্শের আলােকে মানুষের আচরণ মূল্যায়ন করে থাকে।