ন্যায়দর্শন অনুসরণে ‘বিতণ্ডা’-র লক্ষণ:
ন্যায়দর্শন (Nyaya philosophy) অনুসারে “বিতণ্ডা” (Vitanda) একটি বিশেষ ধরণের বিতর্ক যেখানে বিতর্ককারী পক্ষের প্রধান উদ্দেশ্য হল প্রতিপক্ষের যুক্তি খণ্ডন করা, নিজের যুক্তি বা অবস্থান প্রমাণ করা নয়। এটি সাধারণত ধ্বংসাত্মক বা প্রতিহিংসামূলক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। ন্যায়দর্শন বিতণ্ডাকে নিন্দনীয় তর্কবিতর্ক হিসেবে দেখেছে। এখানে “বিতণ্ডা”র লক্ষণগুলি আলোচনা করা হলো:
ন্যায়দর্শন অনুসরণে ‘বিতণ্ডা’-র লক্ষণগুলি আলোচনা কর?
নির্দিষ্ট অভিপ্রায়হীনতা:
- বিতণ্ডার মূল লক্ষ্য নিজের দৃষ্টিভঙ্গি বা অবস্থান প্রমাণ করা নয়।
2. বিতর্ককারী শুধুমাত্র প্রতিপক্ষের যুক্তি খণ্ডন করায় আগ্রহী।
প্রমাণের অভাব:
- বিতণ্ডায় প্রমাণ বা যুক্তির প্রয়োগ খুবই কম বা একেবারেই থাকে না।
- বিতর্ককারী সাধারণত তার অবস্থানের পক্ষে কোনো প্রমাণ বা যুক্তি প্রদান করে না।
প্রতিপক্ষের ত্রুটি অনুসন্ধান:
- বিতণ্ডায় প্রধান কাজ হল প্রতিপক্ষের যুক্তির ত্রুটি বা দুর্বলতা খুঁজে বের করা।
2. বিতর্ককারী প্রতিপক্ষের বক্তব্যের কোন অংশটি ভুল বা অসংলগ্ন তা প্রমাণ করতে চায়।
আক্রমণাত্মক মনোভাব:
- বিতণ্ডায় বিতর্ককারী সাধারণত আক্রমণাত্মক মনোভাব পোষণ করে।
2. তার প্রধান উদ্দেশ্য প্রতিপক্ষকে হেয় করা বা দুর্বল প্রমাণ করা।
উপসংহারহীনতা:
- বিতণ্ডা সাধারণত কোনো স্থায়ী বা নির্দিষ্ট উপসংহারে পৌঁছায় না।
2. বিতর্কটি ফলপ্রসূ হয় না কারণ কোনো পক্ষই নিজের অবস্থান প্রমাণ করতে আগ্রহী নয়।
নির্মাণাত্মক সমাধানের অভাব:
- বিতণ্ডায় কোনো গঠনমূলক সমাধান বা নতুন জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্য থাকে না।
2. এটি মূলত প্রতিপক্ষকে পরাজিত করার একটি পদ্ধতি।
বিতণ্ডার উদাহরণ:
ধরা যাক, দুটি পক্ষ একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে বিতর্ক করছে। একটি পক্ষ প্রমাণ এবং যুক্তির মাধ্যমে তার অবস্থান প্রমাণ করার চেষ্টা করছে, অথচ অন্য পক্ষের মূল উদ্দেশ্য শুধুমাত্র প্রথম পক্ষের যুক্তির ত্রুটি বের করা এবং খণ্ডন করা। দ্বিতীয় পক্ষ তার নিজের কোনো যুক্তি বা প্রমাণ প্রদান না করেই প্রথম পক্ষের যুক্তির ত্রুটিগুলোর উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করছে। এটি একটি বিতণ্ডার উদাহরণ হতে পারে।
বিতণ্ডার নিন্দনীয়তা:
ন্যায়দর্শন অনুসারে, বিতণ্ডা নিন্দনীয় কারণ এটি সত্য ও জ্ঞান অনুসন্ধানের পথে বাধা সৃষ্টি করে। বিতণ্ডার মাধ্যমে জ্ঞানার্জন বা সত্য উদ্ঘাটনের পরিবর্তে কেবল প্রতিপক্ষকে হেয় করার উদ্দেশ্যই থাকে। এটি একটি অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয় বিতর্কের রূপ যা জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্য পূরণ করে না।
উপসংহার:
ন্যায়দর্শন অনুসারে, বিতণ্ডার লক্ষণগুলি আমাদের দেখায় যে এটি একটি ধ্বংসাত্মক বিতর্কের রূপ যেখানে কোনো পক্ষই সত্য উদ্ঘাটন বা জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে নয়, বরং প্রতিপক্ষের যুক্তি খণ্ডন ও হেয় করার জন্য ব্যস্ত থাকে। এটি গঠনমূলক বিতর্কের বিপরীত এবং জ্ঞান ও প্রমাণের মাধ্যমে সত্য অনুসন্ধানের পথে বাধা সৃষ্টি করে।