ন্যায়দর্শন অনুসরণে ‘সংশয়’
ন্যায়দর্শন হল ভারতের ষড়দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা মূলত যুক্তি, বিচার এবং জ্ঞানতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করে। ন্যায়দর্শনে ‘সংশয়’ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়।
সংশয় (Samsaya) অর্থ:
সংশয় অর্থ সন্দেহ বা দ্বিধা। এটি তখন উদ্ভূত হয় যখন কোনো বিষয় নিয়ে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয় না এবং বিভিন্ন সম্ভাবনার মধ্যে কোনটি সঠিক তা জানা যায় না।
ন্যায়দর্শনে সংশয়:
ন্যায়দর্শনে সংশয়কে চারটি ভিন্ন উপায়ে বর্ণনা করা হয়েছে, যেগুলো হলো:
- সংশয়: যা নির্ধারণ করতে পারে না কোনটি সঠিক বা সত্য।
- সন্দেহ: দুটি বা ততোধিক বিকল্পের মধ্যে সিদ্ধান্তহীনতা।
- সংশয়: সন্দেহ এবং জ্ঞানের মধ্যে একটি ধাপ।
- দ্বিধা: কোনো বিষয় নিয়ে মনের অস্থিরতা।
সংশয়ের প্রকারভেদ:
ন্যায়দর্শনে সংশয়কে বিভিন্ন প্রকারে ভাগ করা হয়েছে:
- স্বরূপ সংশয়: একটি বিষয় সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকা বা বিষয়টির প্রকৃতি সম্পর্কে সংশয়।
- বিধি সংশয়: একটি কার্যক্রম বা প্রক্রিয়ার নিয়ম বা বিধি সম্পর্কে সংশয়।
- পর্যায়ী সংশয়: কোনো বিষয়ের বিভিন্ন পর্যায় সম্পর্কে সংশয়।
সংশয়ের কারণ:
ন্যায়দর্শন অনুযায়ী, সংশয়ের কারণগুলি হলো:
- প্রমাণের অভাব: যথাযথ প্রমাণ বা তথ্য না থাকা।
- বিরুদ্ধ প্রমাণ: পরস্পর বিরোধী তথ্য বা প্রমাণ।
- অপর্যাপ্ত জ্ঞান: পর্যাপ্ত জ্ঞান বা তথ্যের অভাব।
- সমান সম্ভাবনা: দুটি বা ততোধিক বিকল্পের মধ্যে সমান সম্ভাবনা।
সংশয়ের গুরুত্ব:
ন্যায়দর্শনে সংশয় একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, কারণ এটি জ্ঞান অর্জনের একটি প্রাথমিক ধাপ। সংশয় থেকে মুক্তি পেতে প্রমাণ বা যুক্তির প্রয়োজন হয়। সংশয়ের মাধ্যমে আমরা সত্য এবং মিথ্যা বা সঠিক এবং ভুলের মধ্যে পার্থক্য করতে শিখি।
সংশয় নিরসন:
ন্যায়দর্শনে সংশয় নিরসনের প্রক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। এর জন্য প্রধানত চারটি প্রমাণ বা ‘প্রমাণ’ ব্যবহৃত হয়:
- প্রত্যক্ষ (Pratyaksha): সরাসরি ইন্দ্রিয়-গ্রাহ্য জ্ঞান।
- অনুমান (Anumana): যুক্তির মাধ্যমে জ্ঞান।
- উপমান (Upamana): তুলনা ও অনুরূপতা থেকে জ্ঞান।
- শব্দ (Shabda): বিশ্বস্ত সূত্র থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান।
সংশয় নিরসনের মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত জ্ঞান বা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি এবং এটি জ্ঞানার্জনের প্রক্রিয়াকে সমৃদ্ধ করে।