পাঠ পরিকল্পনা বলতে বোঝায় শিক্ষকের সুবিধার জন্য শিক্ষক কর্তৃক বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রণয়ন করা এমন এক ধরনের পরিকল্পনা যাতে উল্লেখ থাকে নির্ধারিত লক্ষ্য অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের কী শিখতে হবে বা শিক্ষার্থীদেরকে কী শেখাতে হবে; নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের উপায় অর্থাৎ শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষক কোন পন্থা, পদ্ধতি ও কৌশল ব্যবহার করে
পাঠ পরিকল্পনা উন্নতি সাধনের নীতি:
সুষ্ঠু ও পদ্ধতিগত পাঠ পরিকল্পনা প্রণয়নের উপর নির্ভর করে পাঠের শিখনফল অর্জন। কী শেখাবেন, কীভাবে শেখাবেন, কাকে শেখাবেন, কেন শেখাবেন; এই প্রশ্নগুলো সামনে রেখে শিক্ষক পাঠ পরিকল্পনা করে থাকেন। কার্যকর পাঠ পরিকল্পনার মাধ্যমে সময়ের সঠিক ব্যবহার করে একজন শিক্ষক কাক্সিক্ষত ফলাফল অর্জনে সক্ষম হন। আমরা বর্তমানে শ্রেণিকার্যক্রমে যে পাঠ পরিকল্পনা অনুসরণ করি তা জার্মান শিক্ষাবিদ ও দার্শনিক জোহান ফ্রেইডরিক হার্বার্টের (Johann Freidrich Herbart, 1776-1841) মতবাদভিত্তিক পাঠ পরিকল্পনা। হার্বার্ট দার্শনিক এবং শিক্ষাবিদ ছিলেন বলেই তিনি বিশ্বাস করতেন পাঠদান ও পাঠগ্রহণে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর পারস্পরিক সম্পর্ক মানসিক পরিবেশের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই পাঠ পরিকল্পনা করার সময় শিক্ষকের অবশ্যই শ্রেণির শিক্ষার্থী সম্পর্কিত সার্বিক ধারণা থাকতে হবে। শিক্ষার্থীর মেধা, চাহিদা, বয়স, আগ্রহ, সামর্থ্য, প্রবণতা, রুচি, ঝোঁক ইত্যাদি জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণের সুযোগ থাকতে হবে পাঠ পরিকল্পনায়।পাঠ পরিকল্পনা প্রণয়ন করে পাঠদান করা হলে অনেক রকম সুবিধা পাওয়া যায়। পাঠ পরিকল্পনা প্রণয়ের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদেরকে সুচিন্তিতভাবে পাঠদান করে শিখনফল অর্জন সহজতর করা
সমর্থ করে তোলা:
পাঠের লক্ষ্যই হলো শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিখনফল অর্জন। শিক্ষক শিখনফল অর্জনের উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখে পাঠ পরিকল্পনাটি সুচিন্তিতভাবে প্রণয়ন করলে পাঠের প্রতিটি উদ্দেশ্য কার্যকরভাবে অর্জনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সমর্থ হয়ে ওঠে।
নিয়ন্ত্রিত ও সংগঠিত করা:
পাঠ কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রিত ও সংগঠিত করা পাঠ পরিকল্পনার একটি অন্যতম উদ্দেশ্য। পাঠের বিভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশল ব্যবহারের মাধ্যমে পাঠকে নিয়ন্ত্রিত ও সংগঠিত করা যায়। পাঠটি নিয়ন্ত্রিত ও সংগঠিত হলে শিক্ষার্থীরা সহজেই পাঠের উদ্দেশ্য অর্জনে সক্ষম হবে। এটিও শিক্ষকের জন্য অনেক বড়ো একটি সুবিধা।
আকর্ষণীয় করা:
বিভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশল ব্যবহার করে এবং উদাহরণের মাধ্যমে শিক্ষক শিখন-শেখানো কার্যক্রমকে আকর্ষণীয় করে তোলা সম্ভব। পাঠদান আর্কষণীয় হলে শিক্ষার্থীরা পাঠে আনন্দ পাবে এবং শিখনফল অর্জন অনেক বেশি কার্যকর ও স্থায়ী হবে।
ধারাবাহিকতা রক্ষা করা: পাঠদান কার্যক্রমে ধারাবাহিকতা না থাকলে শিখন উদ্দেশ্যের যথার্থতা ব্যাহত হবে। শিক্ষক পূর্ববর্তী ও পরবর্তী পাঠের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে পাঠ পরিকল্পনাটি করবেন। তাহলে পাঠের পুনরাবৃত্তি ঘটবে না।
কাজ সুনির্দিষ্ট করা:
অংশগ্রহণমূলক শিখনে শ্রেণি কার্যক্রমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর কাজ সুনির্দিষ্ট থাকতে হবে। পাঠের শিখনফল অর্জনে এটি অত্যন্ত জরুরি। পাঠ পরিকল্পনা তৈরির সময় এই বিষয়টিতে খেয়াল রাখা উচিৎ, এতে শিক্ষকের কাজ আরও সহজ হয়।
ত্রুটি-বিচ্যুতি চিহ্নিত ও দূরীকরণ: শিখনফল অর্জনে ক্ষেত্রে ত্রুটি-বিচুতি চিহ্নিত করে তা দূর করার ব্যবস্থা করতে হবে। আর এটি একটি সুচিন্তিত পাঠ পরিকল্পনায় মাধ্যমে সহজেই করা যায়।
সময় নির্ধারণ: পাঠ পরিকল্পনায় প্রতিটি ধাপ, উপধাপ ও কাজের জন্যে ব্যয়িত সময়ের উল্লেখ করা থাকে। ফলে কাজের ব্যাপ্তি অনুযায়ী শিক্ষক নির্দিষ্ট বা নির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থীদেরকে পাঠদান করতে সক্ষম হন।