পিতৃতান্ত্রিক এবং গণতান্ত্রিক সামাজিক নিয়ন্ত্রণ: প্রয়োগ পদ্ধতির পার্থক্যকে কেন্দ্র করেও সামাজিক নিয়ন্ত্রণকে দু’ভাগে বিভক্ত করা হয়ে থাকে, তা হলো-পিতৃতান্ত্রিক এবং গণতান্ত্রিক সামাজিক নিয়ন্ত্রণ। লক্ষ্য করা যায়, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের মুখ্য ব্যক্তি দ্বারা একধরনের নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সমাজে প্রচলিত থাকে। পরিবারে যেমন পিতার নিয়ন্ত্রণ, তেমনি কর্মক্ষেত্রে মালিকের নিয়ন্ত্রণ, ধর্মীয় ক্ষেত্রে পুরোহিতের নিয়ন্ত্রণ, রাজনৈতিক দলে নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি পিতৃতান্ত্রিক সামাজিক নিয়ন্ত্রণের অধীন। এই ধরনের নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি মূলত একমুখী হয়ে থাকে।
অপরদিকে, গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি মূলত আলাপ-আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর হয়। এখানে সমাজের বৃহত্তর অংশের মতামত প্রাধান্য পেয়ে থাকে। তাছাড়া এখানে নিয়ন্ত্রণগুলি চাপিয়ে দেওয়া হয় না। আধুনিক সমাজের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর পারস্পরিক আচরণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সাধারণত গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অধিকতর কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। যেমন-শ্রমিক-মালিক এর যৌথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রত্যক্ষ ফলাফল পাওয়া যায় বলে প্রমাণিত হয়েছে। তবে যুদ্ধবিগ্রহ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ইত্যাদি আপদকালীন পরিস্থিতিতে পিতৃতান্ত্রিক পদ্ধতি অধিকতর গ্রহণযোগ্য এবং ফলদায়ী বলে ধরে নেওয়া হয়।
সুতরাং বলা যায়, সমাজের বিশেষ পরিস্থিতিতে এবং সমাজ বিকাশের বিভিন্ন স্তরে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের প্রকরণ তত্ত্বেও পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। সাবেকি সমাজে ব্যক্তির আচার-আচরণ যেভাবে নিয়ন্ত্রিত হতো, আধুনিক সমাজে তা কখনো সম্ভব হয় না। তাই অবস্থান্তরের ফলে বর্তমান সমাজে নতুন নতুন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি দেখা যায়, যা পরিবর্তিত সমাজকাঠামো ও সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে অধিক হারে কার্যকর বলে মনে করা হয়। এই প্রক্রিয়া আগামী দিনেও চলতে থাকবে মূলত সমাজের ধারাবাহিকতার স্বার্থেই।