পুণ্ড্র জনগণ :
প্রাচীন বঙ্গভূমির একটি গুরুত্বপূর্ণ জনপদ ছিল পুণ্ড্রবর্ধন। ‘পুত্র’ শব্দটি ভৌগোলিক ক্ষেত্র এবং জনজাতি উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। তবে পূণ্ড জনজাতির প্রকৃত পরিচয় নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। এই পুণ্ড্র রাজ্যের অধিবাসী পুণ্ড্র জনজাতির উৎপত্তি প্রসঙ্গে প্রাচীন গ্রন্থাদিতে বিভিন্ন মতবাদ ব্যক্ত হয়েছে। ‘পৌণ্ড্র’ শব্দের অর্থ হল ইক্ষু বা আখ। ‘পুণ্ড্র’ শব্দের সর্বপ্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ‘ঐতরেয় ব্রাহ্মণ’-এ। এই গ্রন্থে বর্ণিত কাহিনি অনুযায়ী, ঋষি বিশ্বামিত্রের পালিত পুত্র সুনহসেপা-কে স্বীকৃতি দানে অগ্রাহ্য হলে বিশ্বামিত্র তাঁর পঞ্চাশ পুত্রকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যে তারা পরজন্মে অল্প, পুণ্ড্র, শবর, পুলিন্দ, মুতিব-এর ন্যায় অন্ত্যজ বংশে জন্মগ্রহণ করবে। সংখ্যায়ন শৌত সূত্রেও প্রায় একই রকম কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। মহাভারতে পুণ্ড্র এবং তাঁর ভ্রাতৃবৃন্দকে দস্যু বা ম্লেচ্ছ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। মনুসংহিতা, বিষ্ণুপুরাণ, মেধাতিথির টীকা অনুসারে পুণ্ড্র জাতি বা পৌন্ড্রিকরা ক্ষত্রিয় বংশজাত হলেও দীর্ঘদিন বৈদিক সংস্কৃতির বাইরে থাকা এবং বৈদিক রীতিনীতি পালন না করার কারণে শূদ্র শ্রেণিতে পরিণত হয়। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে, পৌন্ড্রিকদের শংকর জাতি বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বৈশ্য পিতা এবং শৌণ্ডিক মাতার মিলনজাত সন্তানরা হল পুণ্ড্র জাতি। মহাকাব্য এবং পুরাণে পুণ্ড্রদের পৌরাণিক রাজা পুরু-র তেইশতম উত্তরসূরি বলা হয়েছে। বিষ্ণুপুরাণ এবং শ্রীমদ্ভাগবত-এ পুণ্ড্রদের অনু’র তেরোতম বা চোদ্দোতম উত্তরসূরি বলা হয়েছে। তবে এই ব্যাখ্যাগুলি অপেক্ষাকৃত পরবর্তীকালের বিভিন্ন গ্রন্থাদিতে বর্ণিত ব্যাখ্যা অনুযায়ী উপলব্ধি করা যায় যে, বৈদিক আর্যায়িত সংস্কৃতির বাইরেই পুণ্ড্র জনজাতির উদ্ভব হয়েছিল।