“প্রকৃত ইচ্ছা” এবং “সাধারণ ইচ্ছা” বলতে আপনি কী বোঝেন?
“প্রকৃত ইচ্ছা” এবং “সাধারণ ইচ্ছা” এই দুটি ধারণা দার্শনিক বা রাজনৈতিক তত্ত্বে ব্যবহৃত হয়, যেখানে মানুষের ইচ্ছা বা উদ্দেশ্য বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে ভিন্নভাবে বর্ণিত হয়।
১. প্রকৃত ইচ্ছা (True Will)
“প্রকৃত ইচ্ছা” বলতে সেই ইচ্ছাকে বোঝানো হয় যা একজন ব্যক্তি বা জনগণ তাদের বাস্তব, গভীর ও যুক্তিসঙ্গত উদ্দেশ্য হিসেবে অনুভব করে। এটি সাধারণত একজন মানুষের প্রকৃত আত্ম বা মৌলিক সত্তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, যা তার আদর্শ, নৈতিকতা এবং দীর্ঘমেয়াদী কল্যাণের প্রতি মনোযোগী।
প্লেটো, হেগেল বা অন্যান্য দার্শনিকরা এই “প্রকৃত ইচ্ছা”-এর ধারণা নিয়ে আলোচনা করেছেন। প্লেটো, উদাহরণস্বরূপ, বিশ্বাস করতেন যে একজন মানুষের প্রকৃত ইচ্ছা তার আত্মার অন্তর্গত সত্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত। এই ইচ্ছা কখনও অস্থায়ী বা ক্ষণস্থায়ী আনন্দের প্রতি আকৃষ্ট হয় না, বরং এটি মহৎ উদ্দেশ্য এবং ন্যায়ের প্রতি নিবেদিত থাকে।
এটি একটি ধরনের “আধ্যাত্মিক ইচ্ছা” যা বাস্তবতার গভীরে প্রোথিত থাকে, এবং একজন ব্যক্তি যখন তার প্রকৃত ইচ্ছার অনুসরণ করে, তখন সে তার জীবনের সর্বোচ্চ কল্যাণ অর্জন করতে পারে।
২. সাধারণ ইচ্ছা (Common Will)
“সাধারণ ইচ্ছা” হলো সেই ইচ্ছা যা একটি বৃহত্তর জনগণের, সমাজ বা গ্রুপের মধ্যে সাধারণভাবে অভ্যস্ত বা গৃহীত হয়। এটি একটি সামাজিক বা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ব্যবহৃত হয়, যেখানে এক বা একাধিক মানুষের ইচ্ছা সমষ্টিগতভাবে মিলে একটি সাধারণ উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য তৈরি করে।
সাধারণ ইচ্ছা সাধারণত সেই ইচ্ছা নয় যা একক ব্যক্তির গভীর বা অন্তর্নিহিত আদর্শের প্রতিফলন; বরং এটি জনগণের মধ্যে একটি “কমন সেন্স” বা সহমত তৈরি করা, যা কখনও কখনও সমষ্টিগত চাপ, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ, বা সামাজিক নিয়মের দ্বারা গঠিত হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, একটি গণতান্ত্রিক সমাজে, “সাধারণ ইচ্ছা” হলো জনগণের সর্বসম্মত ইচ্ছা বা নীতি, যা রাষ্ট্রের কার্যক্রম এবং আইন-নীতির ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে এটি সবসময় প্রকৃত ইচ্ছার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নাও হতে পারে, কারণ জনগণের ইচ্ছা অনেক সময় স্বার্থপর বা ক্ষণস্থায়ী হয়ে থাকতে পারে।
উদাহরণ ও তুলনা:
ধরা যাক, একটি জনগণ একটি রাজনৈতিক দলের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে, কারণ তারা মনে করে সেই দলটি তাদের বর্তমান প্রয়োজন পূরণ করতে পারে (সাধারণ ইচ্ছা)। তবে, যদি সেই দলের নীতি মানুষের দীর্ঘমেয়াদী কল্যাণের জন্য ক্ষতিকর হয়, তবে এটি প্রকৃত ইচ্ছার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, কারণ প্রকৃত ইচ্ছা হলো দীর্ঘমেয়াদী, নৈতিক এবং আত্মিক উন্নতির জন্য কাজ করা।
একইভাবে, একজন ব্যক্তি তার জীবনে সহজ এবং তাত্ক্ষণিক সুখ বা সাফল্য চাওয়ার জন্য কিছু সিদ্ধান্ত নেয় (সাধারণ ইচ্ছা), কিন্তু তার প্রকৃত ইচ্ছা হতে পারে একটি গভীর আত্মিক উন্নয়ন বা বৃহত্তর উদ্দেশ্য অর্জন করা যা তার দীর্ঘমেয়াদী কল্যাণের জন্য উপকারী।