প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের আলোকে ‘নব্যপ্রস্তরকালীন বিপ্লব’ বলা কতটা যুক্তিসংগত?

প্রস্তর যুগের তৃতীয় ও শেষ পর্যায় হল নব্যপ্রস্তর যুগ। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব 4000 অব্দে ভারতে এই যুগের সূচনা হয়। এ যুগের মানুষ বড়ো হাতিয়ারের পরিবর্তে মসৃণ ছোটো আকারের পাথরের হাতিয়ার ব্যবহার করত। এই যুগের মানুষ খাদ্য সংগ্রাহক থেকে খাদ্য উৎপাদকে পরিণত হয়। সেই কারণে বন্য মানুষ গোষ্ঠীবদ্ধ সমাজজীবন গড়ে তুলতে সমর্থ হয়। ভ্রাম্যমান, গুহাবাসী মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে স্থায়ী বসতি গড়ে তুলতে আগ্রহী হয়ে ওঠে।

নব্যপ্রস্তর যুগ ছিল কৃষিকাজের বিকাশের যুগ। কৃষিকাজের প্রয়োজনে নিড়ানি ও কাস্তের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। কৃষির প্রসার মানবসমাজের খাদ্যের জোগানকে নিশ্চিত করে দেয়। এ যুগের অভাবনীয় আবিষ্কার হল মৃৎশিল্প। মেহেরগড়ে মৃৎশিল্পের বিকাশ লক্ষণীয়।

কুমোরের চাকার আবিষ্কার ও এ যুগের আর এক লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য। পোড়ামাটির মূর্তি আবিষ্কার মেহেরগড় সভ্যতার একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল। তারা আগুন জ্বালাতে শেখে। এ ছাড়া গৃহনির্মাণ শিল্পের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে। তাদের কৃষি ফসলের মধ্যে লক্ষণীয় ছিল-ধান, গম, যব, বার্লি ইত্যাদি। নলখাগড়ার তৈরি ঝুড়ি এবং বস্ত্রবয়ন শিল্পের পরিচয় পাওয়া যায়।

তুলো ও পশমের বস্ত্র এ যুগে ব্যবহৃত হত। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৪000 থেকে 4000 অব্দ পর্যন্ত সময়কালকে ‘নতুন পাথরের যুগ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। নব্যপ্রস্তর যুগে মানুষের জীবনযাত্রার অভাবনীয় উন্নতি ঘটেছিল।

এইসময় মানুষ যাযাবার জীবনযাপন ত্যাগ করে স্থায়ীভাবে বসতবাড়ি নির্মাণ করেছিল। মানুষ খাদ্য সংগ্রহকারী থেকে স্থায়ী বসবাসকারীতে পরিণত হয়েছিল। কৃষিকাজের আবিষ্কার, চাকার আবিষ্কার এবং আগুনের আবিষ্কার নব্যপ্রস্তর যুগে এক বিপ্লব নিয়ে এসেছিল। চাকার আবিষ্কার যেমন মানুষের জীবনে গতি এনেছিল, একইভাবে চাকার ব্যবহার করে মানুষ মৃৎপাত্র তৈরি করতে শিখেছিল। সব মিলিয়ে বলতে গেলে চাকার আবিষ্কারের ফলে মানুষের জীবনে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল। নব্যপ্রস্তর যুগের এই অভাবনীয় অগ্রগতির কারণে এই সময়কাল ‘নব্যপ্রস্তরকালীন বিপ্লব’ নামে পরিচিত।

bn_BDBengali
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading