মাদ্রাজি শিল্প বা মাদ্রাজি সংস্কৃতি: প্যাটারসন সর্বপ্রথম মাদ্রাজ অঞ্চলের পুরোনো প্রস্তর যুগের প্রচুর নিদর্শন আবিষ্কার করেন। 1932 সালে আবিষ্কৃত হয় মাণ্যকারনাই প্রত্নক্ষেত্রটি। প্যাটারসন ও কুয়স্বামী, ‘ভাদামাদুরাই’ এবং ‘অভিরামপত্তম’ নামক দুটি প্রত্নক্ষেত্র থেকে বহু হাতিয়ার সংগ্রহ করেন। মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রচেষ্টায় উদ্ঘাটিত হয় শ্রীপরনমগুরু নামক একটি প্রত্নক্ষেত্র। এইসব ক্ষেত্র থেকে মাদ্রাজ সংস্কৃতির হাতিয়ার আবিষ্কৃত হয়েছে। তবে মাদ্রাজ সংস্কৃতির প্রধান কয়েকটি কেন্দ্র হল-ভাদামাদুরাই, অভিরামপক্কম ও গুডিয়ান।
ভাদামাদুরাই: মাদ্রাজ থেকে 42 কিমি উত্তর-পশ্চিমে ভাদামাদুরাই হল এক সুপ্রাচীন প্রাগৈতিহাসিক প্রত্নক্ষেত্র। হাতিয়ারের বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে এই কেন্দ্রের তিনটি পর্যায় চিহ্নিত হয়েছে-
ভাদামাদুরাই-1 পর্যায়ের হাতিয়ারগুলি গোলাশ বা বোল্ডার কংগ্লোমারেট থেকে পাওয়া গেছে। যেগুলির মধ্যে অন্তস্তল প্রস্তরের হাত-কুঠারই প্রধান এবং যেগুলিতে মসৃণতা ও সাদা রঙের মলিনিমা দেখা যায়। তবে কর্তরি, ছেদনী, চাঁছনি ইত্যাদি হাতিয়ারও পাওয়া গেছে।
• ভাদামাদুরাই-2 পর্যায়ের হাতিয়ারগুলিতে মাকড়া পাথরের সংস্পর্শজনিত রক্তবর্ণ মলিনিমা দেখা যায়। এই পর্যায়ের আয়ুধগুলি শল্ক প্রস্তর উন্নত ও লম্বা ধরনের।
• ভাদামাদুরাই-ও পর্যায়ের হাতিয়ারগুলি রক্তবর্ণ মলিনিমাহীন। এই পর্যায়ের বিশেষ আয়ুধ হল বিভিন্ন ধরনের পার্শ্ব চাঁছনি, গোলাকৃতি হাত-কুঠার এবং ভারী হাতলযুক্ত উ হাত-কুঠার।
• অতিরামগঞ্জম: কৃষ্ণস্বামী এই প্রত্নক্ষেত্রটির বিভিন্ন আয়ুধ পর্যালোচনা করে দেখেন যে, এখানে অ্যাশূলীয় ও শল্ক সংস্কৃতি এই দুটি ঐতিহ্যের সংমিশ্রণ ঘটেছে। কে ডি ব্যানার্জি-র অনুসন্ধান অনুযায়ী দেখা যায়, ভিত্তিভূমিতে রেট পাথর পর্যায়ের কাদামিশ্রিত স্তরে পাওয়া গেছে হাত-কুঠার ও কর্তরি পর্যায়ের আয়ুষ। হাত-কুঠারগুলি পাতলা ও লম্বা হয়। এখানে চোকলার উপর তৈরি নানা আকারের কর্তরি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া গেছে। তবে এই পর্যায়ের হাতিয়ারগুলিতে অনুশন্ধন প্রবণতা বিশেষভাবে অনুপস্থিত।
• খুডিয়ান: গুডিয়ান গ্রামাঞ্চলে আবিষ্কৃত হয়েছে কয়েকটি পর্বতকন্দর। সেইসব জায়গা থেকে পাওয়া গেছে পুরোনো প্রস্তর যুগের মানুষের ব্যবহৃত নানা নিদর্শন। প্রাপ্ত হাতিয়ারগুলির মধ্যে অ্যাগুলীয় পরবর্তী যুগ থেকে ক্ষুদ্রান্ত ঐতিহ্য পর্যন্ত ক্রমবিকশিত ধারাবাহিকতা লক্ষ করা গেছে। এই সময়ে তীক্ষ্ণাগ্র, ছেদনী, হাত-কুঠার, কর্তরি এবং ফলক পাওয়া গেছে, যেগুলি অ্যাশূলীয় পদ্ধতিতে নির্মিত হয়েছিল।
পরিশেষে বলা যায়, সোয়ান শিল্পের তুলনায় মাদ্রাজ শিল্পে ছেদনীর পরিবর্তে হাত-কুঠার বেশি পাওয়া গেছে। আসলে উত্তর-পশ্চিম ভারত থেকে যত দক্ষিণ দিকে এগিয়ে যাওয়া যায় ততই ছেদনী জাতীয় হাতিয়ারের সংখ্যা কমতে থাকে এবং হাত-কুঠার, কর্তার জাতীয় হাতিয়ারের সংখ্যা বাড়তে থাকে।