1935 সালে ইয়েল-কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নভূতাত্ত্বিক সমীক্ষক দল দ্য তেরা, টি টি প্যাটারসন প্রমুখ পশ্চিম পঞ্জাবের শিবালিক পর্বতমালা ও পটওয়ার অঞ্চলের অন্তর্গত রাওয়ালপিন্ডি শহরের নিকট সোয়ান নদীর উপকূলে সমীক্ষা চালিয়ে প্রাচীন প্রস্তর যুগের প্রচুর প্রতাশ্ম আবিষ্কার করেন। প্যাটারসন, প্রাপ্ত হাতিয়ারগুলিকে আদি সোয়ান ও পরবর্তী সোয়ান এই দুটি পর্যায়ে বিভক্ত করেন।
সোহান বা সোয়ান সিখুনদের একটি উল্লেখযোগ্য ক্ষুদ্র উপনদী। এই নদীটির বিভিন্ন স্তর থেকে যেসব নিদর্শন পাওয়া গেছে, তাদের বলা হয় সোয়ান শিল্প এবং সোয়ান নদীর ভূমিকে কেন্দ্র করে যে প্রাগৈতিহাসিক আয়ুধ ক্ষেত্রটি রূপলাভ করেছিল, তাকে বলা হয় সোয়ান সংস্কৃতি। সময় ও হাতিয়ারের প্রকারের ভিত্তিতে সোয়ান শিল্পের বিভিন্ন পর্যায়কে প্রাক্-সোয়ান, আদি সোয়ান, পরবর্তী সোয়ান এবং উন্নত বা বিকাশিত সোয়ান প্রভৃতি ভাগে ভাগ করা হয়।
• প্রাক্-সোয়ান: সোয়ান শিল্পের আয়ুধগুলি প্রাচীন ও বৃহৎ আকৃতির; যেগুলি হিমালয়ের দ্বিতীয় হিমযুগের। এগুলির বেশিরভাগই একটি শিলার সৃষ্টি করে। সমতল ক্ষেত্রের কিনারা জুড়ে এমন একটি আঘাত দেওয়া হয়, যাতে তা থেকে একটি শঙ্ক উঠে আসে।
• আদি-সোয়ান আদি সোয়ানের হাতিয়ারগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল চক্রাকার অন্তস্থল প্রস্তর। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য হাতিয়ার ছিল একমুখ ছেদনী। এই ধরনের হাতিয়ারগুলিতে শল্ক কর্ম বেশ সংক্ষিপ্ত। শল্ক বের করার কাজে দ্বিষুবীয় (bipolar) পদ্ধতি বিশেষভাবে ব্যবহার করা হয়। এই সময়ের হাতিয়ারগুলি অধিকাংশ ক্ষয়প্রাপ্ত এবং মলিনিমাযুক্ত। এই যুগের শেষের দিকের বিভিন্ন ধরনের নুড়ি-পাথরের হাতিয়ার পাওয়া গেছে। যেমন-ছেদনী, চপিং, আয়ুধ এবং চক্রাকার অন্তস্থল প্রস্তর।
• পরবর্তী বা উত্তর সোয়ান উত্তর সোয়ান পর্যায়ের আয়ুধগুলির আকৃতি ও প্রকৃতি অপেক্ষাকৃত উন্নত। সাধারণভাবে ছেদনী, চপিং, আয়ুধ ও চক্রাকার অন্তস্তল প্রস্তর আয়ুধ পাওয়া গেছে এই সময়ে যেগুলি ‘লেভালয়শীল’ ও ‘ধাপ-শুল্কন’ পদ্ধতিতে |
নির্মাণ করা হয়েছে। এই যুগে লেভালয়শীল ধারার চাঁছনি এবং চোকলা হাতিয়ারও পাওয়া গেছে। এই পর্যায়ে অ্যাশুলীয় পদ্ধতিতে তৈরি কিছু হাত-কুঠার কর্তরি আবিষ্কার হয়েছে, যেগুলিতে সোয়ান সংস্কৃতি নয় বিদেশি সংস্কৃতির প্রভাব লক্ষ করেছেন প্রত্নতত্ত্ববিদ প্যাটারসন।
উন্নত বা বিকশিত সোয়ান। উন্নত বা বিকশিত সোয়ানের হাতিয়ারগুলি কেবল আকারে ছোটো এবং কিছুটা সূক্ষ্মতার আভাস পাওয়া যায়। মোভিয়াস 1943 সালে চোক পাঠান অঞ্চল থেকে এই যুগের উল্লেখযোগ্য আয়ুধ ছোটো তুরপুন বা ছিদ্রক আবিষ্কার করেন।
পরিশেষে বলা যায়, সমগ্র সোয়ান শিল্পেই ছেদনী, শব্ন্ধ, প্রস্তর বা চোকলা হাতিয়ার জাতীয় আয়ুধের প্রাধান্য দেখা যায়।