প্রাচীন প্রস্তর যুগ, মধ্যপ্রস্তর যুগ এবং নব্যপ্রস্তর যুগে ব্যবহৃত আয়ুধ বা অস্ত্রগুলি সম্বন্ধে নীচে আলোচনা করা হল-
প্রাচীন প্রস্তর যুগে ব্যবহৃত আয়ুধ প্রস্তর যুগে মানুষ শিকারের প্রয়োজনে হাতিয়ার তৈরি করেছিল। প্রাচীন প্রস্তর যুগের মানুষ ছিল খাদ্য সংগ্রাহক, তাই খাদ্য সংগ্রহের জন্য প্রয়োজন ছিল হাতিয়ারের। খননকার্যের ফলে এই যুগে যে সমস্ত হাতিয়ার বা আয়ুধ পাওয়া গেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল-হাত-কুঠার। হাত-কুঠার সবথেকে বেশি পাওয়া গেছে দক্ষিণ ভারতের মাদ্রাজ অঞ্চলে। এ ছাড়া পঞ্জাবের রাওয়ালপিন্ডির নিকট সোয়ান নদীর উপত্যকায় পাওয়া হাতিয়ারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল কোপানি, এগুলি একমুখী এবং দু-মুখী ছিল। এই যুগের হাতিয়ারগুলি ছিল বৃহৎ, ভারী ও অমসৃণ।
মধ্যপ্রস্তর যুগে ব্যবহৃত আয়ুধ মধ্যপ্রস্তর যুগের হাতিয়ারের মূল বৈশিষ্ট্য ছিল-ক্ষুদ্রত্ব ও ধারালো। এই যুগে হাতিয়ারগুলি ক্ষুদ্র হলেও সংখ্যার দিক থেকে তা ছিল অনেক বেশি। এই যুগের উল্লেখযোগ্য হাতিয়ার বা আয়ুধগুলি ছিল-বাটালি, চাঁছনি, ব্লেড, ভোমর বা তুরপুন এবং ত্রিকোণী প্রস্তরাষুধ। পাথরের জাঁতা, হামানদিস্তা প্রভৃতি পাওয়া গিয়েছিল বেশ কয়েকটি প্রত্নক্ষেত্রে। হাড় কিংবা চকমকি পাথর দিয়ে তির তৈরি করা হত। মধ্যপ্রদেশের ভীমবেটকার গুহায় বর্শা, তিরধনুক প্রভৃতির ছবি লক্ষ করা যায়। এই যুগের হাতিয়ারগুলি ছিল আগের যুগের তুলনায় পাতলা ও হালকা।
নব্যপ্রস্তর যুগে ব্যবহূত আয়ুধ: নব্যপ্রস্তর যুগের সব হাতিয়ারগুলি ছিল কালো শ্লেট বা বেলে পাথরের তৈরি এবং সেগুলি অদ্ভুত রকমের মসৃণ ও পালিশ করা ছিল। এই মসৃণতা পাথরের অস্ত্রে আগে দেখা যায়নি। আর শুধু মসৃণতাই নয়, এগুলি ছিল আগের যুগের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত। এই যুগের প্রত্নক্ষেত্রগুলিতে হাড়ের তৈরি অস্ত্র, যেমন ছুঁচ, হারপুন, বর্শাফলক, তিরফলক, ছোরা প্রভৃতি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এই যুগে হাড়ের তৈরি অস্ত্রের ব্যবহার বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। অনেক সময় অস্ত্রগুলিতে হাতল লাগানো থাকত। যাই হোক, মানুষের জীবনে এই সময় হাতিয়ারগুলির মাধ্যমে অনেক নিখুঁত কাজ সম্পন্ন হত।