প্রাবন্ধিক প্রমথ চৌধুরীর কৃতিত্ব সংক্ষেপে আলোচনা করো।

বিংশ শতকের অন্যতম প্রাবন্ধিক প্রমথ চৌধুরী। ‘সবুজপত্র’ পত্রিকার সম্পাদনা ও এই পত্রিকাকে কেন্দ্র করে তিনি মননশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথের জীবিতকালেই তিনি বাংলা প্রবন্ধকে ভিন্ন মেজাজ ও স্বতন্ত্রখাতে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন। শুধু যুক্তি ও পান্ডিত্যই নয়, সরস বাচনভঙ্গি এবং উপস্থাপনের গুণে বিশেষ মর্যাদার দাবি রাখে। সমালোচক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন-“সব্যসাচী প্রমথ চৌধুরী, ‘সবুজপত্র’ তাঁর গাণ্ডীব। আর সবুজ সভার সভ্যরা পাণ্ডব সেনার দল। … রুচির ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন বররুচি রূপের রাজ্যের বরপুত্র, জ্ঞানের পথে তাঁকে বলা যায় বরযাত্রী। রূপের চেয়ে রুচিকে, রুচির চেয়ে ঋদ্ধিকে বড়ো মনে করতেন তিনি।”

প্রমথ চৌধুরীর প্রবন্ধগুলি হল-‘তেল-নুন-লকড়ি’ (১৯০৬), ‘বীরবলের হালখাতা’ (১৯১৭), ‘নানাকথা’ (১৯১৯) ও ‘নানাচর্চা’ (১৯৩২)। প্রমথ চৌধুরী নানা বিষয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন। তাঁর ‘প্রবন্ধ সংগ্রহ’-গুলিকে নানাভাবে সাজানো হয়েছে। যথা-সাহিত্য বিষয়ক, ভাষা বিষয়ক, সমাজ বিষয়ক ও ভারতবর্ষ বিষয়ক। যেমন-‘কথার কথা’ প্রবন্ধে তিনি জানিয়েছেন-“ভাষা মানুষের মুখ হতে কলমের মুখে আসে, কলমের মুখ হতে মানুষের মুখে নয়। উল্টোটা চেষ্টা করতে গেলে মুখে শুধু কালি পড়ে।” ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে তিনি চলিত ভাষাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। এমনকি সাহিত্য সমালোচনায় বৈঠকি ঢঙকে প্রাধান্য দিয়েছেন। প্রমথ চৌধুরীর গদ্য, রবীন্দ্রনাথের কাছে মনে হয়েছিল ‘ইস্পাতের ঘুড়ি’। বিংশ শতকের প্রবন্ধসাহিত্যে প্রমথ চৌধুরীর অবদান স্মরণীয়। তিনি শুধু নিজেই লেখেননি, ‘সবুজপত্র’ পত্রিকাকে কেন্দ্র করে বাংলা সাহিত্যে একটা নতুন স্রোত এনেছিলেন। রবীন্দ্রনাথকে সামনে রেখে তা গড়ে উঠলেও বিষয় ভাবনার বিশ্লেষণে তিনি স্বতন্ত্রতার পরিচয় দিয়েছেন।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

bn_BDBengali
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading