বঙ্গ সম্পর্কে টীকা :
বঙ্গ একটি প্রাচীন জনপদ। ঐতরেয় আরণ্যক গ্রন্থে একটি উপজাতির নাম হিসেবে বঙ্গের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। মহাভারত, রামায়ণ ও হরিবংশেও রয়েছে বঙ্গ প্রসঙ্গ। মহাভারতের আদি অন্যান্য জনপদের সঙ্গে উচ্চারিত হয়েছে বঙ্গের নাম। মহাকবি কালীদাসের ‘রঘুবংশম্’ কাব্যে আছে বঙ্গের অবস্থান ও সীমানা সম্পর্কিত কিছু তথ্য। তিনি ভাগীরথী ও পদ্মার স্রোত মধ্যবর্তী এলাকায় যে ত্রিভুজাকৃতি বদ্বীপ সৃষ্টি হয়েছে তাকেই বঙ্গদেব অঞ্চল বলেছেন। আর এই অঞ্চলই সম্ভবত টলেমির ‘গঙ্গরিডাই’। প্রাচীন শিলালিপিতে বঙ্গের দুটি অঞ্চলের নাম পাওয়া যায়, একটি বিক্রমপুর বঙ্গ এবং অন্যটি নাব্য বঙ্গ। যদিও বর্তমানে নাব্য বলে কোনো জায়গা নেই, তাও অনুমান করা যায় ঢাকা-ফরিদপুর-বরিশাল এলাকা নাব্য বঙ্গের অন্তর্ভুক্ত ছিল। বাংলায় মুসলমান শাসনের প্রাথমিক পর্যায়ে ‘বঙ্গ’ বলে বাংলার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব অংশকেই বোঝানো হত। সুতরাং বঙ্গের এই ভৌগোলিক পরিচিতি হিন্দু ও বৌদ্ধ যুগ পেরিয়ে মুসলিম যুগের প্রাথমিক পর্যায়ে তা বটেই, সম্ভবত ‘বাহাশাহ’ নামের বিকাশ পর্যন্তই ছিল। মধ্যযুগের বিখ্যাত মুঘল ঐতিহাসিক আবুল ফজল রচিত ‘আইন-ই-আকবরী’ গ্রন্থে পাওয়া যায় যে, বঙ্গদেশের উত্তরকালীন নাম বঙ্গাল। কারণ এ দেশের প্রাচীন রাজাগণ সারাদেশে চওড়া ‘আল’ নির্মাণ করতেন। সেজন্য ‘বঙ্গ’ ও ‘আল’ শব্দ দুটির যোগে ‘বঙ্গাল’ নামর উৎপত্তি হয়েছে। এ থেকে ধারণা করা হয় যে পানি (জল) থেকে শস্যখেত রক্ষার জন্য বড়ো বড়ো আল বাঁধা হত এবং তার ফলে এই অঞ্চলটি ‘বঙ্গাল’ নামে পরিচিত হয়।