বাংলা ছন্দে পর্ব ও পর্বাঙ্গের গুরুত্ব।

বাংলা ছন্দে পর্ব ও পর্বাঙ্গ গুরুত্ব:


পর্ব :- যতির দ্বারা পর্ব তৈরি হয়। এক নিঃশ্বাসে চরণের যতোটা অংশ উচ্চারণ করা যায়, ঐ অংশটুকু একটি পর্ব। এক যতি থেকে আরেক যদি পর্যন্ত অংশকে পর্ব বলা হয়। স্পষ্ট করে বললে, কবিতা আবৃত্তি করতে গেলে অর্থের দিকে লক্ষ্য না করে, জিহ্বার বিশ্রামের জন্য কোনো পংক্তির যতোটুকু এক নিঃশ্বাসে উচ্চারণ করা যায়, ততোটুকু এক পর্ব। যেমন –
বাঁশ বাগানের। মাথার উপর। চাঁদ উঠেছে। ওই।।
মাগো আমার। শোলক বলা। কাজলা দিদি। কই।।
ওপরের দুটো চরণে চারটি করে যতি পড়েছে। প্রত্যেকটি চরণ চারটি ভাগে বিভক্ত হয়েছে। প্রতিটি ভাগ একটি পর্ব। আবার কবিতার প্রত্যেক চরণের পর্ব সংখ্যা সমান না-ও হতেহ পারে। যেমন –
আমি কবি যত। কামারের আর। কাসারির আর।
ছুতুরের মুটে। মজুরের।।
আমি কবি যত। ইতরের।।
আমি কবি ভাই। কর্মের আর। ঘর্মের।।

পর্বাঙ্গ(Beat):

পর্বের ভেতরকার বিভিন্ন অক্ষর বা দলের উচ্চারণে স্বর-প্রবাহের যে হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে তাকে ভিত্তি করে পর্বকে যে বিভিন্ন অঙ্গে ভাগ করা যায়, তাকে পর্বাঙ্গ বলে। যেমন –
(ক) কলসীতে ঢেউ দিয়া। শশধরে খেদাইয়া
সরলা গৃহস্থ বধু। ভরিতেছে জল
এখানে, কলসীতে ঢেউ দিয়া——–একটি পর্ব।
এই পর্বটি উচ্চারণে ‘ক’-তে স্বর-গাম্ভীর্য সবচেয়ে বেশি, ‘তে’-তে সবচেয়ে কম। আবার ‘ঢে’-তে বেশি এবং ‘য়া’-তে কম স্বর-গাম্ভীর্য। তাই ‘কলসীতে’ এবং ‘ঢেউ দিয়া’ এই দু ভাগে পর্বটি ভাগ করা যায়।
(খ) নীল-সিন্ধু-জল। ধৌত-চরণ-তল
অনিল-বি –কম্পিত। শ্যামল-অঞ্চল
এখানে নীচের পংক্তিতে বিকম্পিত শব্দটিকে ভেঙ্গে দুই পর্বাঙ্গের মধ্যে দেয়া হয়েছে। অতএব শব্দকে ভেঙ্গেও পর্বাঙ্গ-বিভাগ করা যায়।

পর্ব ও পর্বাঙ্গের গুরুত্ব:


বাংলা ছন্দে পর্ব বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। পর্বের সাথে পর্ব গেঁথে পংক্তি, পংক্তির সাথে পংক্তি গেঁথে স্তবক এবং স্তবকের সাথে স্তবক গেঁথে কবিতা রচনা করা হয়। ছন্দের প্রকৃতি বোঝতে হলে পূর্ণ পর্বের মাত্রা সংখ্যা গুণতে হয়। পূর্ণ পর্বের মাত্রা সংখ্যা চার হলে স্বরবৃত্ত, চার-পাঁচ-ছয়-সাত হলে মাত্রাবৃত্ত, এবং আট ও দশ হলে অক্ষরবৃত্ত ছন্দ হয়। তাছাড়া পর্বসমতার ওপরই বাংলা ছন্দের সার্থকতা নির্ভর করে। অবশ্য শেষ পর্বটির ক্ষেত্রে সমতানীতি বজায় না-ও থাকতে পারে। যেমন –
প্রেম এসেছিলো। চলে গেল সে-যে। খুলি দ্বার ৬+৬+৪
আর কভু আসি। বেনা ৬+২
এই দু পংক্তি একই স্তবকের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু মূল পর্বের মাত্রা সংখ্যা সমান না থেকে যদি দু পংক্তির মোট মাত্রা সংখ্যা সমানও হয় তবে তাদের একই স্তবকে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। যেমন –
(।) হে আদি জননী সিন্ধু,। বসুন্ধরা সন্তান তোমার ৮+১০ = ১৮
(।।)পড়তে শুরু। করে দিলেম। ইংরেজী এক। নভেল কিনে এনে ৪+৪+৪+২= ১৮
এই উভয় চরণেই ১৮ মাত্রা আছে, তার জন্য এদের একই স্তবকের অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব নয়। পড়লেই বোঝা যায় এরা বিভিন্ন ছন্দের চরণ। দুটি মূল পর্বের মধ্যে মাত্রাগত সাম্য নাই। ফলে এ দুটো পংক্তি একই স্তবকে স্থান পেতে পারে না।
পর্বের মাত্রা-সংখ্যার উপর ছন্দের প্রকৃতি নির্ভর করে বলে এবং একই সংখ্যক মাত্রার পর্ব(শেষ পর্বটি ছাড়া) প্রতি চরণে বিন্যস্ত করাই ছন্দরীতি বলে পর্ব ছন্দের একটি প্রধান উপকরণ। (চলবে)——–

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

bn_BDBengali
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading