বাংলা ছোটগল্প কল্লোল পর্বে এসে যে বাঁক নিয়েছিল, তার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

বাংলা ছোটগল্প কল্লোল পর্বে এসে যে বাঁক নিয়েছিল, তার সংক্ষিপ্ত পরিচয়

বাংলা ছোটগল্পে “কল্লোল পর্ব” একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে বিবেচিত হয়, যা ১৯২০-এর দশকে সাহিত্য জগতে একটি নতুন ধারার সূচনা করে। এই পর্বে বাংলা ছোটগল্পে যে পরিবর্তন এসেছিল, তার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:

নতুন চিন্তাধারা ও প্রতিবাদী মনোভাব: কল্লোল যুগের সাহিত্যিকরা সমাজের প্রচলিত ধ্যান-ধারণা ও প্রথাগত মূল্যবোধকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন। তাঁরা সাহিত্যে বিদ্রোহের সুর তুলে ধরেন এবং সমাজের নানান অসঙ্গতি, অনাচার, ও সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান।

বাস্তবতা ও নগরজীবনের প্রতিফলন: কল্লোল পর্বের লেখকরা সমাজের বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে আগ্রহী ছিলেন। শহরের জীবনের টানাপোড়েন, মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংকট, দারিদ্র্য, ও বেকারত্বের মতো বিষয়গুলো এই সময়ের ছোটগল্পের মূল উপাদান হয়ে ওঠে।

মানসিক জটিলতা ও মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ: এই পর্বের গল্পগুলোতে চরিত্রগুলোর অন্তর্দ্বন্দ্ব, মানসিক জটিলতা, এবং মানব মনের গভীরতা তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়। গল্পের চরিত্ররা আর একরৈখিক থাকে না; বরং তারা জটিল, বৈচিত্র্যময় এবং প্রকৃতির দিক থেকে অস্পষ্ট হয়।

ভাষার স্বতঃস্ফূর্ততা ও নতুনত্ব: কল্লোল যুগের লেখকরা ভাষার নতুনত্বের দিকে নজর দেন। তাঁরা কথোপকথনের ভাষা ও প্রাকৃত ভাষাকে ছোটগল্পে প্রাধান্য দেন, যা সাহিত্যকে করে তোলে আরও প্রাণবন্ত ও বাস্তবসম্মত।

লেখকদের উদ্ভাবনী ধারা: এই সময়ের সাহিত্যিকরা সাহিত্যে নতুন রীতির প্রবর্তন করেন। প্রেমেন্দ্র মিত্র, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব বসু, জীবনানন্দ দাশ, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত প্রমুখ লেখকরা কল্লোল পর্বে তাঁদের সাহিত্যে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও আঙ্গিকের মাধ্যমে গল্পের ধরন বদলে দেন। সংক্ষেপে, কল্লোল পর্ব বাংলা ছোটগল্পকে একটি নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে শিখিয়েছিল, যেখানে জীবনের কঠোর বাস্তবতা, সমাজের গভীর সংকট, এবং ব্যক্তির মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা সাহিত্যে নতুন মাত্রা পেয়েছিল।

bn_BDBengali
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading