বেন্থামের উপযোগিতাবাদের তত্ত্বটি সংক্ষেপে আলোচনা কর। Discuss briefly Bentham’s theory of Utilitarianism.

বেন্থামের উপযোগিতাবাদের তত্ত্ব-

জেরেমি বেন্থাম (Jeremy Bentham) ছিলেন ইংরেজ দার্শনিক এবং সমাজ সংস্কারক, যিনি উপযোগিতাবাদ (Utilitarianism) তত্ত্বের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত। বেন্থামের মতে, মানুষের আচরণ এবং নীতিগুলির মূল্যায়ন করা উচিত সেই ভিত্তিতে, যেটি সর্বাধিক সুখ বা আনন্দ সৃষ্টি করে। তিনি একটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক নৈতিক তত্ত্ব তৈরি করেছিলেন যা সামাজিক এবং ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক।

বেন্থামের উপযোগিতাবাদের মূল ধারণা:

১. “সুখের নীতি”

বেন্থামের উপযোগিতাবাদের মূল ভিত্তি হলো সর্বোচ্চ সুখের নীতি” (Principle of Greatest Happiness)। তাঁর মতে, মানুষ যেকোনো কাজ করে তাদের সুখ এবং আনন্দ অর্জনের জন্য, এবং অন্যদের দুঃখ বা কষ্ট কমানোর জন্য কাজ করে। তাই, একটি কাজ বা নীতির নৈতিক মূল্যায়ন করা হয় তার ফলস্বরূপ যত বেশি সুখ বা আনন্দ সৃষ্টি হয় তাতে।

২. উপযোগিতা (Utility)

উপযোগিতা বলতে বেন্থাম তাঁর তত্ত্বে “সুখ” বা “আনন্দ” বোঝান। এটি মানুষের আনন্দ, সুখ, শান্তি এবং সাধারণভাবে ভালো অনুভূতির মোটামুটি মাপ বা পরিমাপ। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, যেকোনো কাজ বা নীতির মূল্য নির্ধারণ করা হয় তার ফলস্বরূপ যে উপকার বা সুখ তৈরি হবে তার ভিত্তিতে।

৩. সুখ এবং দুঃখের পরিমাপ

বেন্থাম উপযোগিতাবাদকে একটি পরিমাপযোগ্য ও গাণিতিক ধারণা হিসাবে দেখেছিলেন। তিনি একটি হ্যাপিপিক্যাল ক্যালকুলাস” (Hedonistic Calculus) বা আনন্দের পরিমাপের পদ্ধতি তৈরি করার চেষ্টা করেছিলেন, যাতে সমাজে কোনো কাজের ফলস্বরূপ সৃষ্টি হওয়া সুখ এবং দুঃখ পরিমাপ করা যায়। এই পদ্ধতির মাধ্যমে একটি কাজের উপকারিতা এবং ক্ষতিকারকতা নির্ধারণ করা হয়।

৪. “সর্বোচ্চ সংখ্যা, সর্বোচ্চ সুখ”

বেন্থাম বলেছিলেন যে, যে কোনো কাজের মূল্যায়ন করতে হবে এর দ্বারা সমাজে বা জনসাধারণে সর্বোচ্চ পরিমাণ সুখ বা আনন্দ সৃষ্টি হয় কিনা তার ভিত্তিতে। তিনি বিশ্বাস করতেন, যদি একটি সিদ্ধান্ত বা নীতি অধিক সংখ্যক মানুষের জন্য সুখ সৃষ্টি করে, তবে তা নৈতিকভাবে সঠিক।

৫. সমাজের কল্যাণ এবং নৈতিকতা

বেন্থামের উপযোগিতাবাদ একটি সমাজের কল্যাণ এবং নৈতিকতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রদান করে। এটি আইন, সরকার এবং ব্যক্তিগত আচরণে সুখ এবং কল্যাণের সর্বোচ্চ লক্ষ্য রাখার প্রয়োজনীয়তা তৈরি করে।

উপসংহার:

বেন্থামের উপযোগিতাবাদ হল একটি নৈতিক তত্ত্ব যা সুখ এবং আনন্দের সর্বাধিক পরিমাণ অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করার পরামর্শ দেয়। এর মাধ্যমে, তিনি ব্যক্তিগত এবং সামাজিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে মানবকল্যাণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেন। “সর্বোচ্চ সুখের নীতি” অনুযায়ী, যে কোনো কর্মের উদ্দেশ্য হতে হবে মানুষের জন্য যত বেশি আনন্দ এবং কম দুঃখ সৃষ্টি করা যায়, তাই এই তত্ত্বটি গণতান্ত্রিক, সমাজবাদী এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রবর্তন করেছে।

bn_BDBengali
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading