বৈষম্যহীন সমাজের জন্য সংরক্ষণ নীতি সম্পর্কে আলোচনা করুন।

Table of Contents

অথবা, ভারতীয় সংবিধানে দুর্বল শ্রেণীর সংরক্ষণের যে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে তা উল্লেখ করুন।

অথবা, তপশিলি জাতি, উপজাতি, এবং অন্যান্য পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায় সংখ্যালঘু এবং নারীদের জন্য ভারতীয় সংবিধানে যো সংরক্ষণ নীতি গ্রহণ করা হয়েছে তা লিখুন।

বৈষম্যহীন সমাজের জন্য সংরক্ষণ নীতি সম্পর্কে আলোচনা করুন।

ভারতীয় সমাজব্যবস্থার মধ্যে দুষ্টক্ষত হল জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গের ভিত্তিতে জনসাধারণের মধ্যে বিভেদ। সমাজে উচ্চবর্ণের জনগণ নিম্নবর্ণ, সংখ্যালঘু এবং নারীদের যুগ যুগ ধরে শিক্ষাসহ অন্যান্য সাধারণ সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে। এই বঞ্চনা ক্রমশ পুঞ্জীভূত হয়েছে যার ফলে জনগণের একটা বড়ো অংশ এই বঞ্চিত ভারতবাসীর মধ্যে নিরক্ষরতা, অনাবশ্যক ধর্মভীরুতা এবং নানা কুসংস্কারের জন্ম দিয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই মনে করে এটাই স্বাভাবিক এবং প্রাপ্য। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত ইংরেজরা আমাদের দেশে প্রায় দুশো বছর শাসন করলেও এই অন্যায়, অবিচার এবং বঞ্চনার বিরোধিতায় ভারতীয়রা কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। সম্ভবত এর কারণ হল ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থা কায়েম করার জন্য জনসাধারণের মধ্যে এই বিভেদকে তারা জিইয়ে রেখেছিল। এই অবস্থায় দীর্ঘ অহিংস এবং সহিংস আন্দোলনের ফলে আমরা 1947 খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা অর্জন করি।

স্বাধীন ভারতের সংবিধান রচনাকালে সংবিধান প্রণেতাগণ সমাজের এই দুষ্টক্ষতকে সারিয়ে তোলার জন্য এবং সংবিধানের সম অধিকারের নীতিকে কার্যকরী করার জন্য কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। আমাদের দেশে সম অধিকারকে কার্যকরী করার জন্য কিছু বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। কারণ যুগ যুগ ধরে যার বঞ্চনার শিকার হয়েছে, যাদের মধ্যে নিরক্ষরতা, অহেতুক ধর্মভীরুতা এবং কুসংস্কার দানা বেঁধেছে তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে পশ্চাৎপদতা। কেবলমাত্র কাগজেকলমে সম অধিকার নীতিকে তুলে ধরাই যথেষ্ট নয়। এদের পশ্চাৎপদতা দূর করার জন্য প্রয়োজন হল কিছু বিশেষ ব্যবস্থা। এই বিশেষ ব্যবস্থাকেই সংরক্ষণ বলা হয়। এখানে উল্লেখ করা যায় যে সমাজের এই বঞ্চিত জনগণের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হল তপশিলি জাতি, উপজাতি, পশ্চাৎপদ কমিউনিটি, সংখ্যালঘু এবং নারীকুল। এদের জন্যই প্রয়োজন হল সংরক্ষণ। এই সংরক্ষণের ব্যবস্থা সংবিধানের বিভিন্ন ধারায় ব্যস্ত হয়েছে যা নিম্নে উল্লেখ করা হল।

তপশিলি জাতি, উপজাতি, এবং অন্যান্য পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায় সংখ্যালঘু এবং নারীদের জন্য ভারতীয় সংবিধানে যো সংরক্ষণ নীতি গ্রহণ করা হয়েছে তা লিখুন।

তপশিলি জাতি, উপজাতি এবং অন্যান্য পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়-

• মৌলিক অধিকারের 15 নং ধারায় বলা হয়েছে ধর্ম, জাতি, বর্ণ, জন্মস্থান, নারী-পুরুষের মধ্যে কোনো সুযোগসুবিধা সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যতিক্রম করা হবে না। সামাজিক কিংবা শিক্ষা জীবনে পশ্চাৎপদদের জন্য বিশেষত তপশিলি বর্ণ এবং উপজাতিদের জন্য প্রয়োজনবোধে কেন্দ্রীয় ও রাজ্যসরকার আইন পাস করতে পারবেন।

• 16 (4) নং ধারায় বলা হয়েছে যে, সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে তপশিলি জাতি, উপজাতি এবং শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের জন্য পদ সংরক্ষণের অধিকার দেওয়া হল।

• 17 নং ধারায় সমস্ত ধরনের অস্পৃশ্যতাকে বাতিল করা হল এবং যে-কোনো ধরনের অস্পৃশ্যতাকে কার্যকর করার ব্যবস্থা আইনের দ্বারা দণ্ডনীয় হবে। • 46 নং ধারায় বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্র ভারতের দুর্বলতর শ্রেণির বিশেষত তপশিলি জাতি ও উপজাতি শ্রেণির শিক্ষা ও আর্থিক স্বার্থে যাবতীয় উন্নয়নমূলক ব্যবস্থা  গ্রহণ করার চেষ্টা করবে ও তাদের সকল প্রকার সামাজিক অবিচার ও শোষণ থেকে রক্ষা করবে |

• 275 (1) নং ধারায় বলা হয়েছে, SC, ST-দের কল্যাণের জন্য এবং তপশিলি জাতি ও উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলগুলির উন্নয়নের জন্য আর্থিক সাহায্যের ব্যবস্থা করতে হবে।

• 330 নং ধারায় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে SC, ST এবং OBC-দের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণে আসন সংরক্ষিত থাকবে।

• 340 নং ধারায় বলা হয়েছে রাষ্ট্র সামাজিক এবং শিক্ষার দিক থেকে পিছিয়ে পড়া জনগণের অবস্থা পর্যালোচনা করে ব্যবস্থাগ্রহণ করতে পারবে।

ভারতীয় সংবিধানে দুর্বল শ্রেণীর সংরক্ষণের যে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে তা উল্লেখ করুন

সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষণ-

মৌলিক অধিকার প্রসঙ্গে সংবিধানের 30 নং ধারায় সংখ্যালঘুদের পৃথক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের অধিকার স্বীকৃত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। 30(1) নং ধারায় বলা হয়েছে, সমস্ত ধর্মগত ও ভাষাগত সংখ্যালঘুদের নিজেদের ইচ্ছামতো বিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনার অধিকার থাকবে। 30(2) নং অংশে বলা হয়েছে, ধর্ম ও ভাষার দিক দিয়ে সংখ্যালঘু এই অজুহাতে সাহায্যদানে রাষ্ট্র কোনো বৈষম্য করবে না।

সংবিধানের 29(1) নং ধারায় বলা হয়েছে, ভারতের যে-কোনো স্থানে বসবাসকারী নাগরিকদের কোনো অংশের যদি পৃথক ভাষা বা নিজস্ব সংস্কৃতি থাকে তাহলে তাদের ওই সংস্কৃতি-সংরক্ষণের অধিকার থাকবে।

29(2) নং ধারায় বলা হয়েছে যে, সরকার পরিচালিত বা সাহায্যপ্রাপ্ত কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভরতির ক্ষেত্রে জাতি, ধর্ম সম্প্রদায়, ভাষা বা যে-কোনো একটি বিষয়ের অজুহাতে কোনো ভারতীয় নাগরিককে শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।

3.50(খ) নং ধারায় বলা হয়েছে যে, ভাষাগত সংখ্যালঘুদের বিভিন্ন বিষয়ের স্বার্থ রক্ষার ব্যাপারটি অনুসন্ধান করার জন্য বিশেষ অফিসার নিয়োগ করতে হবে।

নারীদের শিক্ষা-

নারীদের শিক্ষার সংরক্ষণের প্রশ্নে সংবিধানে তেমন কোনো ধারা এখনও পর্যন্ত নেই। তবে সংবিধানের 15(3) নং ধারায় বলা হয়েছে নারী এবং শিশুদের শিক্ষার জন্য সরকার বিশেষ সুবিধা গ্রহণ করতে পারে।

এখন প্রশ্ন হল যে, এই ধরনের সংরক্ষণের সুযোগ কত দিন চলতে পারে। একথা অনস্বীকার্য যে তপশিলিদের জন্য বিশেষ সুযোগ বিশেষত শিক্ষা এবং চাকরি ক্ষেত্রে পদ বা আসন সংরক্ষণের ফলে বর্ণ হিন্দুদের মধ্যে উম্মা দেখা দিয়েছে। তপশিলিদের জন্য কত হারে চাকরি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসন নির্দিষ্ট থাকবে, কিংবা যোগ্যতা-অযোগ্যতা নির্বিশেষে পদোন্নতির ক্ষেত্রেও তপশিলিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে কিনা এইসব প্রশ্নে দেখা দিয়েছে সংকট, এমনকি রক্তক্ষয়ী প্রাতৃঘাতী দাঙ্গা এক্ষেত্রে আরও একটি সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করা যায়।

সমীক্ষায় দেখা গেছে তপশিলিভুক্ত এমন অনেক পরিবার যারা বংশানুক্রমে এই সুবিধা গ্রহণ করে বিত্তশালী হয়েছে এবং প্রকৃতপক্ষে তাদের কোনোরকম সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই। অন্যদিকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে যেখানে অধিকাংশই তপশিলিভুক্ত পরিবার, তাদের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংরক্ষণের যে সুযোগ আছে সে সম্পর্কে তারা একেবারেই অচেতন। ফলে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তারা যে তিমিরে ছিল সেখানেই আছে। এই ধরনের পরিস্থিতির ফলে তপশিলিভুক্ত পরিবারগুলির মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করছে যা আদৌ বাঞ্ছিত নয়।

bn_BDBengali
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading