ব্রিটিশদের দ্বারা প্রবর্তিত রায়তওয়ারী বন্দোবস্ত কীভাবে স্থায়ী বন্দোবস্ত থেকে আলাদা ছিল?

রায়তওয়ারী বন্দোবস্তএবং স্থায়ী তুলনামূলক বিশ্লেষণ

ব্রিটিশ শাসনের সূচনার পর ভারতীয় উপমহাদেশে কৃষি ও জমি ব্যবস্থাপনায় একাধিক পরিবর্তন আনা হয়। এর মধ্যে দুইটি প্রধান ব্যবস্থা ছিল: স্থায়ী বন্দোবস্ত (Permanent Settlement) এবং রায়তওয়ারী বন্দোবস্ত (Ryotwari Settlement)। এই দুটি ব্যবস্থার মধ্যে মূল পার্থক্য ছিল জমির মালিকানা, রাজস্ব সংগ্রহের পদ্ধতি এবং কৃষকদের উপর তাদের প্রভাব। এই নিবন্ধে আমরা রায়তওয়ারী বন্দোবস্তের বিস্তারিত বিশ্লেষণ করব এবং সেটিকে স্থায়ী বন্দোবস্তের সাথে তুলনা করব।

১.স্থায়ী বন্দোবস্তের প্রবর্তনএবং এর কাঠামো

(ক) স্থায়ী বন্দোবস্তের প্রবর্তন

• ১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিসের দ্বারা স্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করা হয়, যা বাংলার জমি রাজস্ব ব্যবস্থার একটি মৌলিক পরিবর্তন।
• এর মাধ্যমে জমির মালিকানা ছিল জমিদারদের হাতে, এবং তারা কৃষকদের কাছ থেকে রাজস্ব সংগ্রহের দায়িত্বে থাকতেন।
• এই ব্যবস্থায়, রাজস্ব পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছিল জমির আয়ের উপর ভিত্তি করে, যা একবার স্থির হয়ে গেলে পরবর্তী সময়ে পরিবর্তন করা যেত না।
• জমিদাররা জমির রাজস্ব আদায় করতেন এবং তার বিনিময়ে রাজস্ব সরকারকে প্রদান করতেন।

(খ) স্থায়ী বন্দোবস্তের বৈশিষ্ট্য

• জমির মালিকানা: জমির মালিকানা ছিল জমিদারদের হাতে, যারা রাজস্ব আদায় করতেন।
• রাজস্ব পরিমাণ: রাজস্বের পরিমাণ ছিল এককালীন এবং স্থির,যা পরবর্তীতে কোন পরিবর্তন হতো না।
• কৃষকরা: কৃষকরা ছিলেন জমির সলটা বা কৃষক, তবে তারা জমির মালিক নন, এবং তাদের উপর অর্থনৈতিক শোষণ ছিল প্রচণ্ড।
• এমনকি কৃষকের আত্মনির্ভরতা: কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের একটি বড় অংশ জমিদারদের প্রদান করত, যা তাদের জীবনযাত্রাকে বিপদমুক্ত রাখত না।

২. রায়তওয়ারীবন্দোবস্তের প্রবর্তন এবং এর কাঠামো

(ক) রায়তওয়ারী বন্দোবস্তের প্রবর্তন

• রায়তওয়ারী বন্দোবস্ত চালু করা হয়েছিল দক্ষিণ ভারতে, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, এবং দক্ষিণ ভারতীয় উপনিবেশগুলিতে।
• এটি প্রথমে বরহামপুর অঞ্চলে ১৮২০ সালে সির স্ট্যামফোর্ড রফ্লস কর্তৃক প্রবর্তিত হয়। পরে লর্ড কর্নওয়ালিসের স্থায়ী বন্দোবস্তের বিরুদ্ধে বিকল্প হিসেবে রায়তওয়ারী ব্যবস্থার বিকাশ ঘটে।
• এখানে জমির মালিকানা ছিল কৃষকদের হাতেন।), এবং তারা সরাসরি সরকারের কাছে রাজস্ব প্রদান করতেন।

(খ) রায়তওয়ারী বন্দোবস্তের বৈশিষ্ট্য

• জমির মালিকানা: জমির মালিকানা সরাসরি কৃষকদের হাতে ছিল।
• রাজস্ব সংগ্রহ: রাজস্ব সংগ্রহের দায়িত্ব ছিল সরকারী কর্মকর্তাদের ওপর, যারা কৃষকদের কাছ থেকে রাজস্ব সংগ্রহ করতেন।
• রাজস্ব পরিমাণ: রাজস্ব পরিমাণছিল নির্ধারিত জমির উৎপাদনের ভিত্তিতে এবং এটি প্রতি বছর পুনঃনির্ধারণযোগ্য ছিল।
• কৃষকের অধিকার: কৃষকরা যেহেতু জমির মালিক ছিল, তাদের কোনো মধ্যস্বত্বভোগী ছিল না, যেমন জমিদার। কৃষকরা নিজস্ব জমির উপরে অধিকারের অধিকারী ছিল।

৩. স্থায়ী বন্দোবস্ত বনাম রায়তওয়ারী বন্দোবস্ত

(ক) জমির মালিকানা এবং ভূমিস্বত্ব

• স্থায়ী বন্দোবস্ত: জমির মালিকানা ছিল জমিদারদের হাতে, যারা রাজস্ব আদায়ের দায়িত্বে থাকতেন। কৃষকরা সলটা হিসেবে কাজ করতেন, কিন্তু জমির মালিকা
• রায়তওয়ারী বন্দোবস্ত: কৃষকরা নিজস্ব জমির মালিক ছিলেন এবং সরাসরি সরকারের কাছে রাজস্ব প্রদান করতেন। কৃষকদের ভূমিস্বত্বের অধিকার থাকায়, তার

(খ) রাজস্ব পরিমাণ এবং সংগ্রহের পদ্ধতি

• স্থায়ী বন্দোবস্ত: রাজস্ব পরিমাণ একবার নির্ধারিত হলে তা স্থির ছিল এবং জমিদারের হাতে ছিল রাজস্ব সংগ্রহের পুরো ক্ষমতা। জমিদারের প্রভাব কৃষকদে
• রায়তওয়ারী বন্দোবস্ত: রাজস্ব পরিমাণ বছরে বার্ষিক ভিত্তিতে পুনর্নির্ধারণযোগ্য ছিল, এবং কৃষকদের উপর সরাসরি সরকারের প্রভাব ছিল।

(গ) কৃষকের অবস্থান

• স্থায়ী বন্দোবস্ত: কৃষকদের অবস্থা ছিল অত্যন্ত দুর্বল, কারণ তারা জমিদারদের কাছে অর্থ প্রদান করতে বাধ্য ছিল, এবং রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে তাদে
• রায়তওয়ারী বন্দোবস্ত: কৃষকরা জমির মালিক হওয়ায়, তাদের অধিকারের পরিধি ছিল বৃহত্তর এবং তারা সরাসরি সরকারের কাছে রাজস্ব প্রদান করতেন। তবে, ত�

(ঘ) অর্থনৈতিক প্রভাব

• স্থায়ী বন্দোবস্ত: জমিদারদের শোষণের কারণে কৃষকদের অর্থনৈতিক অবস্থা ক্রমশ অবনতি ঘটেছিল, এবং কৃষি উৎপাদনে স্থিতিশীলতা ছিল না।
• রায়তওয়ারী বন্দোবস্ত: কৃষকদের নিজস্ব জমির মালিকানা থাকলেও, রাজস্বের চাপ অনেক সময় তাদের উপর অতিরিক্ত ছিল, যা তাদের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তু

(ঙ) রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাব

• স্থায়ী বন্দোবস্ত: জমিদাররা রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠেন, যা তাদের শোষণের ক্ষমতা বাড়ায় এবং স্থানীয় প্রশাসনে প্রভাব বিস্তার করে।
• রায়তওয়ারী বন্দোবস্ত: কৃষকরা সরাসরি সরকারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কারণে, জমিদারদের তুলনায় তারা কম প্রভাবশালী ছিলেন। তবে, রাজস্ব পরিমাণের পর

উপসংহার

স্থায়ী বন্দোবস্ত এবং রায়তওয়ারী বন্দোবস্ত দুটি ভিন্ন ধরনের রাজস্ব সংগ্রহ ব্যবস্থা ছিল। স্থায়ী বন্দোবস্তে জমিদাররা রাজস্ব আদায় করতেন

অতএব, রায়তওয়ারী বন্দোবস্ত কৃষকদের অধিকারের ক্ষেত্রে কিছুটা বেশি সুবিধাজনক হলেও, স্থায়ী বন্দোবস্তের চেয়ে রাজস্ব পরিমাণের চাপ কম ছিল