প্রতিটি সমাজের সাংস্কৃতিক গঠনের ক্ষেত্রে গণমাধ্যম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে| বিংশ শতাব্দীতে গণমাধ্যমের একটি অঙ্গ হিসাবে চলচ্চিত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল |
এর মধ্য দিয়ে কোন একটি সমাজ এবং সামাজিক অবস্থা ফুটে উঠে, পাশাপাশি বিংশ ও একবিংশ শতাব্দীতে জনগণের বিনোদনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো চলচ্চিত্র| তার পাশাপাশি সময়ের সাথে সাথে সমাজে যে সকল পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় তাও এর মাধ্যমে আমাদের উপস্থাপন করা হয়|
ভারতীয় সিনেমার ইতিহাস
সিনেমার জন্ম নিকোলাস লুমিয়ার ও জিন লুমিয়ার নামে ফরাসি দুই ভাই দিয়েছিলেন ১৮৯৫ সালে। সেই সময় সিনেমায় শব্দের কোনো অস্তিত্ব ছিল না, তাই তাদের তৈরি প্রথম বিশ্বের চলচ্চিত্র THE ARRAIVAL OF A TRAIN AT THE STATION টি ছিল নির্বাক। ফরাসি এই দুই ভাইকেই চলচ্চিত্রের জনক মনে করা হয়। এই দুই ভাই নিজেরাও তাদের এই আবিষ্কার যে খুব দ্রুত বিশ্বের ধনি ও অভিজাতদের কাছে আকর্ষনের বিষয় হয়ে দ্বাড়াবে তার কল্পনা হয়তো তারা করেন নি। দেখতে দেখতে সারা বিশ্বে সিনেমাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কোম্পানি তাদের মুনাফা অর্জনে লেগে পড়ে এবং স্থানের নাম অনুসারে বিভিন্ন ইন্ডস্ট্রি গড়ে উঠে ~ যেমন হেমিল্টন শহর থেকে হলিয়ুড, বোম্বে থেকে বলিয়ুড, লাহোর থেকে লালিয়ুড, টালিগঞ্জ থেকে টলিয়ুড ইত্যাদি ইত্যাদি।
ভারতে সিনেমার আগমন
ফ্রান্সে তৈরি চলচ্চিত্রের ভারতে আসতে দেরী করেনি, ফ্রান্সে তৈরি হওয়া লুমিয়ার ব্রাদারের বিশ্বের প্রথম চলচ্চিত্র THE ARRAIVAL OF A TRAIN AT THE STATION ভারতে তার তৈরি হবার পরের বছরি বোম্বাই (বর্তমান নাম মুম্বাই) এর তৎকালিন বিলাসবহুল হোটেল ওয়েষ্টনে প্রদর্শিত হয়। ১৮৯৯ সালে প্রথম ভারতীয় হিসাবে সখারাম ভাতওয়াদেকর দুটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের সিনেমা তৈরি করেন যার নাম ছিল দ্যা রেষ্টলার এবং মেন এন্ড মাংকি কিন্তু সেটিও সম্পূৰ্ণরুপে ভারতীয় ছিল না, যার মধ্যে কিছুটা অংশ ব্রিটিশদের যোগদান ছিল। ভারতের সম্পূৰ্ণ নিজের ঘরানায় সিনেমা তৈরি করেন ধুন্দিরাম গোবিন্দ ফালকে , যিনি ইতিহাসে দাদাসাহেব ফালকে নামে পরিচীত। যদিও সেই চলচ্চিত্রটি ছিল নির্বাক,কিন্তু সেই ছবিটিকেই ইংরাজি ও হিন্দি সাব টাইটেল রাজা হরিশচন্দ্র দিয়ে মুক্তি দেওয়া হয় ১৯১৩ সালে।
ভারতীয় সিনেমার উদয়
ভারতে সিনেমা আসার পরেই তার যাত্রা শুরু করে, সেই যাত্রাই নতুন পালক জুড়ে দেই ইম্পেরিয়াল ফিল্ম কোম্পানির তৈরি আলম আরা সিনেমা। এই সিনেমাটিকেই ভারতের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র মনে করা হয়, মজার বিষয় হল সবাক চলচ্চিত্র হিসাবে এই সিনেমাতেই প্রথম গান চিত্রনাট্য করা হয় দে দে ক্ষুদাকে নাম পে প্যার।
এর পর একে একে এই বছরেই তেলুগু ভাষাই “ভক্ত প্রহ্লাদ” এবং তামিল ভাষাই “কালিদাস” মুক্তি পাই। বিভিন্ন ভাষাই তৈরি সিনেমা গুলো দ্রত জনপ্রিয় হতে শুরু করে এবং ১৯৩৭ সালে আর্দেশ ইরানি নামের একজন কিষন কন্যা নামের প্রথম রঙ্গিন সিনেমা তৈরি করেন।
ভারতের বলিউড এখন বিশ্বের দরবারে তার প্রসার ঘটিয়েছে, যার ফলে ইংলেন্ডের লেষ্টার বিশ্ববিদ্যালয় বলিউডকে তাদের বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। খুব দ্রত ভারতীয় সিনেমা জগৎ বিশ্বের দরবারে তার নাম নথিভুক্ত করলে ১৯৫২ সালে ভারতে প্রথম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব হয়। ভারতীয় সিনেমার (INDIAN CINEMA)এই অবদানের পিছনে দাদা সাহেব ফালকে অন্যতম ,যিনি তার একক প্রচেষ্টাই সেই সময় মোট ৯১ টি সিনেমা তৈরি করেছিলেন, এবং নার্গিস দত্ত তার মাদার ইন্ডিয়া সিনেমার জন্য বিশ্বে সুনাম কুরিয়েছেন আর এই সিনেমাই ছিল প্রমথ অস্কারের জন্য প্রেরিত সিনেমা।
উপসংহার
ভারতীয় চলচ্চিত্রে ভারতীয় সংস্কৃতিকে সাফল্যের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে| স্বাধীনতার পূর্ব কাল থেকে এই প্রবণতা ছিল বিদ্যমান| বর্তমানে ভারতবর্ষের সিনেমা ভারতীয় সংস্কৃতির ধারক ও বাহকে পরিণত হয়েছে|
পাশাপাশি চলচ্চিত্র বিভিন্ন সামাজিক সমস্যাকে জনগণ তথা বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয়েছে|