ভারতীয় অধীনে অপরাধ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা দণ্ডবিধি | A brief idea about offenses under Indian Penal Code

ANS-  ভারতীয় দণ্ড বিধি (English: The Indian Penal Code (IPC)) হল ভারতের মাটিতে সংঘটনীয় বিবিধ অপরাধের বিবরণ ও সংশ্লিষ্ট শাস্তি বা দণ্ডের বিধান সংবলিত প্রধান আইন। ১৮৩৩ সালের চার্টার আইনের নির্দেশে ১৮৩৪ খ্রিষ্টাব্দে থমাস ব্যাবিংটন মেকলের সভাপতিত্বে গঠিত প্রথম ভারতীয় আইন কমিশনের সুপারিশে ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে এই দণ্ড বিধির খসড়া তৈরী হয়।[১][২][৩] ভারতে ব্রিটিশ রাজের শুরুর দিকে ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে ভারতে এই আইন বলবৎ হয়। তবে, দেশীয় রাজ্যগুলিতে নিজস্ব আইন-আদালত থাকার জন্য এই আইন ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত চালু হয়নি। চালু হবার পর থেকে এই বিধির অনেক সংশোধন ও সম্প্রসারণ হয়েছে।

প্রয়োগ এলাকা

১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশশাসিত ভারতবর্ষ দ্বি-খণ্ডিত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র সৃষ্টির পর এই ফৌজদারী দণ্ড বিধি পাকিস্তানেও অনুসরণ করা হয়, তবে সেটি পাকিস্তান দণ্ড বিধি নামে পরিচিত। এমনকি, তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের (আজকের পাকিস্তান) কাছ থেকে স্বাধীন হবার পর আজকের বাংলাদেশেও (তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান) এই ভারতীয় দণ্ড বিধিই অনুসরণ করা হয়ে থাকে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য ব্রিটিশ উপনিবেশগুলি যেমন, তদানীন্তন ব্রহ্মদেশ (আজকের মায়ানমার), সিলোন (আজকের শ্রীলঙ্কা), খাঁড়ি বসতি (আজকের মালয়েশিয়ার অংশ), সিঙ্গাপুর ও ব্রুনেই; ঐ ভারতীয় দণ্ড বিধির ওপর ভিত্তি করেই নিজ দেশের দণ্ড বিধি তৈরী করেছে। ভারতীয় দণ্ড বিধির ভিত্তিতে তৈরী নিজস্ব রণবীর দন্ড বিধি অনুসরণ করতো এতোদিন ভারতেরই জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য।[৪] কিন্তু জম্বু কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা এবং ৩৫ক ধারা বাতিল হয়ে যাওয়ার পর থেকে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যও ভারতীয় দন্ডবিধির আওতাভুক্ত হয়েছে।

ইতিহাস

মুঘল সাম্রাজ্যে আদালতে হিন্দু আইনের পরিবর্তে শরিয়তি আইন ব্যবহৃত হত। পরবর্তীকালে. ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ প্রভাব বিস্তারের সাথে ইংরেজ ফৌজদারী আইন ধীরে ধীরে ইসলামি আইনকে সরিয়ে জায়গা করে নেয়। ১৮৬০ সালের আগে, গভর্নর-জেনারেল সেই ইংরেজ ফৌজদারী আইনের সুবিধামত পরিবর্তন করে বম্বে, মাদ্রাজ ও ক্যালকাটা প্রেসিডেন্সিতে প্রয়োগ করতেন।

১৮৩৪ সালে থমাস ব্যাবিংটন মেকলের নেতৃত্বে প্রথম আইন কমিশন ভারতীয় দন্ড বিধির খসড়া তৈরী করে। বাহুল্যবর্জিত, পরিভাষা এবং স্থানীয় চালচলন থেকে মুক্ত ইংল্যান্ড আইনের ভিত্তিতে এই খসড়া রচিত হয়। এছাড়া নেপোলিয়ানের বিধি এবং এডওয়ার্ড লিভিংস্টোনের ১৮২৫ সালের লুইসিয়ানা দেওয়ানি বিধি থেকেও কিছু কিছু উপাদান নেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে স্থিরীকৃত খসড়া ১৮৩৭ সালে ভারতের গভর্নর-জেনারেলের পরিষদে জমা পড়ে, কিন্তু সেই খসড়া আবার সংশোধিত হয়। ১৮৫০ সালে সংশোধন শেষ হবার পর ১৮৫৬ সালে বিধান পরিষদে আবার জমা দেওয়া হয়, কিন্তু, ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের অভিঘাতেই এটি বিধিবদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এবার বার্নস পিককের তত্বাবধানে খসড়াটির বিস্তারিত সংশোধন হয়। ৬ই অক্টোবর ১৮৬০ বিধান পরিষদে ভারতীয় দন্ড বিধি আইন হিসাবে গৃহীত হয়। বার্নস পিকক পরে কলকাতা উচ্চ আদালতে প্রথম প্রধান বিচারপতি ও সেই বিধান পরিষদের অন্যান্য সদস্যরা কলকাতা উচ্চ আদালত সাধারণ বিচারপতির পদ অলঙ্কৃত করেন।এই আইন ১লা জানুয়ারী ১৮৬২ থেকে সমগ্র ব্রিটিশ ভারতে বলবৎ হয়। দূর্ভাগ্যবশতঃ মেকলে ১৮৫৯ সালের শেষের দিকে মারা যাওয়ায়, তার এই অসাধারণ কাজ আইন হিসাবে ব্যবহৃত হতে দেখে যেতে পারেননি।

উদ্দেশ্য

এই আইনের উদ্দেশ্য ছিল ভারতের জন্য একটি সাধারণ দন্ড বিধির প্রচলন করা। প্রারম্ভিক উদ্দেশ্য না হলেও, এই আইন বলবৎ হবার সময় তৎকালীন ভারতে চালু ফৌজদারী আইনগুলিকে বাতিল করেনি। কারণ, সেসময় এই দন্ড বিধি সকল অপরাধের জন্য প্রযোজ্য ছিল না এবং হয়ত কিছু শাস্তিযোগ্য অপরাধ থেকে থাকবে যা এই দন্ড বিধির অন্তর্গত ছিল না। তবে এই দন্ড বিধি অপরাধ সংক্রান্ত যাবতীয় আইনকে একত্রিত করেছিল। এর পরও আরও অনেক দন্ড বিধান হয়েছে অন্যান্য অপরাধের জন্য যা এই দন্ড বিধির আওতায় ছিল না।

গঠন

মূল নিবন্ধ: ভারতীয় দন্ডবিধির অনুচ্ছেদের তালিকা

শুরুতে চারশো অষ্টআশিটি অনুচ্ছেদ ছিল ভারতীয় দন্ড বিধি, ১৮৬০-এ। অনেক সংশোধনের পর বর্তমানে তেইশটি অধ্যায়ে পাঁচশো এগারোটি অনুচ্ছেদ আছে। অধ্যায় গুলির মধ্যে ২৩ নং টি সবচেয়ে ছোট, যাতে একটি মাত্র অনুচ্ছেদ আছে; অন্যদিকে ১৭নং অধ্যায়টি সবচেয়ে বড় যাতে ৩৭৮ থেকে ৪৬২ পর্যন্ত মোট ৮৫টি অনুচ্ছেদ আছে।[৭] একটি পরিচিতি দিয়ে শুরু হয়ে এই দন্ডবিধিতে বিভিন্ন শব্দের ব্যাখ্যা ও ব্যতিক্রমের বর্ণনা সহ এক বিস্তৃত অপরাধের তালিকা সংকলিত হয়েছে। নিচের তালিকায় ভারতীয় দন্ডবিধির একটি রূপরেখা দেওয়া হল:

ভারতীয় দণ্ড বিধি, ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দ (অনুচ্ছেদ ১ থেকে ৫১১)

অধ্যায়    অন্তর্ভুক্ত অনুচ্ছেদসমূহ    অপরাধের শ্রেণীবিভাগ

অধ্যায় ১   অনুচ্ছেদ ১ থেকে ৫    পরিচিতি

অধ্যায় ২   অনুচ্ছেদ ৬ থেকে ৫২   সাধারণ ব্যাখ্যা

অধ্যায় ৩  অনুচ্ছেদ ৫৩ থেকে ৭৫  শাস্তি সংক্রান্ত

অধ্যায় ৪   অনুচ্ছেদ ৭৬ থেকে ১০৬ সাধারণ ব্যতিক্রমসমূহ

আত্মরক্ষার অধিকার সংক্রান্ত (অনুচ্ছেদ ৯৬ থেকে ১০৬)

অধ্যায় ৫  অনুচ্ছেদ ১০৭ থেকে ১২০ অপরাধে উৎসাহ দেওয়া সংক্রান্ত

অধ্যায় ৫ক অনুচ্ছেদ ১২০ক থেকে ১২০খ   ষড়যন্ত্র

অধ্যায় ৬  অনুচ্ছেদ ১২১ থেকে ১৩০ রাষ্ট্রের বিরূদ্ধে সংঘটিত অপরাধ সংক্রান্ত

অধ্যায় ৭   অনুচ্ছেদ ১৩১ থেকে ১৪০ সেনা বাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর করা অপরাধ সংক্রান্ত

অধ্যায় ৮  অনুচ্ছেদ ১৪১ থেকে ১৬০ জনগনের শান্তিভঙ্গের অপরাধ সংক্রান্ত

অধ্যায় ৯  অনুচ্ছেদ ১৬১ থেকে ১৭১ জন সেবক দ্বারা বা প্রতি অপরাধ সংক্রান্ত

অধ্যায় ৯ক অনুচ্ছেদ ১৭১ক থেকে ১৭১ঝ   নির্বাচনের অপরাধ সংক্রান্ত

অধ্যায় ১০  অনুচ্ছেদ ১৭২ থেকে ১৯০ জন সেবকের আইনসঙ্গত অধিকারের অবমাননা সংক্রান্ত

অধ্যায় ১১  অনুচ্ছেদ ১৯১ থেকে ২২৯ মিথ্যা সাক্ষ্য বা প্রমাণ ও ন্যায় বিচারের প্রতি অপরাধ সংক্রান্ত

অধ্যায় ১২  অনুচ্ছেদ ২৩০ থেকে ২৬৩    মুদ্রা ও সরকারি শিলমোহরের প্রতি অপরাধ সংক্রান্ত

অধ্যায় ১৩ অনুচ্ছেদ ২৬৪ থেকে ২৬৭ ওজন ও পরিমাপ সংক্রান্ত অপরাধের জন্য

অধ্যায় ১৪  অনুচ্ছেদ ২৬৮ থেক

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

bn_BDBengali
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading