ভারতের রাষ্ট্রপতির জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ক্ষমতা আলোচনা করো ( Discuss the emergency powers of the President of India)

Table of Contents

ভারতের রাষ্ট্রপতির জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ক্ষমতা:

 ভারতে কোনো সংকটকালীন অবস্থা সৃষ্টি হলে তা কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের সংবিধানে রাষ্ট্রপতির হাতে যেসব বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে, তাকে বলে রাষ্ট্রপতির জরুরি অবস্থা সংক্লান্ত ক্ষমতা। তবে জরুরি অবস্থা বলতে কী বোঝায় সে সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। তিন ধরনে অবস্থার কথা সংবিধানে বলা হয়েছে। এগুলি হল-

জাতীয় জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ক্ষমতা:

ভারতের সংবিধানের 352 নং ধারায় রাষ্ট্রপতির জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণার কথা বলা হয়েছে। অনুসারে রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন যে, যুদ্ধ, বহিরাক্রমণ অথবা দেশের মধ্যে সশস্ত্র কোনো বিদ্রে কারণে সমগ্র ভারত বা ভারতের কোনো অংশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে অথবা এরূপ ঘটার আশঙ দিয়েছে তাহলে তিনি সমগ্র দেশে বা সংশ্লিষ্ট অংশে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন।

 [1] অনুমোদন:

জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষিত হওয়ার একমাসের মধ্যে তা সংসদের উভয় ব অনুমোদিত হতে হবে। অনুমোদনলাভে ব্যর্থ হলে ওই ঘোষণা বাতিল হয়ে যাবে। জাতীয় জরুরি অনুমোদনের জন্য প্রয়োজন-[a] সংসদের প্রতিটি কক্ষের মোট সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠের সম [b] উপস্থিত ও ভোটদানকারী দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন।

[2] বলবৎকাল:

জাতীয় জরুরি অবস্থা অনুমোদিত হলে তা 6 মাস পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। পুনরায় অনুমোদন পেয়ে ওই কার্যকাল শেষে 6 মাস আরও কার্যকর থাকবে। কিন্তু জাতীয় জরুরি সর্বাধিক কতদিন পর্যন্ত কার্যকর রাখা যাবে সে ব্যাপারে সংবিধানে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা নেই

[3] ফলাফল:

জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি হলে এর কিছু সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। এগুি

[a] অর্ডিন্যান্স ঘোষণা:

রাজ্যতালিকাভুক্ত যে-কোনো বিষয়ে সংসদ আইন প্রণয়ন করতে প বিষয়ে রাষ্ট্রপতি Ordinance ঘোষণা করতে পারেন।

[b] কেন্দ্রীয় শাসন বিভাগের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ:

এইরূপ অবস্থায় কোনো রাজ্যের শ বিষয়ে কেন্দ্রীয় শাসন বিভাগ ওই রাজ্যের শাসন বিভাগকে নির্দেশ দিতে পারে। এক্ষেত্রে ও অনুসারে রাজ্য সরকার কাজ করতে বাধ্য।

[c] লোকসভার কার্যকাল বৃদ্ধি:

এই সময়ে লোকসভার কার্যকাল 1 বছর করে বাড়ানো যেে

[d] রাজ্য আইনসভার কার্যকাল বৃদ্ধি:

এই সময়ে রাজ্য আইনসভার কার্যকালের মেয়াদ 1 বছর করে বাড়াতে পারে। উল্লেখযোগ্য যে, জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করা হলে রাজ্য ত

বা লোকসভার মেয়াদ 6 মাস পর্যন্ত কার্যকর থাকতে পারে। তার বেশি তা কার্যকর থাকে

[e] মৌলিক অধিকারসমূহ ক্ষুণ্ণ:

জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষিত হলে সংবিধানের 19 নং ধারা মৌলিক অধিকারসমূহ ক্ষুা করতে পারে।

[f] রাজস্ব বণ্টন সংক্রান্ত ব্যাপারে পরিবর্তন:

জাতীয় জরুরি অবস্থা চলাকালীন সময়ে রাজ্যগুলির মধ্যে রাজস্ব বণ্টন সংক্রান্ত ব্যাপারে পরিবর্তনের নির্দেশ দিতে পারেন।

শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা সংক্রান্ত ক্ষমতা:

সংবিধানের 356 নং ধারায় রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা ঘোষণার কথা বলা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি যদি কোনো রাজ্যের রাজ্যপাল বা অন্য কোনো সূত্র থেকে জানতে পারেন যে, সংশ্লিষ্ট রাজ্যে সংবিধান অনুযায়ী শাসন ব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে না অথবা ওই রাজ্যে শাসনব্যবস্থা চালানো সম্ভব হচ্ছে না তাহলে তিনি যে জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ঘোষণা জারি করেন তাকে বলা হয় শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা বা রাষ্ট্রপতির শাসন।

[1] অনুমোদন:

রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা ঘোষণা সংসদের উভয় কক্ষে ২ মাসের মধ্যে আলাদাভাবে অনুমোদিত হতে হয়।

[2] বলবৎকাল:

রাষ্ট্রপতি শাসন সংসদের উভয় কক্ষ দ্বারা অনুমোদিত হলে প্রথমে 6 মাস তা কার্যকর থাকে এবং পরে আরও 6 মাস তার মেয়াদ বাড়ানো যায়। 3] ফলাফল: রাজ্য শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা চালু হলে এর যেসব পুরুত্বপূর্ণ ফলাফল লক্ষ করা যায়, তা হল

[a] রাজ্য আইনসভার ক্ষমতাগুলিতে হস্তক্ষেপ:

রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা ঘোষিত হলে সংসদ রাজ্য আইনসভার ক্ষমতাবলি নিজ এক্তিয়ারে কার্যকর করবে।

[b] সংসদ কর্তৃক আইন প্রণয়ন:

ওই রাজ্যের জন্য সংসদ আইন প্রণয়ন করতে পারে।

[c] বাজেট ও অর্থ বিল পাস:

কোনো রাজ্যে অচলাবস্থা ঘোষিত হলে সংসদ ওই রাজ্যের জন্য বাজেট ও অর্থ বিল পাস করতে পারে।

[d] শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থার বাস্তবায়ন:

কোনো রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা জারি করার লক্ষ্যকে বাস্তবায়িত করতে রাষ্ট্রপতি প্রয়োজনীয় নিয়ম-বিধি রচনা করতে পারেন।

[e] সংসদের অনুমোদন:

সংসদের নিম্নকক্ষের অধিবেশন বন্ধ থাকাকালীন সময়ে রাষ্ট্রপতি ভারতের সঞ্চিত তহবিল থেকে ওই রাজ্যের জন্য অর্থ ব্যয় করার সাপেক্ষে অনুমতি দিতে পারেন, অবশ্য এক্ষেত্রে তাঁর অনুমতি দান সংসদের অনুমোদনসাপেক্ষ।

[f] হাইকোর্টের কাজকর্মের ওপর রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপে নিষেধাজ্ঞা:

কোনো রাজ্যে রাষ্ট্রপতি-শাসন ঘোষিত হলে সেই রাজ্যের হাইকোর্টের কাজকর্মের ওপর রাষ্ট্রপতির কোনোরূপ হস্তক্ষেপ করা চলে না।

আর্থিক জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ক্ষমতা:

সংবিধানের 360 নং ধারায় রাষ্ট্রপতির আর্থিক জরুরি অবস্থা ঘোষণার কথা বলা হয়েছে। ওই ধারায় বলা হয়েছে যে, সমগ্র ভারত অথবা ভারতের কোনো অংশে আর্থিক স্থায়িত্ব বা সুনাম ক্ষুণ্ণ হওয়ার পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে বলে যদি রাষ্ট্রপতি মনে করেন, তাহলে রাষ্ট্রপতি সমগ্র ভারতে বা সেই অংশে যে জরুরি অবস্থা জারি করবেন তাকে বলা হয় আর্থিক জরুরি অবস্থা। এই ঘোষণাও সংসদের উভয় কক্ষ দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে।

[1] অনুমোদন:

আর্থিক জরুরি অবস্থা রাষ্ট্রপতি দ্বারা ঘোষিত হলেও তা 2 মাসের মধ্যে সংসদের উভয় কক্ষ দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে, অনুমোদন না পেলে তা 2 মাস পর বাতিল হয়ে যাবে।

[2] ফলাফল:

আর্থিক জরুরি অবস্থার কতকগুলি ফলাফল লক্ষণীয়। এক্ষেত্রে কেন্দ্র রাজ্যের আর্থিক ক্ষমতাসমূহ সংকুচিত করে নিজ নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়ে ওঠে।

[a] আর্থিক বিষয়ে নির্দেশদান:

এই সময় কেন্দ্র রাজ্যগুলিকে আর্থিক বিষয়ে নির্দেশদান করতে পারে।

[b] রাষ্ট্রপতির বিবেচনা:

রাজ্য আইনসভায় গৃহীত অর্থ বিলগুলিকে কেন্দ্র রাষ্ট্রপতির বিবেচনার জন্য রেখে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার অধিকারী হয়।

[c] বিচারপতিদের বেতন ও ভাতা হ্রাস:

এইরূপ অবস্থা সৃষ্টি হলে এবং প্রয়োজন মনে হলে সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিদের বেতন ও অন্যান্য ভাতা রাষ্ট্রপতি কিছুকালের জন্য হ্রাস করার নির্দেশ দিতে পারেন।

[d] কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি কর্মীদের বেতন ও ভাতা হ্রাস:

এইরূপ অবস্থা সৃষ্টি হলে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি কর্মীদের অথবা তাদের কোনো একটি এলাকার বেতন ও ভাতা রাষ্ট্রপতি কমানোর জন্য নিদের্শদানের অধিকারী হন।

মূল্যায়ন:

ভারতের ঐক্য ও জাতীয় সংহতি রক্ষা করার জন্য এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি যাতে মাথা তুলতে না পারে, সেইরূপ পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য জরুরি অবস্থার ঘোষণা কার্যকরী ভূমিকা পালন করলেও এইরূপ অবস্থা তীব্র সমালোচনার সম্মুখীনও হয়েছে। অনেকে মনে করেন যে, জরুরি অবস্থা ঘোষিত হলে তা যুক্তরাষ্ট্রীয় নীতির বিরোধী হয়ে ওঠে। কারণস্বরূপ বলা হয়েছে এই সময় রাজ্যগুলির ওপর কেন্দ্রের কর্তৃত্ব তীব্রভাবে বৃদ্ধি পায়। তা ছাড়া এইরূপ অবস্থায় মৌলিক অধিকারকে যুক্ত করে বলে অনেকে একে গণতন্ত্রেরও বিরোধী বলে উল্লেখ করেছেন। আবার রাজ্যগুলিতে রাষ্ট্রপতি-শাসন চালু হলে আমলাতন্ত্রের কর্তৃত্ব সৃষ্টি হয় যা গণতন্ত্রবিরোধী।

bn_BDBengali
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading