ভারতের রাষ্ট্রপতির নির্বাচন পদ্ধতি আলোচনা করো(Discuss the method of election of the President of India)

ভারতের রাষ্ট্রপতির নির্বাচন পদ্ধতি:

সংবিধানের 54 নং ধারায় বলা হয়েছে যে, ভারতের রাষ্ট্রপতি একটি নির্বাচকমণ্ডলী (electoral college) দ্বারা নির্বাচিত হবেন। এই নির্বাচকমন্ডলী যাদের নিয়ে গঠিত হবে তাঁরা হলেন-

[1] পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের নির্বাচিত সদস্যগণ (the electred members of both House of Parliament) I

[2] অঙ্গরাজ্যগুলির বিধানসভার নির্বাচিত সদস্যগণ (the elected members of the Legislative Assemblies of the states) I

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় দুটি নীতি মানতে হয়। যথা-প্রথমত, যাতে অঙ্গরাজাগুলির প্রতিনিধিত্বের হার সমান হয় এবং দ্বিতীয়ত, অঙ্গরাজ্যের বিধানসভাগুলি কর্তৃক প্রদত্ত ভোটসংখ্যা এবং পার্লামেন্টের ভোটসংখ্যার মধ্যে যেন সমতা বজায় থাকে। ভারতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতিকে বলে ‘একক হস্তান্তরযোগ্য ভোট দ্বারা সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের’ পদ্ধতি। কতকগুলি পর্যায়ের মাধ্যমে এই পদ্ধতিটি কার্যকর হয় এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

প্রথম পর্যায়

প্রথম পর্যায়ে প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের বিধানসভার নির্বাচিত সদস্যদের অর্থাৎ MLA-দের ভোটসংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। প্রত্যেক সদস্য একটিই ভোট দিতে পারে। কিন্তু ভোটের মূল্য প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের সদস্যদের এক নাও হতে পারে। ভোটের মূল্য নির্ণয়েরও একটি পদ্ধতি এখানে অনুসরণ করা হয়। যে অঙ্গরাজ্যের ভোট মূল্য নির্ধারণ করা হবে সেই অঙ্গরাজ্যের মোট জনসংখ্যাকে ওই রাজ্যের বিধানসভায় নির্বাচিত সদস্যসংখ্যা দিয়ে ভাগ করতে হবে। যে ডাগফল পাওয়া যাবে তাকে আবার 1000 দিয়ে ভাগ করতে হবে। এই দ্বিতীয় বার ভাগ করে যে ভাগফল পাওয়া যাবে তাই সংশ্লিষ্ট রাজ্যের বিধানসভার একজন নির্বাচিত সদস্যের ভোটসংখ্যা। কিন্তু দ্বিতীয় বার ভাগ করার পর যদি ভাগশেষ 500 বা তার বেশি হয় তাহলে ভাগফলের সঙ্গে 1 যোগ করে ভোট সংখ্যাটি নির্ণয় করা হবে।

দ্বিতীয় পর্যায়

নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্যায়ে সংসদের উভয় কক্ষের নির্বাচিত সদস্যদের যে ভোটসংখ্যা নির্ণয় করা হয় তার পদ্ধতি হল-সকল অঙ্গরাজ্যের বিধানসভাগুলির নির্বাচিত সদস্যরা সর্বমোট যত ভোট দেবেন, সংসদের দুটি কম্বের নির্বাচিত সদস্যদের ঠিক সমরূপ অর্থাৎ একই সংখ্যক ভোট থাকবে। তাই সমরূপ ভোট সংখ্যা আনার জন্য সংসদের দুটি কক্ষের নির্বাচিত মোট সদস্যসংখ্যা দিয়ে বিধানসভাগুলির সদস্যদের থেকে পাওয়া মোট ভোটসংখ্যাকে ভাগ করতে হবে। এক্ষেত্রে পাওয়া ভাগফলটি যা হবে, তা হবে সংসদে নির্বাচিত একজন প্রতিনিধির বা সদস্যের ভোটসংখ্যা। উল্লেখযোগ্য যে, প্রথম পর্যায়ের মতো এখানেও ভাজক সংখ্যা দিয়ে বিধানসভাগুলির সদস্যদের থেকে পাওয়া মোট ভোটসংখ্যাকে ভাগ করার পর ভাগশেষ যদি ভাজক সংখ্যার অর্ধেক থেকে যায় অথবা অর্ধেকের বেশি থাকে তাহলে ভাগফলের সঙ্গে অতিরিক্ত 1 যোগ করতে হবে কিন্তু ডাগশেষ ভাজক সংখ্যার অর্ধেকের কম হলে ভাগফলের সঙ্গে অতিরিক্ত । যোগ করতে হবে না। সংসদের প্রতিটি নির্বাচিত সদস্যের ভোট মূল্য = রাজ্য বিধানসভাগুলির সদস্যদের মোট ভোটসংখ্যা সংসদের উভয় কক্ষের নির্বাচিত সদস্যদের মোট সংখ্যা

তৃতীয় পর্যায়

তৃতীয় পর্যায়ে চলে ভোটগ্রহণের কাজ। ডোটগ্রহণের সময় সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের নিয়ম এবং গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের পদ্ধতিটি মেনে চলা হয়। সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের নিয়মানুসারে যতসংখাক প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী থাকেন তাদের প্রত্যেককে, প্রতিটি ভোটদাতা তাঁর নিজ পছন্দ (preference) জানাতে পারেন। ডোটদাতা এই পছন্দ জানাবেন ব্যালটে প্রতিদ্বন্দ্বীদের যে নামের তালিকা দেওয়া থাকে তার পাশে 1, 2, 3, 4 প্রভৃতি সংখ্যা লিখে। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য যে, ডোটদাতাকে প্রার্থীদের নামের পাশে ‘প্রথম পছন্দ’ জানাতেই হবে। প্রথম পছন্দটি না জানালে ওই ডোষ্টপন্ন বা ব্যালটটি অবৈধ বলে ধরা হবে এবং সেটি বাতিল করা হবে। ‘প্রথম পছন্দ’ জানানো ব্যালটকে বলা হয় বৈধ ভোট।

চতুর্থ পর্যায়

এই পর্যায়ে বৈধ ভোটগুলিকে গণনা করা হয়। অর্থাৎ প্রথম পছন্দ জানানো ভোটগুলি গণনা করা হয়। প্রথম পছন্দের বৈধ ভোটগুলিকে যোগ করে, যোগফলকে যদি 2 দিয়ে ভাগ করা হয় তাহলে যে ভাগফল পাওয়া যাবে তার সঙ্গে । যোগ করলে যে সংখ্যাটি পাওয়া যাবে তাকে বলা হয় কোষ্টা। অর্থাৎ, কোটা মোট বৈধ ভোটসংখ্যা 1। তিনিই রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত বলে ঘোষিত হবেন, যিনি এই ‘কোটা’ সংখাক 2 ভোট পাবেন।

পঞ্চম পর্যায়

এই পর্যায়ে দেখা হয় ‘কোটা’ সংখ্যক ভোট কে পেয়েছেন। এক্ষেত্রে প্রথম বারের গণনায় কোনো প্রার্থীই যদি কোটা সংখ্যক প্রথম পছন্দের ভোট লাড়ে বাথ হন তাহলে সবথেকে কমসংখ্যক প্রথম পছন্দের ভোট যিনি পেয়েছেন তিনি নির্বাচন থেকে বাতিল হয়ে যান এব। তাঁর ব্যালট পত্রগুলিকে দ্বিতীয় পছন্দ অনুসারে বাকি অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে হস্তান্তরিত করা হয়। এইভাবে হস্তান্তর চলতে থাকবে ততক্ষণ, যতক্ষণ পর্যন্ত কোটা সংখ্যক পছন্দপ্রাপ্ত প্রার্থী নির্বাচিত না হচ্ছেন। তবে উল্লেখযোগ্য যে, যদি দুই বা তার বেশি প্রার্থী সমানসংখাক ভোট পেয়ে সর্বনিম্ন স্থানে অবস্থান করেন, তাহলে সেক্ষেত্রে লটারির দ্বারা স্থির করা হয় মনোনীত ব্যক্তিকে।

মূল্যায়ন:

প্রথমত,

ভারতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে পরোক্ষ পদ্ধতি নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে অনেকে মন্তব্য করেছেন যে, ভারতের মতো জনবহুল ও বিশাল দেশে রাষ্ট্রপতির মতো একজন আনুষ্ঠানিক প্রধানকে নির্বাচিত করতে প্রত্যক্ষ ডোটের আশ্রয় নিলে বিপুল সংখ্যক অর্থ বায় হবে।

দ্বিতীয়ত,

ভারতের রাষ্ট্রপতি হলেন নিয়মতান্ত্রিক শাসক এবং প্রধানমন্ত্রী প্রকৃত শাসক। প্রকৃত ও নিয়মতান্ত্রিক উড়য় শাসকই যদি প্রত্যক্ষ ভোট দ্বারা নির্বাচিত হন তাহলে উভয় পদের মধ্যে বিরোধ অবশ্যম্ভাবী। তৃতীয়ত, কোনো কোনো সমালোচক রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতিকে ‘অতিমাত্রায় প্রাধান্য পেয়েছে, যার ফলে পদটির মর্যাদা কুয় হয়েছে।

bn_BDBengali
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading