ভারতের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নির্মাণের ধারা গুলি ব্যাখ্যা কর।

ভারতের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষায় বিএপিএস সংস্থার বিরাট এক অবদান রয়েছে।এটি একটি বিশ্বব্যাপি সামাজিক -আধ্যাত্মিক বেসরকারী সেবাসংস্থা।সারা পৃথিবীতে এই সংস্থার ৩৭০০টি কেন্দ্র এবং ১৫,৭০০টি সৎসঙ্গ পরিষদ,৮৫০জন সাধু,৫৫,০০০তরুণ স্বেচ্ছাসেবী ও ১০ লক্ষ ভক্ত রয়েছেন।১৯০৭ সালে স্থাপিত এই র্সস্থা বিভিন্ন প্রকার সমাজ -শিক্ষা- স্বাস্থ্য-পরিবেশ-সংস্কৃতি-অধ্যাত্ম এবং অন্যান্য মানব কল্যানমূলক কার্যকলাপের মাধ্যমে সমাজের সেবায় আত্মনিয়োগ করে থাকে।


ভারতীয় সংস্কৃতি ঐতিহ্যের অপূর্ব নিদর্শন এই অক্ষরধাম মন্দির।সমগ্র প্রাঙ্গনের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হল গোলাপী পাথর ও শ্বেতমর্মরে নির্মিত অক্ষরধাম মন্দিরের অনন্য বৈভব।১৪১ ফুট উঁচু ৩১৬ফুট চওড়া এবং ৩৫৬ ফুট দীর্ঘ এই মন্দিরে রয়েছে সুক্ষ্মকারুকির্যখচিত ২৩৪টি স্তম্ভ,৯টি জমকালো গম্বুজ,২০টি চূড়া ও ২০হাজারের বেশী অপরূপ ভাস্কর্য।কণামাত্র ইস্পাত ব্যবহার না করে নির্মিত এই মন্দিরভারতের প্রাচীন স্থাপত্যকীর্তির ঐতিহ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়।এই মন্দিরের  দশটি প্রবেশদ্বার রয়েছে।


ভারতীয় সংস্কৃতিতে বর্ণিত দশটি প্রধান দিকের স্মারক এই দশটি দ্বার চরাচর ব্রাপ্ত মঙ্গলময়ের বার্তাকে সকল দর্শনার্থীর অন্তরে সঞ্চারিত করে দেওয়ার বৈদিক আহ্বানের দ্যোতক।


ভক্তিদ্বার – ভক্তিদ্বির বৈদিক ঐতিহ্য অনুসারী দ্বৈত আরাধনার প্রতীক। ঈশ্বর ও তার প্রিয়তম ভক্তই হলেন আদর্শ উপাসনার আধার। প্রথানুসারে ঈশ্বর ও ভক্তের দ্বৈতরূপের ২০৮টি ভাস্কর্য শোভা পাচ্ছে অত্যুজ্বল এই দ্বারে।


ময়ূরদ্বার– ভারতের জাতীয় পাখি ময়ূর।সৌন্দর্য ও বিশুদ্ধতার প্রতীক।আমাদের জীবন  আনন্দময় ও বর্ণময় করে তোলে ময়ূর। দুটি ময়ূর দ্বার তরই প্রতীক।মোট ৮৬৯টি খোদাই করা ময়ূর প্রতিটি সুন্দর দ্বারকে অলঙ্কৃত করেছে।


পদচিহ্ন – ভগবান স্বামীনারায়নের মর্ত্যালোকে অবতীর্ণ হওয়ার স্মরণে দুটি ময়ূর দ্বারের মাঝে রয়েছে তাঁর পবিত্র পদচিহ্ন।শ্বেতপাথরে খচিত পদচিহ্ন ঈশ্বরের ১৬টি দিব্যচিহ্ন ধারণ করছে।তাঁর দিব্য জীবন ও কর্মের উদ্দেশ্যে ওই পদচিহ্নে অবিরাম জল সিঞ্চন করে চলেছে চারটি শঙ্খ।


মূর্তি – মন্দিরের কেন্দ্রসথলে ভগবান স্বামীনারায়নের ১১ফুট উঁচু স্বর্ণ প্রলেপালিপ্ত উপবিষ্ট প্রশান্ত মূর্তি।তাঁর দুপাশে রয়েছেন শ্রীরাধা-কৃষ্ণ,শ্রীসীতা-রাম,শ্রীলক্ষী-নারায়ণ এবং শ্রীপার্বতী-শিব।


ম্যান্ডোভার– মন্দিরের বাইরের দিকের অলঙ্কৃত প্রাচীর হল ম্যান্ডোভার।এটি ৬১১ফুট লম্বা আর ২৫ফুট উঁচু।৪২৮৭টি খোদাই করা পাথর দিয়ে তৈরী।এই প্রাচীরের গায়ে রয়েছে ৪৮টি গনেশমূর্তি।আর রয়েছে ভারতের বিভিন্ন মহর্ষি,সাধু,ভক্ত,আচার্য এবং অবতারগণের দুই শতাধিক ভাস্কর্য।


গজেন্দ্র পীঠ অক্ষরধাম মন্দিরটি দাড়িয়ে আছে ১০৭০ফুট লম্বা গজেন্দ্র পীঠ-এর উপর।এই গজেন্দ্রপীঠে রয়েছে ১৪৮টি পাথরে খোদাই হাতি,মানুষজন,পশুপাখির অসংখ্য পাথরমূর্তি যাদের মোট ওজন ৩,০০০টনের বেশী।ভারতীয় সংস্কৃতিকে হাতি ও প্রকৃতির গৌরবগাথার উদ্দেশ্যে এ-যেন এক অপরূপ শ্রদ্ধাঞ্জলি।


অহিংসা,সাহস,উদ্যোগ, সততা, বিশ্বাস প্রভৃতি সার্বজনীন মানবিক মূল্যবোধগুলি,রোবটসহ চলচ্চিত্র, আলো ও ধ্বনির সাহায্যে প্রদর্শিত হয়েছে ভগবান স্বামীনারায়নের জীবন অবলম্বনে।



১১বছর বয়সী বাল-যোগী নীলকন্ঠবর্ণীর জীবনের সত্য ঘটনা হুবহু তুলে ধরা হয়েছে বিশাল পর্দায়।পর্দার আকৃতি ৮৫ফুট×৬৫ফুট।ভারতের ১০৮টি জায়গায় ছবিটির শুটিং হয়েছে।অংশ নিয়েছেন ৪৫,০০০-এর বেশি মানুষ।


সংস্কৃতি বিহার নৌকাবিহার-


১৪মিনিটের নয়নাভিরাম নৌকাবিহার আপনাকে নিয়ে যাবে ১০,০০০বছরের প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতির সরণী বেয়ে,যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল সরস্বতী নদীর দুই তীর বরাবর। দেখতে পাবেন পৃথিবীর প্রাচীনতম বৈদিক গ্রাম এবং বাজার। নৌকাবিহার করবেন বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়- তক্ষশিলার ভিতর দিয়ে জানতে পারবেন ভারতের প্রাচীন ঋষি-বিজ্ঞানীদের আবিষ্কারও উদভাবনের কথা এবং সেই সঙ্গে আরও অনেক কিছু।


যজ্ঞপুরুষ কুন্ড এবং সঙ্গীতময় ফোয়ারা :


প্রাচীন ঐতিহ্যশালী’যজ্ঞপুরুষ কুন্ড’-এর আয়তন ৩০০ফুট×৩০০ফুট,ভারতে সর্ববৃহৎ।এর কেন্দ্রস্থলে রয়েছে একটি দর্শনীয়,বর্ণময় সঙ্গীতমুখর ফোয়ারা।যা থেকে সঙ্গীতের তালে তালে নির্গত হয় সৃষ্টি -স্থিতি-প্রলয়ের বৈদিক ভাবানুষঙ্গ।


নারায়ন সরোবর:


অক্ষরধাম(AKSHARDHAM) সৌধের তিনদিক ঘিরে রয়েছে নারায়ণ সরোবর। ভগবান স্বামীনারায়ণ ভ্রমন করেছেন ভারতের এমন ১৫১টি নদী,হ্রদ ও সরোবরের জল প্রতিনিয়ত নারায়ণ সরোবরে ঢালা হচ্ছে।মন্দিরের পাশের ও পিছনের দেওয়ালে নির্মিত ১০৮টি গোমুখ দিয়ে ওই জল নারায়ণ সরোবরে গিয়ে মিলিত হচ্ছে।

অভিষেক মন্ডপ:


বালযোগী নীলকন্ঠবর্ণীর দিব্য মূর্তি গঙ্গাজলে অভিষিক্ত করার সময় প্রার্থনা করা যায় এবং মনোবাসনা ব্যক্ত করা যায়।


 যোগীহৃদয় কমল:


সুন্দর করে ছাঁটা সবুজ ঘাসের উদ্যানে সযত্নে রক্ষিত আট পাপড়িবিশিষ্ট পদ্মাকৃতি এই সৃষ্টি যেন বাঙ্ময় হয়ে উঠে মুনি-ঋষি ও বিশ্বের মহৎ চিন্তাবিদদের প্রজ্ঞাবান বাণীর আলোকে,যে আলো ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসকে,মানুষের প্রতি বিশ্বাসকে জাগিয়ে তোলে।জড় জগতের জলস্পর্শহীন একটি পদ্মফুলের মতন এই পৃথিবীতে যোগীজি মহারাজের হৃদয় ছিল সুন্দর এবং শান্ত।তাঁর প্রার্থনা ছিল |

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

bn_BDBengali
Powered by TranslatePress

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading